Ameen Qudir
Published:2018-02-05 16:14:45 BdST
এই মহামানবের জন্য পৃথিবীব্যাপী সর্বগ্রাসী ক্ষুধা বা দুর্ভিক্ষ থেকে মানুষ রক্ষা পেয়েছে
আজিজুল শাহজী
_________________________
আমরা প্রায় সকলেই সবুজ বিপ্লব মানে খাদ্যের উৎপাদনের উপর ভারত অথবা অন্য দেশের সাফল্যের কাহিনী শুনি। আমাদের পাঠ্যবই এ এই মহামানব এর নাম পাই না। যা কিছু পাই তা কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তির কৃতিত্বের কথা বা গাঁথা। অথচ যার কারণে এই শত শত কোটি মানুষ প্রাণে বেঁচেছে,হ্যা ঠিকই শুনেছেন,সংখ্যাটা অনেক শত, সেই মানুষটির জীবনী বা কাজের উপর কিছু বলে না আমাদের স্কুল কলেজের বইগুলোতে। এই দৈন্যতা উপমহাদেশের সর্বত্র কোথাও কিছু কম কোথাও কিছু বেশি। আসুন,আজ জানি কি ভাবে এই মানুষটির কাজের জন্য পৃথিবীব্যাপী এক সর্বগ্রাসী ক্ষুধা বা দুর্ভিক্ষের সমূহ অবস্থা থেকে মানুষ পরিত্রান পেয়েছে। হ্যা,উনি একজন কৃষি বিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞানের সাহায্যেই আমাদের সমাধান দিয়েছেন।কোনো মন্ত্র বা ওহীর মাধ্যমে না !
এই মানুষটির উপর বলার আগে একটা কথা বলতে চাই,কয়েকদিন আগে হার্ভার্ড এর একটি প্লাস্টিক এর বিকল্প নিয়ে জানতে গিয়ে তাদের পরীক্ষাগার এর ওয়েব এ অসাধারন একটি স্লোগান যার বাংলা করলে অনেকটা এই রকম হয় : " কোনো গবেষণার ফলাফল কাজের হয় না যদি না তা বাইরের পৃথিবীর জন্য প্রয়োগগত সুফল এনে দেয়। " ,একদম খাঁটি কথা, কাগজের ডিগ্রিধারী দিয়ে এই প্রথম বিশ্ব চলে না তাই তারা ফলিত বিজ্ঞানের বা প্রযুক্তির সাফল্য এনে নিজেদের উন্নতি করেছে। যাইহোক ,অনেক তাত্বিক মানুষের উষ্মা বাড়িয়ে কাজ নেই আসুন এই মহামানবের উপর কিছু জানি।
নরমান বর্লাগ এর শিকড় ছিল নরওয়ের তবে অজস্র ভাগ্যন্নেষী মানুষের মতোই তার পূর্বপুরুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী হন। তার জন্ম ২৫শে মার্চ , ১৯১৪ সালে। আইওয়া তে অতীব দারিদ্রের সাথে সংঘর্ষ করে হয়তো তার ক্ষুধার বিষয়টি সম্যক জেনেছিলেন। ১৯৪২ এ মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে ডক্টরেট করেন উদ্ভিদ নিদানশাস্ত্র ( plant pathology,এর বাংলা করতে ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী ) বিদ্যার উপর। আমার মতো অর্ধশিক্ষিতের ভাষায় উদ্ভিদবিদ।যাইহোক এর পর তিনি রকফেলার ফাউন্ডেশন এর সাথে যুক্ত হয়ে যান মেক্সিকোতে। এইখানে থাকতে তিনি সৃষ্টি করেন গমের একটি শংকর প্রজাতি যার জিনগত বৈচিত্র দিয়ে প্রচলিত গমের ছত্রাক জনিত কারণে রোগের উপর প্রতিরোধ এবং উচ্চ ফলনের নতুন ধরণের গম তৈরী করেন।
এই কাজ কিন্তু হঠাৎ করে হয় নি। নরমান,১৯৫৩ সালে তার উদ্ভাবনী শক্তি আর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা দিয়ে নির্ধারণ করেন জাপানের গমের গাছে থাকা বামনত্বের বৈশিষ্টের জীন নরিন ১০ কে প্রচলিত গমের সাথে মিশ্রণ করলে এক অভূতপূর্ব ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। আগের সাধারণ গম গাছ হতো অনেক লম্বা,এই নতুন প্রজাতি আধা বামন অথচ সেচ এবং সারের মাধ্যমে দিলো অনেক বেশি ফলন।
তৎকালীন সাধারণ গমের সমস্যা ছিল অতি উর্ব্বর কোনো জমিতেও এর চাষ করলে যদি ফসল বেশি হতো তাতে গম গাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়তো। আর তা ছাড়া বিশেষ কিছু আবহওয়াগত জায়গা ছাড়া এর ফসল ফলানোর সম্ভাবনা ও ছিল না। বোঝার উপর শাকের আটি ছিল গমের ছত্রাক বা অন্যান্য রোগ ফলে চাষির বা কোনো দেশের ফলন ছিল অতীব কম বিশেষত এই উপমহাদেশে ভারত বা পাকিস্তান (অবিভক্ত ) যে পর্যায়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে চলছিল তাতে তৎকালীন বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞদের মতে ১৯৮০ র মধ্যেই দুর্ভিক্ষ ইত্যাদিতে আমাদের সবার জন্য অশেষ প্রাণহানি আর দুর্ভোগ এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছিল। অনেক প্রবীণ মানুষের হয়তো মনে থাকবে ,খাদ্যাভাব ইত্যাদি কি পরিমানে অসহায় অবস্থা তৈরী করেছিল অথচ মনে রাখবেন আমাদের মানে ভারতের জনসংখ্যা ছিল ৪০ থেকে ৬০ কোটির মধ্যে আর তৎকালীন গোটা পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল ১০ কোটির থেকে ১২ কোটির মধ্যে। আজকের পুরো জনসংখ্যা আর খাদ্যের চাহিদা এবার ভাবুন তাহলেই বুঝবেন এই মানুষটি কি অসামান্য কাজ করেছিলেন।
যাই হোক,নরমান তার কাজের জন্য খুব সুনির্দিষ্ট পন্থা নিলেন। প্রথম,দ্বিতীয় ,তৃতীয় এই ভাবে কয়েক প্রজন্মের (অপত্য জনু ) এই উচ্চফলনশীল হাইব্রিড গম চাষ করলেন দুই ধরণের পরিবেশের মধ্যে। একটি হলো অতি ঠান্ডার অঞ্চলের গরম কালের ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে আর উষ্ণ অঞ্চলে শীতকালীন ফসল ফলানোর পরিবেশে। এই আধা বামুন গম গুলোর নাম ছিল মেক্সিকান যেমন Sonora 63, Sonora 64, Lerma Rojo 64 এবং Mayo 64। এই গমের প্রজাতিগুলো অভাবনীয় ফলাফল নিয়ে এলো, ষাটের দশকে তিনি সফল হলেন প্রতি হেক্টরে ৫ থেকে ৬ টন ফসল উৎপাদন করতে।মনে রাখবেন,সেই সময়ে এই মাপের উৎপাদন আর বিশেষ করে উষ্ণ অঞ্চলে গম চাষ করাই ছিল অকল্পনীয়।
এই যুগান্তকারী কাজ পুরো মেক্সিকোর গম উৎপাদনের উপর আনলো বৈপ্লাবিক পরিবর্তন। একই ভাবে ক্ষুধার মুখ ব্যাদান করে থাকা এই উপমহাদেশের ছবিটাই পাল্টে দিল পরবর্তীতে।১৯৬৬ তে ,নরম্যান এর সহায়তায় ভারত সরকার মেক্সিকোতে থেকে আমদানি করে ১৮ হাজার টন Lerma Rojo 64-A এবং এই ধরণের আরো কিছু উচ্চফলনশীল হাইব্রিড গমের বীজ। ফলাফল ? ১৯৬৫তে ১২ মিলিয়ন টন গম উৎপাদন থেকে ওটা ১৯৬৮ তে হয়ে যায় ১৭ মিলিয়ন টন ! একই ভাবে কাজ শুরু হয় বামন প্রজাতির চীনা Dee-gee-woo-gen নামের ধানের জীন কে ইন্ডিকা বীজের ধানের সাথে সংমিশ্রণ। সেই সময়ের ফিলিপাইনস এর আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রে একই ধরণের সাফল্য আসে এই সংমিশ্রনে। এই সবুজ বিপ্লব শুধু উৎপাদন বাড়িয়েছে তাই না,একই সঙ্গে ভূসম্পত্তির ব্যবহার ও কমিয়েছে। একটি উদাহরণ দিচ্ছি,২০০৯ এ ভার ৮০ মিলিয়ন টন গম উৎপাদন করেছে ২৬ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে। সবুজ বিপ্লবের আগে এই একই গম উৎপাদন করতে লাগতো ৮০ মিলিয়ন হেক্টর জমি। অর্থাৎ, হেক্টর প্রতি এক টন উৎপাদন হয়েছে প্রায় চারগুন ! কি বুঝলেন ?
নরম্যান যিনি এই সবুজ বিপ্লবের জনক বলে বিজ্ঞানী মহলে পরিচিত ছিলেন একাই একটি প্রতিষ্ঠানের মতো। আজীবন তার সাধনা ছিল মানুষের ক্ষুধা মুক্তির কাজ। একক চেষ্টায় মেক্সিকোকে করে ফেলেন গম উদ্বৃত্ত একটি দেশ যারা রপ্তানি শুরু করে গমের। একই সাথে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা যতই তাদের ঢাক বাজাক ,আমাদের ভারত বা পাকিস্তানের খাদ্য উৎপাদন আর সবুজ বিপ্লব হতোই না যদি তার প্রত্যক্ষ সাহায্য না থাকতো। জীবনের অমূল্য ৩০ বছর তিনি ব্যয় করেছেন এই ক্ষুধামুক্তির জন্য। হাস্যকর শুনতে লাগতে পারে,এই মানুষটিকে নোবেল দেওয়া হয় শান্তির,১৯৭০ সালে কারন তার এই পেশাগত বা মেধাগত বিদ্যার উপর নোবেল পুরস্কারের কোনো সংস্থান নেই ! প্রথমে তাকে যখন এই খবর দেওয়া হয় ,তিনি তখন মেক্সিকোতে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তার স্ত্রী বলেন নিশ্চই কেউ তার সাথে মজা করেছে।যশবিমুখ এবং প্রচার বিমুখ মানুষটি খবর পেয়েও তার কাজ চালিয়েছেন সেই দিন ,তার বক্তব্য ছিল ,হাতের কাজ শেষ করে পরে এর উপভোগ করা উচিত। এই না হলে সাধক !
এক্ষেত্রে হয়তো অপ্রাসঙ্গিক হবে না যদি বলে রাখি ,মানুষটি কেবল গমের উপর কাজ করেন নি , পরবর্তীতে ভুট্টা থেকে যব এবং শালগম আর অন্য শস্যের উপর একই ভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি আর উচ্চফলনশীল বীজের সৃষ্টির জন্য অক্লান্ত চেষ্টা করেছেন। সফলতা ও পেয়েছেন সেই ভাবেই। আমাদের এই উপমহাদেশের ক্ষুধার রাক্ষস এর নিবৃত্তির পরেই তার দ্বিতীয় কর্মযজ্ঞ হয়েছিল আফ্রিকা। অনেকেই হয়তো মনে রেখেছি ইথিওপিয়া বা অন্য দেশে আশির দশক থেকে দুর্ভিক্ষ আর অনাহার কি ভাবে মানুষের নিধন করা শুরু করেছিল। আমরা ভুলে যাই এই দানব ওই দিকেও কিন্তু প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে হার মেনেছে মানুষের বিজ্ঞানের প্রয়োগের কাছে। এর জন্যও এই মানুষটির কাজ দায়ী।
নরম্যান Consultative Group on International Agricultural Researches International Maize and Wheat Improvement Center (CIMMYT).এর প্রধান হিসেবে ১৩ বছর কাজ করার পর সরে আসেন আরো মানব কল্যাণের কাজের জন্য। তিনি তৈরী করেন ওয়ার্ল্ড কালচারাল কাউন্সিল। এর মুখ্য কাজ হয়ে উঠলো সাংস্কৃতিক গুণাবলী , মানবতা আর মানুষের কল্যাণের কাজের প্রসার করা। বনাঞ্চল ধ্বংস রোধ করতে নিয়ে আসেন কৃষি জমির উৎপাদন বৃদ্ধির তত্বকে যা আজো কৃষিবিদদের কাছে 'বর্লাগ তত্ব ' বলেই সুপরিচিত।
উপরে যেমন বলেছি , আশির দশকে আফ্রিকাতে তৈরী হয় ৬০ এর দশকে এই ভারতীয় উপমহাদেশের দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি। বার্লগ এর আগের কাজের কারণে তার স্মরনাপন্ন হয় জাপানের নিপ্পন ফাউন্ডেশন ,তাকে আমন্ত্রণ জানায় এই মহাবিপর্যয় থেকে পরিত্রান পেতে। তিনি এবার কাজ করেন একটু অন্য ভাবে , ওই মহাদেশের উপযোগী ফসল জোয়ার এবং বরবটির উপর তার কাজ করেন। এর সাথে অবশ্যই গমের উপর ও তার কাজ করেন। ফলাফল ? একমাত্র মানুষের নিজের তৈরী কুকীর্তির কারন ছাড়া আজ আফ্রিকাতে কিন্তু সেই দুর্ভিক্ষর কথা শুনতে পান না। অনেকেই সোমালিয়া বা সুদান এর উদাহরণ দেবেন তবে একটু খবর নেবেন,ওটা আমাদের রাজনৈতিক আর ধর্মের কারণে তৈরী ফলাফল।
নরম্যান বার্লগ কে সম্মানিত করেছে অজস্র প্রতিষ্ঠান। তার নোবেল পুরস্কার ছাড়া তিনি পেয়েছেন,মার্কিন কংগ্রেসের স্বর্ণ পদক। পেয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এর বিশেষ পদক , মার্কিন জাতীয় স্বাস্থ এবং বিজ্ঞান পদক। সর্বপরি তাকে ভারত সরকার পদ্ম বিভূষণ (ভারতের দ্বিতীয় সর্বচ্চ বেসামরিক সাম্মানিক ) দিয়ে হয়তো কিছুটা হলেও স্বীকৃতি দিয়েছেন আমাদের সবার কৃতজ্ঞতার। তার কাজ কে ক্যান্সার এর প্রতিরোধের থেকেও অনেক বড় বলে অবিহিত করেছিলেন টেক্সাসের এ & এম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র ক্যাথলিন ফিলিপ্স। কোনো অতিশয়োক্তি বলে মনে করি না।
জীবনের শুরুতে লোভনীয় বহুজাতিক রাসায়নিক এবং জৈব প্রযুক্তির কোম্পানি দ্যু পো র চাকরি প্রত্যাখ্যান করে অনলস কাজ করেছেন মেক্সিকোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এক্ষত্রে তার সহধর্মিনী মার্গারেট ও তাকে করেছেন অসামান্য সহায়তা না হলে হয়তো তিনি এতো সাফল্য পেতেন না। ৭০ এর দশকে তার পূর্বপুরুষের দেশ নরওয়েতে নোবেল প্রাপ্তির সময়ে ভাষণ দেওয়ার সময় ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন,জনসংখ্যা কে নিয়ন্ত্রণ না করলে মানুষের কপালে আরো অনেক দুর্ভোগ আসবে। তার কথার আক্ষরিক অর্থে সত্যতা আমরা দেখেছি আশির দশকে। অবশ্য তাকেই এর মোকাবিলা করতে হয়েছে। একজন মানুষের হাতে এতো কোটি মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজ বোধহয় আর কোথাও আমরা দেখি নি।
মেক্সিকোর প্রখর রোদে ,বন্যার প্রকোপে ভুখা নাঙ্গা মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে মাইল এর পর মাইলে অক্লান্ত কাজ করেছেন তিনি। তার জীবনীকার লেনার্ড বিকেল এর কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অসামান্য একটি কথা বলেন " যখন এই গম ফলেছিল ,দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে এই ফসল ভরা গাছগুলো হওয়াতে যেন কানে এনে দিচ্ছিল সংগীতের মূর্ছনা " , একজন প্রকৃত কৃষিজীবী না হতে পারলে এই ভাবনা হয় কি ?
প্রাসঙ্গিক একটা কথা বলে রাখি , ভারতে গমের বীজ পাঠানোর জন্য তাকে অসম্ভব বাধা পেরোতে হয়। আমলা বা রাজনৈতিক বাধা তাকে এই কাজ করতে অনেক সময় নষ্ট করিয়ে দিয়েছিল। এক পর্যায়ে যখন আর দুর্ভিক্ষ এড়ানো যাচ্ছিল না তখন নিমরাজি ভাবেই তাকে অনুমতি দেওয়া হয়। বিভিন্ন তথ্য থেকে দেখতে পাই ,অসামান্য সাফল্য এক পর্যায়ে আমাদের পাঞ্জাব আর অন্য অঞ্চলে গম রাখার জায়গা দিতে পারছিল না। স্থানীয় স্কুল গুলোতে এই গম রাখতে হয়েছিল। পাঠক, মনে করুন সেই পথের পাঁচালি বা বর্তমান বিভিন্ন আলোকপ্রাপ্ত বিপ্লবীর কাজগুলোকে। একই মিল পাবেন। ভালো কাজে বাধা দেওয়ার লোকের অভাব নেই আমাদের দেশে।
তার সমালোচক প্রতিপদে বিদ্ধ করেছে এই হাইব্রিড এবং জিনগত বৈচিত্রের প্রচলনের জন্য। অবিচল নরম্যান বারেবারে বলেছেন ,জনসংখ্যা না নিয়ন্ত্রণ করলে মূল সমস্যার সমাধান হবে না কিন্তু ভালো কথা শোনে কে ? আগে যেমন বলেছি , এই মহামানব কিন্তু একক প্রয়াস চালিয়ে গিয়েছেন যাতে নতুন প্রজন্মের কৃষিবিদ বা কৃষিবিজ্ঞান কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মানুষ যেন উৎসাহিত হয় এই বিদ্যা রপ্ত করতে। এই বিজ্ঞানের শাখাকে যেন নোবেল পুরস্কারের জন্য যোগ্য করা হয়। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি , মনসান্টো বা অন্য বহুজাতিক কোম্পানির কোনো বীজের সাফাই গাইতে এই লেখা না। যে কোনো বিদ্যার কিছু কুফল থাকবে আর থাকবে মানুষের সীমাহীন লোভের কুফল। অনেকেই এই মানুষটিকে কর্পোরেট বা ক্ষুদ্র কৃষকের জন্য দুর্ভোগের কারন বলে থাকেন,মজার কথা হলো তাদের ঝুলিতে কোনো সমাধান নেই। তাদের দরকার দারিদ্র বিক্রির উপাদান। মানুষ অভুক্ত না থাকলে যে অনেকের দোকান উঠে যাবে।
