Ameen Qudir
Published:2018-01-30 16:57:05 BdST
রোগকাহিনীএক মায়াবতী, রূপসী কিশোরীর করুন কাহিনী
অনবদ্য এই কাহিনির প্রয়োজনে মডেল ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম
_______________________________
কাহিনী সংক্ষেপ :
আমিরুল -বর্তমানে বয়স ৩২। সে ছোটকাল থেকে অটিস্টিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি।
তারা এক ভাই ও এক বোন।বোন বিয়ে করে জার্মান চলে যায়।তার খালু ও মা চেয়েছিল তার ঐ বোনের সঙ্গে তার খালাতো ভাইকে বিয়ে দেবে।তার মা ঐ ছেলেকে জামাই বাবা বলে ডাকতো।কিন্তু তাদের আর্থিক অবস্হা খারাপ থাকাতে ঐ মেয়ের এক ইন্জিনিয়ারের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায়
আমিরুল মানসিক প্রতিবন্ধী হলেও সে মা- বাবার একমাত্র ছেলে সন্তান হওয়াতে, তার খালু চেয়েছিল তার সঙ্গে তার এক মেয়েকে বিয়ে দেবে।ঢাকায় আমিরুলদের একতলা একটি বাড়ী আছে।গ্রামে ও প্রচুর সম্পত্তি। কিন্তু ঐ মেয়ে এরকম হাবাগোবা,কুৎসিত চেহারার,অকর্মন্য ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয় না।
এতে ঐ বাবার মনে আফসোস থেকে যায়।একারনে সে লোক তার কনিষ্ঠ কন্যাকে আমিরুলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করে।
এই মেয়েটির বয়স তখন ১২-১৩ বছর হবে।সে দেখতে শ্যামলা,কিন্তু খুবই সুশ্রী, মিস্টি চেহারার,মায়াবতী মেয়ে।এ বিয়ে নিয়ে তাদের আত্মীয়দের মধ্যে মতানৈক্য হয়।
তবে এ লক্ষি টাইপের, অল্প বয়সী মিস্টি চেহারা লাজুক মেয়েটি, বাবার কথার অবাধ্য হয় না।সে রাজি হয়ে যায়।
অল্প বয়সের মেয়ে বিয়ে কি,সেক্স কি, ভবিষ্যৎ কি তেমন বুঝতো না।সবাই আশা করেছিল ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী হলেও, কিছু করতে বা বুঝতে না পারলে ও তাদের একটি সন্তান হলে, মেয়েটি তাকে নিয়ে কোনভাবে জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।
কিন্তু সে সব দিক থেকেই অপারগ।আমিরুল বউ কি,ভালোবাসা কি,সেক্স কি,দায়িত্ব কি - কিছুই বুঝে না।
বরং তাকে খাইয়ে দেওয়া,গোসল করানো থেকে শুরু করে সব কিছু এই মেয়েকে করতে হয়।নিজ মা- বাবা যা করতে হিমসিম খায়,যা করতে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে যায়- এ মেয়ে অবলীলায় তা করে যায়।
২-৩ বছর পরেও যখন আত্মীয়রা দেখলো আমিরুল কোন সন্তান তো দিতে পারছে না,বরং তার তেমন শারিরীক সম্পর্ক করার চিন্তা, চেষ্টা, আগ্রহ, ধারনা কোনটিই নাই- তখন উভয় পক্ষের আত্মীয়রা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয় যে আমিরুলের বউয়ের বয়স এখনো কম আছে,সে সুন্দরী তাই এভাবে তার জীবন নষ্ট করা ঠিক হবে না।
সবাই তখন ঐ মেয়েকে আমিরুলকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করতে বলে।
কিন্তু এই ২-৩ বছরের মধ্যে মায়াবতী মেয়েটি এক মায়ার জালে জড়িয়ে যায়।সে বলে ওকে ছেড়ে যাবো চিন্তা করলেই আমার বুক ফেটে যেতো,কান্না পেতো।
ভাবলাম আরেকটি বিয়ে করলে সে স্বামী যে ভালো হবে তার গ্যারান্টি কি? এ যদি আবার কোন মেয়েকে বিয়ে করে সে মেয়ে পারলে আমি কেন পারবো না?
