Ameen Qudir

Published:
2018-02-04 20:26:44 BdST

বইমেলায় প্রতিবন্ধী পাঠকের জন্য মানবিক উদ্যোগ


 

 

ডাক্তার প্রতিদিন ডেস্ক
_______________________

অনন্য ও অসাধারণ এই মানবিক উদ্যোগ। বাংলা একাডেমী অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রতিবন্ধী পাঠকদের জন্য হুইল চেয়ার সরবরাহ করছে একটি লোকসেবী প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানটির নাম সিএসএফ গ্লোবাল। এর কর্নধার লোকসেবী বিশিষ্ট চিকিৎসক, প্রফেসর এম. এ. মুহিত।
মেলায় সিএসএফ গ্লোবালের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ডা. মানিক চন্দ্র দাস। তিনি এক বিবৃতিতে জানাচ্ছেন এই সেবার বিস্তারিত।



পশ্চিমা বিশ্বে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিশেষায়িত স্কুল থেকে শুরু করে অক্ষম মানুষদের জন্য আলাদা পার্কিং স্পেইস, বাসে ট্রেনে আলাদা সীট বরাদ্দ থাকে। মানুষগুলোও অনেক সহানুভূতিশীল। রাস্তায় অক্ষম মানুষগুলোকে যথেষ্ট সন্মানের সাথেই নানা ভাবে সাহাজ্য করে। তারা থাকে সমাজের মূল স্রোতের সাথে।

সেই তুলনায় আমাদের সমাজ রয়ে গেছে প্রস্তর যুগে। প্রতিবন্ধী বান্ধব নয়। কোথাও তাদের সুবিধার জন্যে আলাদা কিছু করা হয়না। বাসে সীট বরাদ্দ থাকলেও তাতে লোকজন দিব্যি বসে থাকে। কেউ রাস্তায় আলাদা করে সাহাজ্য করা দূরে থাক, বাঁকা কথাটা বলতেও ছাড়েনা। সমাজের বৈরী এই চেহারার কারনে প্রতিবন্ধী শিশুদের বাবা মায়েরাও শিশুদের বাইরে আনতে অনিচ্ছুক হয়ে পড়েন। সমাজের মূলস্রোত বিচ্ছিন্ন এই শিশুগুলো হয়ে যায় বদ্ধ কুঠুরির বাসিন্দা। আলোর আশায় জন্ম নেয়া শিশুরা হয়ে পড়ে অন্ধকারের সন্তান।

একুশে বইমেলা আমাদের আত্মার মেলা। রাশি রাশি বই, হালকা রোদ আর ধূলোর মাঝে মেলায় আমরা আমাদের আত্মাকে খুঁজে বেড়াই। এই বিশাল প্রাণের মেলায় প্রতিবন্ধীরা যথারীতি অচ্ছুৎ। তাদের কথা আলাদা করে ভাবার কেউ নেই।

No automatic alt text available.

 

গত দুই বছর ধরে মেলায় সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন শারিরীক ভাবে অক্ষম মানুষদের জন্যে হুইলচেয়ার রাখার ব্যবস্থা করেছে। এবছর আমরাও তাঁদের এই মহতী উদ্যোগের সাথে আছি। আমরা, সিএসএফ গ্লোবাল শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্যে রেখেছি ০৮ টি বিশেষায়িত হুইলচেয়ার। প্রতিটির সাথে থাকছেন ভলান্টিয়ার ও।

★চেয়ারগুলো থাকবে মেলার দুই প্রান্ত, টিএসসি এবং দোয়েল চত্বর প্রান্তে। থাকবে মেলার প্রতিদিন দুপুর ৩ টা থেকে রাত ৮ টা, ছুটির দিনে সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত।

★গোটা কর্মকান্ডটি সেবামূলক, কোথাও কোন বিনিময়মূল্যের প্রয়োজন নেই।

 

Image may contain: 1 person, text

ডা. মানিক চন্দ্র দাস

 

 

ডা. মানিক চন্দ্র দাস বিবৃতিতে আরও জানান,

গ্রন্থমেলায় শিশুরা বাবা মায়ের সাথে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বিভিন্ন স্টলে গিয়ে বই দেখছে, বই হাতে নিয়ে খুব দ্রুত দুই এক পাতা পড়ে ফেলছে, পড়ার পর আবার বাবা বা মা কে সেই বই কিনে দেবার জন্যে ঠাসঠাস করে যুক্তি দিয়ে বলছে, এই দৃশ্যগুলো খুবই সুন্দর। দেখতে ভালো লাগে। দেখলেই মনে হয়, বাহ্, দারুন তো!

আসলে এরকমই প্রতিটা শিশুর ক্ষেত্রে হওয়া উচিৎ। শিশুরা বড় হবে সুস্থ সুন্দর পরিবেশে, শোবার সময়টাতেও হাতে একটা গল্পের বই থাকবে, রুমের চারপাশে বই থাকবে ছড়ানো ছিটানো, দৃশ্যটা আশাব্যঞ্জক। সুস্থ শিশুদের ক্ষেত্রে এরকম একটা দৃশ্য বাস্তবে ঘটার সম্ভাবনা থাকলেও সেরেব্রাল পালসিতে আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে এরকম একটা দৃশ্য চিন্তা করা খুব কঠিন।

আমাদের সমাজ এধরনের শিশুদের জন্যে খুব একটা বান্ধব ধরনের না। এই বিশেষ শিশুদের আলাদা কোন ব্যবস্থা কোথাও ঠিকভাবে করা হয়না। আশপাশের লোকজন নানাভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্থ শিশুটির বাবা মাকে হেয় করার চেষ্টা করে, কখনো কখনো শিশুটিকেও খুব বিশ্রী আক্রমণের শিকার হতে হয়। এসকল কারনেই শিশুটির বাবা মা শিশুটিকে একেবারে অন্তঃপুরে নিয়ে রাখেন। শারিরীক অক্ষমতাকে জয় করার জন্যে যে শিশুটির প্রয়োজন ছিলো সমাজের মূলস্রোতের সাথে বেশি বেশি মেশা, তাকেই হয়ে যেতে হয় অন্ধকারের মানুষ।

Image may contain: 3 people, outdoor

 

একুশে গ্রন্থমেলার মতো একটি জায়গা হতে পারে সেরেব্রাল পালসিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্যে সমাজের মূলস্রোতে আসার একটি প্ল্যাটফর্ম। এজন্যে সমাজের সকলের পাশাপাশি সবার আগে শিশুদের বাবা মায়েদের এগিয়ে আসতে হবে।

গত দুই বছর ধরে একুশে গ্রন্থমেলায় সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন শারিরীকভাবে অক্ষম মানুষদের মেলায় পরিভ্রমণের জন্যে হুইলচেয়ার ও স্বেচ্ছাসেবক রাখা শুরু করেছে। এবছর ২০১৮ এর গ্রন্থমেলায় আমরা সিএসএফ গ্লোবাল তাঁদের এই মহতী উদ্যোগের সাথে আছি। আমরা মেলায় সেরেব্রাল পালসি ও অন্যান্য পক্ষাঘাতে আক্রান্ত শিশুদের জন্যে রেখেছি ৮ টি বিশেষ হুইলচেয়ার। সাথে আছেন সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকেরা।

গোটা কার্যক্রমটি শুরু হয়েছে ২রা ফেব্রুয়ারী। কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন একাডেমি পরিচালক ড. জালাল আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন সিএসএফ গ্লোবালের সাধারন সম্পাদক আবু ঈসা মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন এবং সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সাধারন সম্পাদক মইনুল ফয়সল।

সেবামূলক এই কার্যক্রমটি চলবে পুরো মেলার মাস জুড়ে এবং কোনরকম বিনিময় মূল্য ছাড়া।

আমরা চাই, আমাদের আত্মার মেলা হোক সবার জন্য উন্মুক্ত এবং সুগম্য।

একুশের গ্রন্থমেলায় আমন্ত্রণ ।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়