Ameen Qudir

Published:
2018-02-02 15:58:01 BdST

৫২০০০ কোটি টাকার ভারতীয় স্বাস্থ্য বাজেট নিয়ে একজন চিকিৎসকের ময়নাতদন্ত


 



ডা. রেজাউল করীম ,
কলামিস্ট ও চিন্তক ,
কলকাতা

___________________________

 

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বাজেটে সরকারী বরাদ্দ ৫২০০০ কোটি টাকা-গত বছরের ৪৭০০০ কোটি টাকা থেকে সামান্য বেশী। জিডিপির সাপেক্ষে গত বছরের বাজেট ছিল ০.৩২%, এ বছরে তা দাঁডিয়েছে ০.২৯%। মোদিকেয়ার বলে মিডিয়া যাকে প্রচার করছে তাও নতুন কিছু নয়।

 

গত বাজেটে এই হার ছিল পরিবার পিছু এক লক্ষ টাকা, এ বছর বলা হচ্ছে ৫ লক্ষ টাকা। এত সব কিছু থাকা সত্ত্বেও গত বছর চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে ৬ কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। সরকার যদি ভাবেন যে সবার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার বীমা করিয়ে দিলেই কেল্লা ফতে, তাহলে ভুল ভাবছেন। RSBY প্রকল্পে এই খাতে যে সামান্য টাকা ব্যয় হয়েছিল সে থেকেই পরিষ্কার হয়েছে যে বেসরকারী ইন্সুরেন্স ও হাসপাতাল কিভাবে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। ঐ প্রকল্পের টাকা আত্মসাত করার নানা ফন্দিফিকির ছিল কিন্তু সবচেয়ে ন্যক্করজনক হল মিথ্যা ভর্তি দেখিয়ে টাকা আত্মসাত ও বিনা কারনে জরায়ু ও পিত্তথলির অপারেশন। বস্তুতপক্ষে, গরীব অসুস্থ মানুষকে শিখণ্ডী করে সরকারী টাকা হাতবদল হয়ে পুঁজিপতিদের কাছে পাঠানোর আপাত বৈধ রাস্তা হল বেসরকারী ইন্সুরেন্স। এ দেশে চিকিৎসা ব্যয়ের শতকরা ৭০-৮০ শতাংশ রোগীর নিজের পকেট থেকে খরচ হয়।। এর একটা ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ যদি ডাইরেক্ট ট্যাক্সের মাধ্যমে তোলা হয়, তাহলে সবাইকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। সরকারী কমিশনের পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

 

একই কথা খাটে চিকিৎসক ও শয্যা সংখ্যা নিয়ে। এ দেশে প্রতি প্রায় দুহাজার জনসংখ্যার জন্য একজন চিকিৎসক ও প্রতি লাখে মাত্র ৭০ টি শয্যা আছে। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য যে পরিকাঠামো দরকার তা আমাদের নেই। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন বিল পাশ হলে বেসরকারী পুঁজি চিকিৎসকদের সংখ্যা নির্ধারন করবে। তারা মেডিক্যাল কলেজ বানাবে ও ইচ্ছামত ফি নির্ধারন করবে। গরীব ও মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়েদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন কোনদিনই পূর্ন হবে না ও মেধার যে অবনমন হবে তা দেশে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। সরকার যে ২৪ টি মেডিকেল কলেজ করবে বলেছে সেখানেও গরীব ছেলেমেয়েরা পড়তে পারবে কিনা তা বলা কঠিন। দেখা যাচ্ছে উচ্চমূল্যের কোচিং সেন্টারের ছেলেমেয়েরাই এসব পরীক্ষায় তুলনামূলক ভাবে ভাল ফল করছে।


শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর কোন দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা এই বাজেটে নেই। প্রাথমিক চিকিৎসার হাল এ দেশে অত্যন্ত খারাপ। টীকাকরনের হার ৮৫%। যে পনেরটি রোগে অল্পবয়সীরা ভোগে তার পয়লা নম্বরে রয়েছে রক্তাল্পতা। কম ওজনের শিশু ও একটি বড় সমস্যা। অথচ, শিশু সুরক্ষা ও রক্তাল্পতা রোধ করতে যে সামাজিক সুরক্ষা বাডাতে হবে বাজেটে তার কোন দিশা নেই। RBSK যোজনায় বরাদ্দ গত বছরেই কম ছিল। এ বছরেও তেমন কোন আশার বাণী নেই। স্বাস্থ্য সেস বসানো হয়েছে কিন্তু অতীতে সেসের টাকা যে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় হয় না তা শ্রীনাথ রেড্ডি কমিশন উল্লেখ করেছে। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কোন কারন নেই। গেট ফাউন্ডেশন একটি সমীক্ষা করে জানিয়েছে যে দেশে মোট ৪.৮ কোটি বাচ্চা আছে যারা অপুষ্টি জনিত সমস্যায় ভুগছে। এই বাজেটে তাদের জন্য কোন আশার বাণী নেই।

 

 

_______________________

ডা. রেজাউল করীম

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়