Ameen Qudir

Published:
2017-09-05 16:50:45 BdST

আমরা কেবল সত্যের পক্ষে আর অসত্য অপরাধীর বিপক্ষে


 

ডা.শিরিন সাবিহা তন্বী
_____________________________


তখন আমার কেবল পাঁচ বছর।দাদা বাড়ীতে চাচাত বোনের বিয়ে।আমাদের গান শেখানো হলো।
"আলতা দিলাম পায়!!সাবান দিলাম গায়!!
ও দুলাভাই কেমন দেখা যায়??
আমাকে দলের সামনে সাজিয়ে দাঁড় করানো হলো।গান টান গাইলাম।
একটু পরে এক বয়স্ক মহিলা এসে জিজ্ঞাসা করল,তুমি কোন পক্ষ??
বর পক্ষ না কনে পক্ষ??
আমি প্রশ্ন না বুঝে কাঁদো কাঁদো মুখে চেয়ে থাকলাম।


আমাদের জাতীয়,পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে আমরা খুব সচেতন ভাবেই এই পক্ষ বিপক্ষের বিষ বাস্প আমাদের শরীরে ঢুকিয়ে দেই।
আমরা তাই কোন মতেই নিরপেক্ষ হতে পারি না।স্বাধীন ভাবে ভাবতে পারি না।আমাদের ভাবনা,চিন্তা সবকিছুই পক্ষপাত দোষে দুষ্ট।
আর আমাদের জীবনে পার্সিস্টেন্ট নব্বই শতাংশ দুঃখ,দুর্দশা,সমস্যা,অপরাধের কারন আমার কাছে আমাদের এই পক্ষপাত মূলক ভাবনা চিন্তা এবং কার্যক্রমকেই মনে হয়।


যেমন ধরুন,আপনি শিক্ষিত এক নারী।চিন্তায়,ভাবনায়,কর্মে খুব আধুনিক।কিন্তু সারাদেশে জনসেবা শেষে ঘরে ফিরে আপনি যখন আপনার ভাইয়ের বউকে দিনরাত আপনার মায়ের দ্বারা নানাভাবে মানসিক নির্যাতিত হতে দেখেন,আপনি আপনার মাকে সবিনয়ে বুঝিয়ে বলেন না তিনি অন্যায় করছেন।বরং মায়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন।


আপনি প্রেম করে বিয়ে করেছেন।আপনার পরিবার আপনার বিয়ে মেনে নেয়নি।স্ত্রীকে অসম্মান করছে।এই সময়ে আপনি আর নিরপেক্ষ শিক্ষিত পুরুষ থাকেন না।আপনি হয়ে যান আপনার মায়ের পক্ষের।তখন নবপরিনীতা বধুটি অবাক হয়ে তার প্রেমিক বরটিকে দেখে,একে তো সে ভালোবাসে না।এ তো তার ই বিপক্ষ দলের এক শক্তিশালী সদস্য মাত্র।
আপনার বাবা বিশাল বিত্তশালী।আপনি ভীষন সততার গীত গান।ভালোবেসেই কলেজ শিক্ষককে বিয়ে করেছেন নীতি,আদর্শ,সততার জন্য।বিয়ের পর আপনি রোজ তাকে বিত্তহীনতার জন্য অপমান অপদস্ত করেন।আপনার অনৈতিক বিত্তবান বাবার উদাহরন টানেন।ঐ সৎ মানুষটির কাছে আপনি তখন কেবল এক অসৎ শ্বশুরের পক্ষের দালাল কন্যা।


আপনার স্বামী বা বাবা ঘুষখোর।আপনার অনেক বিত্ত বৈভব।প্রতিপত্তি।আপনি দিনে দিনে হয়ে যান ঐ ঘুষখোরের পাহারাদার আর ঘুষের টাকার কেনা গোলাম।কেউ ঘুষের বিরুদ্ধাচরন করলে ঘুষখোরের আগে আপনি ঝাঁপিয়ে পরেন।আপনি হয়ে যান ঘুষের পক্ষের লোক।


আপনার প্রিয় বান্ধবী বা রুমমেট!আপনি বেশ প্রতিবাদী।কিন্তু যখন জানেন এই বান্ধবী ই বস্তা পঁচা হিন্দী সিরিয়ালে কুটিল ননদিনী হয়ে ভাই,ভাবী,ভাইপো,ভাইস্তীর জীবন অতিষ্ট করছে,তখন আপনার প্রতিবাদী কন্ঠ মিইয়ে যায়।
আপনজনের অপরাধে প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ দুটোই বেশী জোড়দার হওয়া উচিত।আমাদের সমাজে উল্টো।অপরাধীকে ঘিরে আমরা আরো কিছু অপরাধীর বলয় তৈরী করি।
মা যখন বোনের শ্বশুর বাড়ীতে নিত্য ভাঙ্গনের খেলা খেলে।আমি সাংবাদিক ভাই হয়ে বলতে পারি না,মা!বোনটার সংসারে অনৈতিক হস্তক্ষেপ করো না।


আমি ভাই হয়ে ডিফেন্স অফিসার বোনকে বলি ব্রেভ অফিসার,দেশের গর্ব আর বোনের কলিগকে বিয়ে করে বউকে বলি ডিফেন্সে মেয়ে অফিসার তো ড্যাশ ড্যাশ ড্যাশ!তুই একটা তাই!
বোন যে আমার পক্ষের আর বউ বিপক্ষের।
আমি মানবতার ঝান্ডা উড়াই আর দুলাভাই বাবা হতে পারবে না বলে বোনকে ডিভোর্স করাই।তখন আমি বোনের পক্ষে।মানবতার পক্ষে নয়।
পুলিশ অফিসার ভাই হয়ে অপর ভাইয়ের ধর্ষন কিংবা স্ত্রী নির্যাতন মামলায় ভাইয়ের পক্ষ নি।ভিকটিমের পক্ষ নি না।ধর্ষক তুফান সরকারের বউ,শালী,শ্বাশুরী প্রকৃষ্ট উদাহরন!
আমরা অপরাধীর দল দেখি।ধর্ম দেখি।লিঙ্গ দেখি।তারপর অপরাধ নিয়ে কথা বলি।পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নি।


পক্ষে বিপক্ষের এই নোংরামিতে আমরা না নিজেকে জাজ করতে পারি না সমাজকে।আমরা হীনমন্য হই।আমরা ইম্যাচিওরিটি আচরন শো করি।আমরা সমাজ সংস্কারকদের ব্যক্তিগত আক্রমন করি।বার বার নিজেকে প্রমানের চেষ্টা করি।


সমাজটাকে বদলাতে চেষ্টা করি না।ভুল গুলোকে ফুল করে তুলি না।


বরিশাইল্যারা বাঁচাল (আমি বরিশাইল্যা) - বললে কাউকে গালি দেয়া হয় না।ঝাঁপিয়ে পড়বার ও কিছু নাই।বক্তাকে পার্সোনাল এট্যাকের ও কিছু নাই।বরং বরিশাল বাসী কম কথা বলার চেষ্টা করতে পারেন।এই শিক্ষা আমাদের নাই।
তাই সত্যি যদি সমাজের ভালো চাই।সমাজটাকে বদলাতে চাই,তবে এক চোখা না হই।পক্ষপাতদুষ্ট না হই।
আত্মীয় অনত্মীয় যেই হোক,আমরা যেন ভিকটিমের আর সত্যের পক্ষের এবং অপরাধ আর অপরাধীর বিপক্ষের হই।

_________________________________
Dr.Sherin Sabiha Tonny, বরিশাল।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়