Ameen Qudir

Published:
2018-04-06 20:22:37 BdST

অতিপরিবাহীর উপর এক অসামান্য সাফল্যের কাহিনী


 


আজিজুল শাহজী
_____________________________

আগের লেখায় সাধারন তাপমাত্রায় এই সুপারকন্ডাক্টর এখনি কাজ করার কথাটি ভুল ছিল, আমার এই আগের কথার ভুল এর জন্য আমি আন্তরিক লজ্জিত,পাঠক নিজ গুনে ক্ষমা করবেন!

একটু সাফাই গাইছি, এই সুপারকন্ডাক্টার এর সাথে কোয়ান্টাম বিদ্যার প্রবল যোগ আছে আর আছে ওটা সহজ ভাষায় বুঝানোর জন্য আমার অপারগতা।আগে আমার লেখা কোয়ান্টাম বিদ্যার একটি লেখা আমি সূত্র হিসেবে রাখলাম তবে বিষয়টা আমি নিজেও ভালো বুঝি না তো বুঝাবো কোন সাহসে?এই কারণে টেকনিকাল বিষয় অনেক দুরে রেখে উপর উপর আলোচনা করেছি।পাঠকের আশা ভঙ্গের জন্য আগেই মার্জনা চাইলাম।

যারা পরে এসেছেন তারা গ্রাফিন এর উপর কিছু পূর্ব আলাপ দেখে নিলে খুশি হবো এবং সঙ্গে একটু কোয়ান্টাম বিদ্যার উপর একটা অকিঞ্চিত্কর লেখা ও দেখলে আরো খুশি হবো।
সূত্র :
১. কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর উপর কিছু কথা https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=482784115448098&id=100011495404017
২. গ্রাফিন এর উপর লেখার সূত্র : https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=305756846484160&id=100011495404017
দু দিন আগে একদল বৈজ্ঞানিক যে সাফল্য পেয়েছেন ওটা এক যুগান্তকারী বস্তু বলেই মনে করি।করার করন আমরা পেয়েছি একক কোনো বস্তু যা আমাদের এই সুপারকন্ডাক্টার গুনাবলী দিতে পেরেছে।

গত কাল একটু রহস্য করতে এই বিষয়ে কিছু বলেছিলাম, আজ এর উপর বিস্তারিত লিখছি।প্রাথমিক পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্ন যদি করি পদার্থের ক’টি অবস্থা হয় তা হলে আমরা সবাই বলতে পারবো তিনটি— কঠিন, তরল এবং বাষ্প।আবার পদার্থবিদদের কাছে এর উত্তর চাইলে তারা অন্য ফ্যাকরা তুলবেন,বলবেন উচ্চ তাপে,অতিরিক্ত ঠান্ডায় বা অতি তীব্র চৌম্বকক্ষেত্রের কারণে পদার্থের নানান অবস্থা তৈরী হয়।এই রকম এক অবস্থা তৈরী হয় যার নাম সুপার কন্ডাক্টার।এই নানা বৈচিত্রের অবস্থা কে বাখ্যা করেছেন ডেভিড থৌলেস, ডানকান হ্যালডেন এবং মাইকেল কোস্টেরলিৎজ।এই জন্য তারা ২০১৬ তে নোবেল পুরস্কার ও পেয়েছেন।যাই হোক,আবার সেই সুপারকন্ডাক্টার এ ফিরে যাই।সাধারণত পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবহণের সময়ে বাধা বা রোধ তৈরি হয়। কিন্তু সেই পদার্থকে অতি শীতল অবস্থায় নিয়ে গেলে অনেক সময়ে সেই বাধা উধাও হয়ে যায়। তৈরি হয় সুপার কন্ডাক্টর। ১৯৩০-এর দশকে রাশিয়ার পদার্থবিদ পিওতর কাপিতসা হিলিয়াম গ্যাসকে অতি শীতল অবস্থায় নিয়ে গেলেন (-২৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। দেখলেন তা হামাগুড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। কারণ, ওই উষ্ণতায় সান্দ্রতা (ভিসকোসিটি) শূন্য হয়ে গিয়েছে। এই কাজ ১৯৭৮-এ কাপিতসাকে নোবেল এনে দেয়।

পদার্থের এই বেনিযম নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে নানা বিভ্রান্তি ছিল। তারা ভেবেছিলেন তাপমাত্রার এই তারতম্যের কারণে এই কারন । আর যদি কোনও শৃঙ্খলই না থাকে তা হলে অবস্থার পরিবর্তন (ফেজ ট্রানজিশন) কী করে বোঝা যাবে। ৭০ এর দশকে থৌলেস আর কোসটেরলিৎজ এর শুরু করেন আর এতে ব্যবহার করেন গণিতের ‘টোপোলজি’ শাখাটিকে।। এই শাখায় কোনও পদার্থের অবস্থার তখনই পরিবর্তন হয় যখন পদার্থে থাকা গর্তের সংখ্যা পরিবর্তন হয়। গর্তের সংখ্যা পরিবর্তন না হলে যে কোনও আকারে পদার্থটি একই অবস্থায় রয়েছে।
অতিশীতল অবস্থায় পদার্থের মধ্যে ছোট ছোট ভর্টিসেস তৈরি হয়। কিন্তু তাপমাত্রা বাড়লে এই ভর্টিসেসগুলি পরস্পরের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। একে পদার্থবিদ্যার ভাষায় বলে ‘ফেজ ট্রানজিশন’।৮০-র দশকে থৌলেস ও হ্যালডেন পদার্থের বিভিন্ন অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহণ নিয়ে কাজ শুরু করেন। এঁরা অতি শীতল অবস্থায় বা খুব শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে থাকা পদার্থের বিদ্যুৎ পরিবহণ নিয়ে নতুন তত্ত্বের হদিশ দিলেন। এর সঙ্গেই পদার্থবিদ্যার নতুন পথ খুলে গেল।
এই বিদ্যুত পরিবহনের কাজের থেকেই বিজ্ঞানীরা যা হলো এমন কিছু পদার্থ যার মধ্যে দিয়ে বিদ্যুত চালনা করলে অনন্তকাল ধরে সেই বিদ্যুত বইতে থাকবে। তার কোন লয় নেই, ক্ষয় নেই। এমনিতে আমাদের বাড়িতে যে কারেন্টের তারে করে বিদ্যুত এসে পৌছায়, সেই তারে আসতে আসতে বিদ্যুতের জান বেরিয়ে যায়। সেই তারগুলো যদি সুপার কন্ডাকটর হত, তাহলে চিন্তা করুন তো দেখি, কী মজাটাই না হতো। আমাদের দেশ কেন সারা পৃথিবী থেকে বিদ্যুতশক্তি উৎপাদনের খরচ দারুন ভাবে কমে যেত।

এই যেত বা হতে পারতো বলার বদলে এবার বলব হবে! হ্যা ,ওটা হতে বিজ্ঞানীদের প্রায় ৩০ বছরের উপর অপেক্ষা করতে হয়েছে।তার আগে একটু বলে রাখি,এই সুপারকন্ডাক্টার কি করে, অনেক কিছুই করে তার মধ্যে দু একটা যা আমাদের বিস্ময়ের কারন হয়েছে তা হলো :
১.কোনো মাটি থেকে তরিত্চুম্বক এর মাধ্যমে ভেসে থাকা অতি গতির ট্রেন তৈরিতে ওটা লাগে
২. টেলিকমিউনিকেশন এর এবং মহাকাশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যোগাযোগের জন্য যন্ত্রাদির জন্য লাগে
৩. আজকালকার আলোচ্য কোয়ান্টাম কম্পিউটার যা একটি যে কোনো সুপার কম্পিউটার এর সাথ পাল্লা দিতে পারে তার জন্য
৪. চিকিত্সা বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয় যন্ত্র এমআরআই এর তৈরির জন্য
৫. বহুল আলোচিত সার্ন গবেষনাগারে যে হেড্রন কোলাইডার আছে তার ওই তরিত্চুম্ব্কের বলয় এর জন্য ওটা জরুরি

তা হলে আবার এতে এত খুশির কি আছে ?
আছে, কারন ওই উপরে বলা সুপারকন্ডাক্টার এর জন্য দরকার হয় কিছু নির্দিষ্ট পরিবাহী বস্তুর আরো দরকার হয় পরম শুন্য মানে -১৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার কাছে ওই বস্তুটিকে নিয়ে।এর জন্য খরচ আর এর বহুল ব্যবহার অনেক কঠিন কাজ।এই ক্ষেত্রে সব কাজের কাজী হয়ে এগিয়ে এসেছে গ্রাফিন।

কি ভাবে ?
এমআইটির পাবলো জেরিল্লো এবং তার সঙ্গীরা আর জাপানের একই ধরনের একটি দল এই পরীক্ষা করছিলেন,অপরিবাহী মানে সাধারন ভাবে তরীত অপরিবাহী হিসেবে পরিচিত এই গ্রাফিন এর উপর নিরীক্ষা করার মাধ্যমে। মট ইনসুলেটর বা মট সাহেবের নির্ণিত এক ধরনের অপরিবাহীর এক রহস্যর খবর বিজ্ঞান আগেই পেয়েছিল,কিছু ধাতুর সাথে অক্সিজেন যুক্ত করে এক অপরিবাহী পদার্থ পাওয়া যায় যার আবার ওই পরম শুন্যের কাছে গেলে ধর্ম হয়ে যায় অতিপরিবাহী বা সুপারকন্ডাক্টার এর।ওই বস্তুটির অভ্যন্তরীণ ইলেকট্রন এর যাওয়ার উপর কোনো বাধা থাকে না।

একই কাজ হয় কি না তার নিরীক্ষা করছিলেন তারা, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা আগেই বলেছিল এই বস্তুটির কৌনিক পরিবর্তন এর মাধ্যমে কিছু পরিবর্তন দেখা যেতে পারে,তবে কি ওটা সঠিক ভাবা যাচ্ছিল না।এক্ষেত্রে ওই উপরের গবেষনার সময় জারিল্লো দুটি দ্বিমাত্রিক গ্রাফিন এর স্তর কে একটি অপরটির সাথে ১.১ ডিগ্রীর ফারাকে রেখে তার মধ্যে স্বল্প তরীত প্রবাহ চালিয়ে পেলেন এর সুপারকন্ডাক্টার হওয়ার গুনাবলী।বিদ্যুত কোনো অপচয় ছাড়া প্রবাহিত করতে থাকলো,মজার হলো এর সাথে কোনো অন্য কিছুর মিশ্রন এর দরকার হলো না।আগের লেখা থেকে দেখলে জানতে পারবেন,এই বিস্ময় পদার্থ গ্রাফিন আজকাল অনেক সহজলভ্য মানে আমরা সয়াবিন তেলের অবশিষ্ঠ থেকেই পেতে পারি।

সাধারন তাপমাত্রায় কি ওই কাজ করা সম্ভব হয়েছে ?
না, হয় নি তবে বর্তমান ক্ষেত্রে এই তাপমাত্রার থেকে বেশি খুশির হলো এই বস্তুটি অনেক সরল,আপনি কপার অক্সাইড থেকে তৈরী মট ইনসুলেটর এর ক্ষেত্রে অক্সিজেন কি ভাবে ইলেকট্রন এর জায়গা করে দেয় ওটার কারন না জানলেও ওটা হয় তা জানার কাজ করেছে বিজ্ঞানী তবে কোয়ান্টাম বিদ্যায় যে জায়গায় আমরা পিছিয়ে আছি তা হলো কেন হয় ওটা জানতে পারছি না,এই গ্রাফিন হয়তো আমাদের এই সুযোগ করে দেবে।

কি ভাবে ওই সুপারকন্ডাক্টার তৈরী হয়ে যাচ্ছে এই গ্রাফিন ?
উপরে বলা ১.১ ডিগ্রির দুটি গ্রাফিন স্তরের একটা অবস্থান (এর এদিক ওদিক হলেই ওটা হয়ে যায় অপরিবাহী!) একটা প্রসারণ তৈরী করছে গ্রাফিনের পরমানুর ভিতরে।এতে যে পরিবর্তন হচ্ছে ওটা বুঝাতে একটি ছোট ইউটিউব প্রামান্য দিচ্ছি একটু দেখে নিলে ফারাক বুঝতে পারবেন।অনেকটা ওই কৌনিক অবস্থান বদল আর সুইচ অফ অন এর মতো পদার্থ মানে গ্রাফিনের ধর্মের পরিবর্তন!এর সুপারকন্ডাক্টার হওয়ার গুনাবলী অতীব স্বল্প হলেও ওই কপার যৌগের থেকে বেশি।

এত খুশির কি আছে তা হলে ?

আছে,ওই কিউরেট ধাচের যৌগের উপর সুপার কন্ডাক্টার হওয়ার কারন খুঁজে বেড়াতে যতো জটিলতার দরকার হচ্ছে তার দরকার হচ্ছে না এর ক্ষেত্রে,তাপমাত্রা হয়তো কমাতে হচ্ছে কিন্তু একটু কৌনিক পার্থক্য করেই ওই গুনাবলি পেয়ে যাওয়ার ফলে ওই কারন খোজার কাজ অনেক সহজ হয়ে গেল।

আমরা যারা কোয়ান্টাম ফিজিক্স নিয়ে আগ্রহী তারা জানি, ওই বিদ্যার একটা মজার জিনিস আছে,মহাত্মা ভানু বন্দোপাধ্যায় এর মতো বললে বলতে হয় “ ক্যান হয় জানি না তয় হইলে কি হয় ঐটা জানি “ , আজ হয়তো আমরা ওই কেন হয় ওটা জানতে চলেছি।

পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ !

তথ্যসূত্র :
১. https://www.youtube.com/watch…
২. https://www.nature.com/articles/d41586-018-02773-w…
৩. https://news.mit.edu/…/graphene-insulator-superconductor-0305
৪. https://gizmodo.com/magic-twist-in-stacked-graphene-reveals…
৫. https://www.popularmechanics.com/…/a19159744/graphene-supe…/
6. এই ইউটিউব এর প্রথম কয়েক সেকেন্ড দেখলেই পারমানবিক নকশার মধ্যে ফারাক দেখতে পাবেন ওই কৌনিক পরিবর্তন এর কারনে https://www.youtube.com/watch?v=xVWhj_vxoGw
______________________________

আজিজুল শাহজী। কলকাতা নিবাসী লেখক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়