এই বিস্তারিত লেখার মাধ্যমে নরম্যান বার্লগ এর জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া ছাড়া আরো একটি নিবেদন করি, ইতিহাসের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে কারন। দয়া করে ছাপার হরফে প্রাতিষ্ঠানিক কথাগুলো একটু মিলিয়ে নেবেন। পারলে আমার লেখা কে ও প্রশ্নবিদ্ধ করুন তাতে আমি খুশিই হবো। নির্দ্বিধায় সব কিছু এক ধার থেকে মেনে নেবেন না। বর্তমান প্রযুক্তি আমাদের এনে দিয়েছে ইন্টারনেট এবং জানার অনেক উপায় তাই প্রশ্ন করুন নিজেকে এবং যা দেখেন বা শোনেন তাকে।
শেষ করছি আমার প্রিয় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর একটি কবিতার কিছু অংশ লিখে,বহুব্যবহার করেও আমার কাছে তা একটু ও ক্লিশে হয় নি :
''বরং দ্বিমত হও,আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
বরং বিক্ষত হও প্রশ্নের পাথরে।
বরং বুদ্ধির নখে শান দাও,প্রতিবাদ করো।
অন্তত আর যাই করো, সমস্ত কথায়
অনায়াসে সম্মতি দিও না।
কেননা, সমস্ত কথা যারা অনায়াসে মেনে নেয়,
তারা আর কিছুই করে না,
তারা আত্নবিনাশের পথ
পরিস্কার করে।''
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ ধৈর্য ধরে এই লেখা পড়ার জন্য ......
___________________________
লেখক আজিজুল শাহজী । থাকেন কলকাতায়। মানবতার সপক্ষে অক্লান্ত লিখে চলেছেন।
_________________
তথ্যসূত্র :
১. ১৯৭০ এর নোবেল পুরস্কার এর সূত্র,হায় রে মানুষ শুধু শান্তির জন্য এই পুরস্কার !
https://www.nobelprize.org/…/peace/laureates/1970/index.html
২. তার সমন্ধে আরো জানুন এইখানে https://en.wikipedia.org/wiki/Norman_Borlaug
৩. নরম্যান এর ৯৫ বছর বয়েসে প্রয়ান হয় ২০০৯ সালে, টাইমস অফ ইন্ডিয়া যথার্থ বলেছিল,ভারতের ‘অন্নদাতা’,এর থেকে সত্য আর কিছু হয় না
https://timesofindia.indiatimes.com/…/articlesh…/5006489.cms
৪. https://www.agbioworld.org/biotech-in…/…/borlaug/special.html
৫. পদ্মবিভূষণ উপাধি দিয়ে সম্মান করার তথ্যসূত্র,পেয়েছেন অনেক দেরিতে ২০০৬ এ,হায় রে আমলাতান্ত্রিক লালফিতের ফাস ! https://www.worldfoodprize.org/…/dr_norman_e_borlaug_honore…
৬. আফ্রিকাতে তার একই লড়াই এর উপর জানুন এইখানে https://www.worldfoodprize.org/…/africas_norman_borlaug_upl…
৭. আফ্রিকার নাইজেরিয়ার আকেনুমি এদেসিনা যিনি নরম্যান এর পথে চলে আজ আফ্রিকার দুর্ভিক্ষকে মোকাবিলা করেছেন তার উপর কিছু কথা-লড়াই এর পথে আজ অনেকেই তার সাথে
https://allianceforscience.cornell.edu/…/honoring-africas-n…
৮. নরম্যান বর্লগ এর উপর একটি সুখশ্রাব্য রচনা
https://www.theatlantic.com/…/forgotten-benefactor-…/306101/
আপনার মতামত দিন: