Ameen Qudir

Published:
2018-04-01 17:16:32 BdST

আসালানের খুনী ধর্ষকামী ড্রাইভারকে যে কঠিন পরিনামের মুখোমুখি করেছিল তুর্কী নারীরা



 
ডা. জাহিদুর রহমান
____________________________

তুরস্কে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসলান (Ozgecan Aslan) নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী খুন হওয়ার পর প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সে দেশের নারীরা (https://goo.gl/UD6zi9)। রাস্তায় আসলানের ছবি নিয়ে নেমে আসে হাজার হাজার তুর্কি নারী। ফেসবুক, টুইটার ভরে যায় #ozgecan_aslan হ্যাশ ট্যাগে। রাতে বাসে চড়ে বাড়ি ফেরার পথে আসলানকে কৌশলে নির্জন স্থানে নিয়ে যায় বাসের ড্রাইভার সুফি (Suphi Altindoken)। ধর্ষনে ব্যর্থ হয়ে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আসলানকে। এরপর খুনি সুফি তার বাবা আর চাচাতো ভাইকে সাথে নিয়ে আইনের হাত থেকে বাঁচতে পুড়িয়ে ফেলে আসলানের লাশ। পুলিশ পরেরদিন সেই পোড়া লাশসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে খুনীকে। জেরার মুখে সব কিছু স্বীকার করে সে। দ্রুততার সাথে বিচার শেষে তিনজনকেই আজীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়, যা তুরস্কের সর্বোচ্চ শাস্তি।

আসলানের খুনি সুফির পরিনামটা ছিল ভয়াবহ। জেলে থাকা অবস্থায় প্রায়ই অন্য কয়েদিদের হাতে মার খেত সে। পরের বছর এপ্রিল মাসে অন্য কয়েদিদের হাতে খুন হয় সুফি! তার বাবাকেও মেরে আধমরা করা হয়। সুফি আর আসলান, দুজনের বাড়িই ছিল তুরস্কের মারসিন প্রদেশে। সেখানকার মানুষ সুফির মায়ের শত অনুরোধের পরেও তার লাশ দাফন করতে দেয়নি। পুলিশ শেষ পর্যন্ত অন্য প্রদেশে দাফন করে সেই নৃশংস খুনির লাশ।

তুরস্ক আর বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা কাছাকাছি। আধুনিকতার রঙ্গিন চাদরে মোড়া পঁচে যাওয়া এক অদ্ভুত, অন্ধকার সমাজ। প্রতি ৫ জন তুর্কি নারীর ১ জন প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হয়, যার অর্ধেকেরও বেশি ঘটনা ঘটে স্বামী, বাবা বা ভাইয়ের হাতে। আসলানের সাথে ঘটে যাওয়া মধ্যযুগীয় বর্বরতায় তুরস্কের মত এরকম প্রতিক্রিয়াশীল দেশের নারীরাও বাধ্য হয়েছিল মুখ খুলতে। আসলানের লাশ ছুঁতে দেয়নি আর কোন পুরুষকে।মোল্লাদের তীব্র প্রতিবাদ উপেক্ষা করে তারা প্রকাশ্যে আসলানের জানাজায় অংশ নেয়, নিজেরাই কফিন কাঁধে করে কবরস্তানে নিয়ে যেয়ে দাফন করে।

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যেমন ধর্ষন হচ্ছে, নারীদের পক্ষ থেকে তেমনি প্রতিবাদও হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের নারীরা জাগবে কবে? তারা যতদিন না একসাথে রাজপথে নামবে, ততদিন এদেশে কোন ধর্ষকের উপযুক্ত বিচার হবে না। কিন্তু লজ্জাজনক হলেও সত্য ৫২, ৭১, ৯০ এ সারা বিশ্ব বাঙ্গালি নারীর সেই প্রতিবাদী মুখ দেখেছে, ইদানিং তা আর দেখা যায় না। দেশের তুলনামুলকভাবে শিক্ষিত, স্বচ্ছল, সচেতন নারীরা ভারতীয় সিরিয়াল, হিজাব, মেকআপ, আর মুখ সরু করা সেলফিতে ডুবে আছে। নারীবাদ কেবল কিছু বিদেশি এনজিওর সাইনবোর্ড হয়ে গিয়েছে। অনলাইনে কিছু নারী প্রতিবাদ করলেও বাস্তবে তাদের উপস্থিতি একেবারেই নগন্য। শাহবাগ থেকে টিএসসি, প্রতিবাদ আজকাল কোনভাবেই এরচে বড় হচ্ছে না। ধর্ষন নারীর উপরে চাপিয়ে দেয়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সবচে বড় অপরাধ। আজকে একজন ধর্ষকের উপযুক্ত বিচার হোক, কাল থেকেই ধর্ষনের সংখ্যা কমবে। আর এর জন্য যে কোন ধর্ষনের পর নারীদের সম্মিলিত প্রতিবাদের কোন বিকল্প নাই।
____________________________

ডা. জাহিদুর রহমান । ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়