Ameen Qudir

Published:
2018-02-01 17:15:30 BdST

মসৃন দামি চাল কিনে ক্যান্সার কিনছেন না তো !


ডা. সুরাইয়া ইসলাম ___________________________ গনমাধ্যমে নিয়মিত দেখবেন প্রচারণা : "মিনিকেট চালের ভাত খেলে ক্যানসার হতে পারে ! সতর্ক হোন - জনস্বার্থে শেয়ার করুন ।" ইদানিং টিভি ও ইনটারনেটেও চলছে প্রচার :মসৃন দামি চাল কিনে ক্যান্সার কিনছেন না তো ! প্রশ্ন হল , আসলেই কি দামি চাল খেতে গিয়ে জটিল রোগব্যাধি খাচ্ছি !! এ নিয়ে প্রথম কথা হল, মিনিকেট নামে কোনো ধান নেই, অথচ চালে বাজার সয়লাব। মোটা চাল ইচ্ছেমতো ছাঁটাই আর পালিশ করে মিনিকেট নামে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। আমরা কিছু প্রত্যক্ষদর্শী তৃণমূল গনমাধ্যমকর্মীর বক্তব্য জানি আসুন। সোহাগ মিয়া তার রাইস মিল অভিজ্ঞতা থেকে জানাচ্ছেন, " আমি নিজে দেখেছি আমাদের সাতগাঁও বাজারে একটি অটোরাইসমিল আছে সেখানে দেখলাম সরনা ৫ ধান মিলিং হচ্ছে । প্রথমে সাদা এরপর কি রঙ মারে তা ক্রিম কালার হয় আর ভাতের গ্যারান্টি হয় । ভাত গলে না। নস্ট হয়না । ফরমালিনযুক্ত রাসায়নিক মারে সব চালে । এতে করে বয়স্ক লোকের কি আর হবে এদের লাইফ সেস পর্যায়ে কিন্ত এখন যারা ছোট থেকে বড় হবে তাদের জীবন ধংস অনিবার্য। শুধু মিনিকেট না এককথায় যতসব স্টার বাছাই চাল, চকচকে চাল, পিছলা চাল ধবধবে সাদা এগুলোই বিষাক্ত চাল । এতে সার ও রাসায়নিক মারা হয়।অটোমেটিক মেশিনে যে চাল বানানো হয় বাসমতি মিনিকেট; এগুলোতে সার ও রাসায়নিক মারা যাতে ভাত ঝরঝরা হয় নষ্ট না হয় এটাই ক্ষতি করে।" আরেক তৃনমূল গনমাধ্যম কর্মী মজহারুল ইসলাম বলেন, মিনিকেট ধান আছে , তবে চাষীরা ব্যাণিজ্যিক হিসাবে চাষ করে না , কারণ ফলনকম , অনেকে নিজেদের চাহিদা মিটানোর জন্য চাষ করে থাকে । রাইস মিলের মেকানিক সাব্বির দাবি করেন, মোটা চাউল ছাট অথবা পালিশ করে তত সরু করা যায়না । বেশী ছাটলে ভিটামিন চলে যায় সত্য। উত্তরের শস্যভান্ডার দিনাজপুরে মিনিকেট চালের নামে চলছে প্রতারণা। একশ্রেণির চালকল মালিক ভোক্তাদের বোকা বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মোটা চাল সরু করে তা মিনিকেট নামে চালিয়ে যাচ্ছে। কাটিং, পলিশ ও কালার ঠিক রাখার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন কেমিক্যাল। বিশেষজ্ঞরা পরিস্কার করেই বলছেন, এতে চালের পুষ্টিগুণ যেমন কমে যায়, তেমনি তা মানবদেহে ক্যান্সারসহ নানা রোগবালাইয়ের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। মিনিকেটের জাত নেই, কিংবা যে চাল চাষ হয় না বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা, সেই মিনিকেটের নামকরণ কীভাবে হলো? ‘১৯৯৫ সালের দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের কৃষকদের মাঝে সে দেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট নতুন জাতের চিকন ‘শতাব্দী’ ধানবীজ বিতরণ করে। মাঠপর্যায়ে চাষের জন্য কৃষকদের এ ধানবীজের সঙ্গে আরো কিছু কৃষি উপকরণসহ একটি মিনি প্যাকেট দেয়া হয়। ওই প্যাকেটটাকে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বলত ‘মিনি কিটস’ বলে। সেখান থেকেই ‘শতাব্দী’ ধানের নাম হয়ে যায় ‘মিনিকেট’। আবার অনেকে বলেন, ‘মিনি প্যাকেটে করে দেয়ায় ভারতীয় কৃষকদের কাছে এ ধান শেষমেশ মিনিকিট বলে পরিচিতি লাভ করে। কৃষকরা মিনি প্যাকেট শব্দটির মধ্য থেকে ‘প্যা’ মাত্রাবদ্ধ অক্ষরটি বাদ দিয়ে সেটি মিনিকেট বলে পরিচয় দিতে শুরু করে।’ তবে নামের পেছনে ঘটনা যা-ই থাক, মিনিকেট নামে কোনো চালের জাত নেই এটাই বাস্তবতা। মোটা চালকে পলিশ করে মিনিকেট চাল বলে বিক্রি করা হচ্ছে দেশের বাজারে। মিনিকেট চাল বানানোর যান্ত্রিক প্রক্রিয়া ____________________ অটোরাইস মিলে রয়েছে একটি অতি বেগুনি রশ্মির ডিজিটাল সেন্সর প্ল্যান্ট। এর মধ্য দিয়ে যেকোনো ধান বা চাল পার হলে সেটি থেকে প্রথমে কালো, ময়লা ও পাথর সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর মোটা চাল চলে যায় অটোমিলের বয়লার ইউনিটে। সেখানে পর্যায়ক্রমে ৫টি ধাপ পার হওয়ার পর লাল কিংবা মোটা চাল সাদা রং ধারণ করে। এরপর আসে পলিশিং মেশিংয়ে। অতি সূক্ষ্ম এই মেশিনে মোটা চালের চারপাশ কেটে সেটিকে চিকন আকার দেয়া হয়। এরপর সেটি আবার পলিশ ও স্টিম দিয়ে চকচকে শক্ত আকার দেয়া হয়। সবশেষে সেটি হয়ে যায় আকর্ষণীয় ও কথিত মিনিকেট চাল। আর চকচকে করার জন্য ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ক্যামিকেল যা মানবদেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। মিনিকেট নামে কি চলে _____________________ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ‘মিনিকেট’ নামে বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত কোনো জাতের ধান নেই। বিআর ২৮, কল্যাণী, স্বর্ণা, গুটিস্বর্ণা, লাল স্বর্ণা, আইঅর-৫০, জাম্বু ও কাজল লতা জাতের ধান ছেঁটে মিনিকেট বলে বস্তায় ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে এ চালের ব্যাপক চাহিদার জন্য ‘মিনিকেট’ নামে ব্যবসা চলছে জমজমাট। তবে দিনাজপুর চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি মোছাদ্দেক হুসেন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, বাস্তবেই মিনিকেট চাল রয়েছে। এ ধান কুষ্টিয়া অঞ্চলে চাষ হয়। মোটা চাল ছেঁটে সরু করে তা মিনিকেট নামে চালানোর অভিযোগ অভিযোগ সত্য নয়। সাধারণ মোটা চাল মেশিনে চিকন করা হয় না। কাটিং, পলিশ ও কালার মেশানার অভিযোগও সত্য নয় বলে দাবি তার। ___________________________ ডা. সুরাইয়া ইসলাম । রাজশাহী ।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়