তাছাড়া আমি তো অন্য সবদিক থেকে ভালো আছি।ভালো খাচ্ছি, ভালো পড়ছি,সবার আদর পাচ্ছি। এমনকি ও আমাকে পছন্দ করে,আমার মাথায় হাত রেখে সান্ত্বনা দেয়।
আমি একে কিভাবে ছেড়ে যাবো? ও এতো অসহায়, ও আমার উপর নির্ভরশীল - আমি চলে গেলে ওর কি হবে?
না পেলাম স্বামীর সোহাগ বা দৈহিক আনন্দ।না পারুক আমার জন্য কিছু করতে,হোক সে দেখতে কুৎসিত।সে তো সরল,অন্য পুরুষের মতন তার তো কোন বদ স্বভাব নেই-
আমার শুধু একটি সন্তান হলেই চলবে।
কিন্তু এরপর আমিরুলের আরো অবনতি হয়,অস্বাভাবিক আচরন বেড়ে যায়,সারাক্ষণ হা করে থাকে,লালা জড়ে।তাকে সে লালা মুছে দিতে হয়,তার খামখেয়ালি পনা,অবাস্তব আবদার মেটাতে হয়।
তার দাম্পত্য জীবন বলে কিছু নেই,সন্তান তো দূর থাক।
অনেক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ দেখানো হয়েছে।সবাই বলে এর উন্নতির কোন সম্ভাবনা নেই
।মেয়েটি কাদতে কাদতে বলে স্যার, আপনার অনেক প্রশংসা শুনে এসেছি।আমি সেক্স চাই না,ভালোবাসা, আদর চাই না, আমাকে শুধু একটি সন্তান পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।
একে আমি ছাড়তে পারবো না -ছাড়ার চিন্তা করলেই কান্না আছে,বুক ফেটে যায়। ওকে সুস্থ করে আমার একটি সন্তান হওয়ার ব্যবস্থা করে দিন স্যার
এ কাহিনী কি বলে:
১।অটিজম, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলে মেয়েকে নিয়ে নিজ মা- বাবারাই যেখানে থাকে অতিষ্ঠ। সেখানে একটি রুপসী,কিশোরী কি দেখে মায়ায় জড়ালো?
২। টাকা পয়সা,সম্পত্তির লোভে অনেক গরীব মা- বাবা তাদের সুন্দরী, গুনবতী মেয়েদেরকে ও আমিরুলের মতন সবদিক থেকে প্রতিবন্ধী ছেলের কাছে বিয়ে দিয়ে থাকে।
একদিকে প্রতিবন্ধীদের ও অধিকার রয়েছে ঘর সংসার করার,
আবার একটি গরীব ঘরের মেয়ের ও অধিকার,সাধ থাকে -একজন স্বাস্হ্যবান,সুস্হ,উপার্জনক্ষম, স্বাভাবিক স্বামীর ঘর সংসার করার।
এ দুয়ের সহজ ও ভালো সমাধান কি?
৩। আমিরুলের মিস্টি,রুপবতী বউ কিন্তু নিজ থেকে তাকে মেনে নিয়েছে। একজন কিশোরী -তরুনী মেয়ে সব ধরনের মানসিক, সামাজিক, দৈহিক চাহিদা থেকে বন্চিত থেকেছ ও সে আমিরুলের সঙ্গে সংসার করতে হাসিমুখে রাজি।
শারিরীক আনন্দের জন্য নয়,শুধু ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে তার জীবনের একমাত্র চাওয়া,আকাঙ্ক্ষা তার যেন একটি সন্তান হয়।হোক তা ছেলে বা মেয়ে।
এ যুগে এমন ত্যাগী, নিবেদিতা স্ত্রী কতজন আছে?
৪। কিন্তু এরকম ত্যাগ কি শুধু গরীবরা করবে? বা শুধু নারীরা করবে?
কোন পুরুষ কি এমন কোন সবদিক থেকে প্রতিবন্ধী কোন কুৎসিত মেয়েকে এভাবে আপন করে নিবে? এমন উদাহরণ কি আছে?
_______________________________
প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম
সোশাল সাইকিয়াট্রস্ট
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল,ঢাকা
e- mail: [email protected]
আপনার মতামত দিন: