Ameen Qudir

Published:
2018-03-25 16:53:34 BdST

একে তো বয়স বেশী: তার উপর এটা ছয় নম্বর বাচ্চা: শরীরে কুলাচ্ছে না:তবু পুত্র চাই


 


ডা. কামরুন নাহার তুহিন
_____________________________

কোহিনূর ৩৮ বছর বয়সে আমার কাছে এসেছে মাসিক বন্ধের ইতিহাস নিয়ে, মাত্র দেড়মাস, আমি বললাম এ বয়সে বাচ্চা নিবেন? কোহিনূর বলল, আপা স্বামীর ইচ্ছা একটা ছেলের জন্য !
বললাম ছেলে যদি না হয় তাহলে? কোহিনুর এর দীর্ঘ শ্বাস আল্লাহ পাকের মর্জি।
আল্লাহ্ তোমার মনের আশা পুরন করুক একথা বলার পর সে চলে গেল এবং নিয়মিত চেকআপে আসতে বললাম।

কোহিনুর এর গর্ভ কালীন ইতিহাস হলো তার আগের তিনটি মেয়ে আছে, মাঝে দুটো বাচ্চা এবোরশান হয়ে গেছে, আমি চিকিৎসা দিয়ে বাচাতে পারিনি, তিনমাসে বাচ্চা গুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে, এর পর মাঝে অনেক দিন পার হয়ে গেছে, স্বামী সহ বাড়ীর সবাই বলে একটা ছেলে না হলে কিভাবে ? বংশেরবাতি বাতি জ্বালাবে কে ? নানাজনের নানা কথায় সে আবার ও এপথে পা বাড়িয়েছে। সে আমার কাছে প্রায়ই আসে চেক আপের জন্য।

সাতমাসে এলো আল্ট্রাসনো করে বোঝা গেলো ছেলে বাচ্চা হবে, কোহিনুর তো মহাখুশী যা হোক তার মনের আশা পূরন হচ্ছে ! এদিকে রোগী র শরীর ভারী হয়ে যাচ্ছে একে তো বয়স বেশী তার উপর এটা তার ছয় নম্বর বাচ্চা সব মিলিয়ে শরীরে কুলাচ্ছে না, তাই সে আর আমার কাছে চেক আপে আসছেনা, চলাফেরায় কষ্ট হচ্ছে, তার আগের বাচ্চা গুলো নরমালে ডেলিভারী হয়েছে বাড়ীতে । এখন সে অপেক্ষা করছে ব্যাথা উঠলে বাড়িতে ডেলিভারি হবে। ডেলিভারি ডেট পার হয়ে গেছে বাচ্চা নড়াচড়া কম, তাই সে নিজে গিয়ে আলট্রাসনো করালো, সনোলজিষ্ট বললো বাচ্চা ভালো, তাই সে ব্যাথা উঠার অপেক্ষায় আছে কিন্তু হঠাত করে বাচ্চার নড়াচড়া বন্ধ আগের দিন বিকাল থেকে,সে এলো পরদিন বিকালে আমার চেম্বার এ। পরীক্ষা করে দেখা গেলো বাচ্চা আইইউডি এবং সাথে ডায়াবেটিস। এখন দুঃসংবাদ তাদেরকে কিভাবে দিবো?

যাহোক রোগীর লোকজন কে বললাম আপনাদের দুঃসংবাদ বাচ্চা পেটে মারা গিয়েছে এবং বাচ্চা অনেক বড়, সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারী করতে হবে, রোগীর লোক যথারীতি রাজী হয়ে গেলো কিন্তু কোহিনুর কে কিছুই জানানো হয়নি।
মায়ের মনের খবর, সে কিন্তু বুজতে পেরেছিল তার অঘটন ঘটেছে, ওটিতে সে অঝোর ধারায় চোখের পানি ফেলেছে কোন কথা বলেনি, মৃত বাচ্চা টাকে দেখে সে কপালে একটা চুমু খেলো।
এত কষ্ট করেও কোহিনুর সন্তানের জীবিত মুখটি দেখতে পেলোনা নিতান্ত অবহেলার কারনে,তার স্বামীর বংশেরবাতি বাতি জ্বালানোর কেউ রইলোনা ;একবুক কষ্ট নিয়ে কোহিনুর কে বেচে থাকতে হবে। তাকে কি শান্তনা দিবো ? একটাই ভাষা আছে তুমি তো ভালো আছো,বেচে আছো, মেয়ে গুলো তো তোমার
আচলের ছায়ায় থাকবে।
___________________________

ডা. কামরুন নাহার তুহিন
কনসালটেন্ট (গাইনী)

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়