Ameen Qudir

Published:
2018-03-24 16:33:23 BdST

সেদিন রাতে শেষ দেখা দিতে তুমি ক্যাম্পাসে এসেছিলে: এমন কি কথা ছিল পিয়াস!




স্বর্নেন্দু সাহা
________________

পিয়াস , তুমি কথা রাখলে না। এমন করে হুট করে চলে যাবে, কোন ইশারাও দাও নি। কাউকে কিছু বলে যাও নি। এমন তো কথা ছিল না। এখন আমরা তোমার শূণ্যস্থান কেমন করে পূরণ করব। কেমন করে তোমার পিতামাতাকে শান্তনা দেব। মাসিমার অবিশ্রাম অশ্রু কেমন করে থামাবো।
সেদিন রাতে শেষ দেখা দিতে তুমি শেষ বারের মত ক্যাম্পাসে এসেছিলে। কোন কথা বললে না। নীরব নিথর নিস্পন্দ হয়ে পড়েছিলে। কেন এমন করলে। তোমার মত প্রানবন্ত, সপ্রাণ বন্ধু আর কি আমরা কাউকে পেয়েছি। পাইনি।
অামাদের মধ্যে থেকে আমাদের প্রাণপাখি উড়ে চলে গেল অচিন ত্রিভূবনে।
পিয়াস রায়,
অশ্রুসিক্ত নয়নে চিরবিদায় জানালাম তোমাকে। আমাদের প্রিয় গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসে। শিক্ষক, সহপাঠি ও শিক্ষার্থীরা সবাই ছিলাম। এভাবে সবাইকে কান্না করিয়ে তোমার মত সদাহাস্য , সদাসুখী , দুর্দান্ত মেধাবী কেমন করে চলে যায়। এখন কার কাছে থেকে জটিল বিষয় বুঝে নেব।
তুমি কি জানো পিয়াস , আজ তোমার শহর বরিশালেও কান্নার ঢেউ। এখন বরিশাল শহরের কোন ভাল মানুষের মন ভাল নেই। সবাই শোকার্ত। তোমার বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায়ের পাশে সবাই গভীর শোকে মোহ্যমান। সবাই জানতো তাদের পিয়াস ডাক্তার হতে চলেছে। পুরো বরিশাল গোপালগঞ্জ থেকে রোগ ব্যাধি পালাবে। পিয়াস তার অনাবিল হাসি, অকৃত্রিম মানব প্রেম , অনন্য ভালবাসা দিয়ে সকলের রোগ শোক হরণ করবে।
পিয়াস, তুমি কথা রাখলে না। এভাবে চলে গেলে সর্বানন্দ আনন্দলোকে।
____________
পূর্বলেখ :
বরিশালের সন্তান পিয়াস রায় এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষা শেষে নেপাল গিয়েছিলেন ঘুরতে।

বৃহস্পতিবার (২২মার্চ) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় অ্যাম্বুলেন্সে করে পিয়াসের লাশ আনা হয় তার চিরচেনা গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসে। এক নজর দেখার জন্য আগে থেকে অপেক্ষায় ছিলেন শিক্ষক, সহপাঠি ও শিক্ষার্থীরা। সবাই তার জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। সকলের বড় প্রিয়জন ছিল পিয়াস।
কফিন দেখে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তারা। লাশবাহী গাড়িতে পিয়াসের বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায় ছিলেন। তিনিও অশ্রুসজল নয়নে গাড়ি থেকে নেমে আসেন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তিনি শোকে মোহ্যমান। তাকে শান্তনার ভাষা কারও জানা ছিল না।
কিছুক্ষণের জন্য কফিন নামানো হয় ক্যাম্পাসে। কলেজের পক্ষে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সহযোগী অধ্যাপক চিকিৎসক সুভাষ চন্দ্র ভাদুরী। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় এ সময়।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ১ মিনিট নিরবতা পালন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানিকতা শেষে রাত ১টায় পিয়াসের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিধ্বস্ত হলে পিয়াস রায়সহ অসংখ্য বাংলাদেশ, নেপাল ও চীনা নাগরিক মারা যান।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়