Ameen Qudir
Published:2018-02-05 17:59:18 BdST
পূর্বাচলে ১৪২ তলার আইকন টাওয়ারে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে অদম্য প্রবাসী ডাক্তার
ডা. সুমন চৌধুরী
____________________________
ঠিক যেন রজনীকান্ত অভিনীত সেই মহামুভি শিবাজি । মানুষের জন্য হাসপাতাল করতে চান প্রবাসী রজনী কান্ত। কিন্তু রাজনীতির লাল ফিতের দৌরাত্মে কিছুতেই পারছেন না। রুপালী ফিতেতে শেষ পর্যন্ত রজনীকান্ত জয়ী হলেও বাস্তবের রজনীকান্ত ডা. কালীপ্রদীপ চৌধুরী চৌধুরী এখনও অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন নি। তিনিও ফিল্মের রজনীকান্তের মত অদম্য । তাই ১০ হাজার কোটি টাকার মহাপ্রকল্প নিয়ে এখনো ঢাকা নিউইয়র্ক করে ফিরছেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ধর্ণা দিয়ে চলেছেন।
এ পর্যন্ত ৪৪ বার দেশে এসেছেন এই মহাবিত্তশালী প্রবাসী চিকিৎসক। ১০ হাজার কোটি টাকা তিনি পূর্বাচলে বিশ্বের গৌরব ১৪২ তলা বিশিষ্ট আইকন টাওয়ার নির্মাণে ব্যায় করতে প্রস্তুত। আইকন টাওয়ারের
সর্বশেষ টেন্ডারে কেপিসি ও দুর্বল শিকদার গ্রুপ ছাড়া কেউ অংশ নেয়ার সাহস করে নি।
কালীপ্রদীপ চৌধুরী। বাংলাদেশের সিলেটের সন্তান। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণের দত্তরাইলে জন্ম তাঁর। পড়ালেখা করেছেন সিলেটের এমসি কলেজে। তারপর কলকাতা থেকে এমবিবিএস পাস করে মালোয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক ডিগ্রি অর্জন করে শুরু করেন ব্যবসা। যুক্তরাষ্ট্রে নিজ নামে তৈরি করেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কালীপ্রদীপ চৌধুরী (কেপিসি) গ্রুপ। তাঁর এই গ্রুপ বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের একটি। কালীপ্রদীপের নতুন করে আলোচনায় আসার কারণ বাংলাদেশে ১৪২ তলা বিশিষ্ট প্রস্তাবিত আইকন টাওয়ার নির্মাণ। মাতৃভূমি বাংলাদেশকে উচ্চ বিলাসী স্বপ্ন দেখাতেই তিনি সরকারকে আকাশচুম্বি এই ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করেন বলে জানা যায়।
এছাড়া নিজ জন্মস্থান ঢাকা দক্ষিণে একটি বেসরকারি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করার ইচ্ছা তাঁর।
জানা যায়, ২০১৫র সেপ্টেম্বরে কেপিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান কালীপ্রদীপ চৌধুরী ভবনটি নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে কেপিসি গ্রুপের পক্ষে অর্থমন্ত্রী ১০০ একর জায়গার ওপর মূল ভবনসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাগুলো নির্মাণের জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় নভেম্বর মাসে ঢাকার অদূরে পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে সিবিডি অংশে ওই জায়গা দিতে রাজি হয়। সম্প্রতি এই টাওয়ার নির্মাণে চুক্তির জন্য বাংলাদেশে অবস্থান করছেন এই ধনকুবের।
জানা যায়, ওই টাওয়ারে আন্তর্জাতিক কনভেনশন, এক্সিবিশন সেন্টারসহ হোটেল, থিয়েটার ও শপিং মল থাকবে। টাওয়ার ঘিরে তৈরি হবে আরও কয়েকটি ছোট-বড় ভবন এবং নান্দনিক স্থাপনা। কনভেনশন সেন্টারের মূল মিলনায়তনে পাঁচ হাজার লোকের বসার ব্যবস্থা থাকবে। স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মূল স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা হবে ৫০ হাজার।
উচ্চতার দিক দিয়ে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনটি হচ্ছে দুবাইয়ের ১৬৫ তলার বুর্জ আল খলিফা। পূর্বাচলের আইকনিক টাওয়ার নির্মিত হলে তা হবে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) দুই হাজার ফুটের বেশি উচ্চতার এই ভবন ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মাণের কাজ শুরুর আশা করছে সরকার।
এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “পিপিপির আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। আমাদের সিলেটের ছেলে বিশ্বখ্যাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেপিসি গ্রুপ গড়ে তুলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি বড় বড় ভবন নির্মাণ করে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
“বাংলাদেশে কিছু করার জন্যই তিনি আমার কাছে এই প্রকল্পের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরা তার এই সদিচ্ছাকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চাই।”
জানা যায়, ১৪২তলা এই টাওয়ারের নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে এই ভবনের দিকে তাকালে মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে পড়বে। এটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে দুই পাশ থেকেই ’৭১ লেখা ফুটে উঠবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেপিসি গ্রুপের অধিনে সারা বিশ্বে তৈরি হয়েছে অনেক স্থাপনা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ২০০৩ সালে গড়ে তোলেন প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল। ২০১০ সালে বিখ্যাত স্পেনিশ গ্রুপ ফেরারের সাথে স্পেনের বার্সোলোনায় গড়ে তোলেন কেপিসি-ফেরার ইন্সটিটিউট ফর ইনফেক্টিউয়াস ও ট্রপিক্যাল ডিজিজ।
২০০৫ সাল থেকে তাঁর কোম্পানি স্থাপত্যের বাইরে তথ্য প্রযুক্তি খাতেও যুক্ত হয়। বিশ্ব বাজারে স্ট্রাকচারাল অটোমেটেড স্টিল সুবিধা দিতে তৈরি ক্রএ ডোকোম্যাক্স সেবা।
পরিশ্রম আর নিজ যোগ্যতায় ড. কালি প্রদীপ চৌধুরী এখন বিশ্বের সেরা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের একজন। বিশ্বের প্রায় ৮টি দেশ রয়েছে তাঁর ২৫ ধরণের ব্যবসা। ক্যালিফোর্নিয়ায় আছে সাড়ে ৩কি.মি. আয়তনের বিশাল বাড়ি। ভারতে আছে ১৬টি চা-বাগান, যার মধ্যে আছে ৫০০০০ একরের আয়তন বিশিষ্ট চা বাগান। ইউক্রেনে আছে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে আছে ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট ২৬টি বিশ্বমানের মেডিকেল কলেজ।
এর বাইরে আছে বিশ্বের মোড়লদের সাথে সখ্য। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক প্রেসিডেন্ট রিগ্যান, জর্জ বুশ, সিনিয়র বুশ, হিলারি ক্লিনটন এরা তার নিয়মিত ডিনার সঙ্গী। তাঁর সম্মানে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫ কি.মি দীর্ঘ সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।
আপনার মতামত দিন: