Ameen Qudir

Published:
2017-08-27 17:10:47 BdST

রোগী কথনএক্টোপিক প্রেগন্যান্সি: গাইনীকোলজীক্যাল দুঃস্বপ্ন


 

 

 

 

 

ডা. ছাবিকুন নাহার

__________________________________

 

একটা প্রাণ মনে হয় বেঁচে গেলো। রোগী খুব গরীব। বিবাহিত জীবন ১২ বছরের। কোন বাচ্চাকাচ্চা নেই। এক্টোপিক প্রেগনেন্সি নিয়ে লোকাল ক্লিনিকে ভর্তি ছিল তিন দিন।

এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি মানে অস্বাভাবিক গর্ভধারণ। এখানে বাচ্চা জরায়ুতে না এসে পার্শ্ববর্তী টিউবে আসে। বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে টিউব স্ফিত হতে পারেনা। ফলে অবধারিত ভাবে ফেঁটে যায়। এতে বানের জলের মতো প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় এবং তৎক্ষনাৎ অপারেশন করে বন্ধ করতে না পারলে রোগী মারা যায়। এটা একটা মেডিকেল ইমার্জেন্সি।

আত্মীয়তার সুত্রধরে আমার কাছে এসেছে, সঙ্গে কোন পরীক্ষা নিরীক্ষার কাগজ নেই। এমনকি ব্লাড গ্রুপ, হিমোগ্লুবিন % (রক্ত শূন্যতা পরিমাপক পরীক্ষা) ও না। সামান্য কয়টি টাকা সাথে। জানলাম হাতের মোবাইল আর ঘরের টুকিটাকি বিক্রি করে সংগ্রহ করা।

ভাবলাম ৩ দিন যেহেতু বেঁচে আছে আনরাপচার্ড হয়তো, কিন্তু ক্লিনিকাল কন্ডিশন তা বলে না।আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে টাকা লাগবে, তাছাড়া লাগবে সময়। অত সময় হাতে নেই। নিজেই প্রব ধরলাম। কোন এক কালে শিখেছিলাম ভাগ্যিস! দেখব তো শুধু ফেঁটে গেছে কিনা। দেখি শুধু ফাঁটেই নাই, পুরো জরায়ু এবং আশপাশ রক্তের বন্যায় শাপলা গাছের মতো ভাসছে! কি করবো ভাবছি। রেফার করব? যদি পথেই ... অথবা দালালের হাতে...

লোকবল বলতে স্বামী বেচারা একা। সহজ সরল রিক্সা চালক। সাহস করে সিদ্ধান্ত নিলাম, যা থাকে কপালে। কাউন্সিলিং করলাম। ল্যাপারোটমি, পেট কেটে অপারেশন এর মাঝামাঝি রিপোর্ট এলো হিমোগ্লুবিন ৬ গ্রাম/ ডেসি. লিটার। যেখানে স্বাভাবিক মাত্রা ১১ থেকে ১৬ গ্রাম। রক্ত শূন্যতা ভয়াবহ। রক্ত পাব কোথায়? অন্তত চার ব্যাগ বি পজিটিভ রক্ত লাগবে। ভাবছি আর ঘামছি!

ডিউটি সিস্টার দিলো রক্ত। সার্জন টিম নিল খুবই মিনিমাম। থ্যাংকস হারিস ভাই ( নিজ মেডিকেলের সিনিয়র), মাইনুল ভাই (এনেস), সর্বোপরি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে যারা এখনও পুরোপুরি কর্পোরেট হয়ে ওঠেনি।

সবাই চেষ্টা করেছি অন্তঃপ্রানে। অবশেষে বাসায় ফিরলাম। দেখি আমার ৪২ দিন বয়সী বাচ্চা (মিহন) আমার জন্য পাগল হয়ে আছে। কাল আবার ছুটতে হবে রক্তের জন্য। মিনিমাম দুই ব্যাগ। আমি জানি আজকের মতো কালকেও কোন না কোন ব্যবস্থা হয়ে যাবে ।

( বিঃদ্র- প্রায় সাড়ে তিন বছর আগের ঘটনা। মনে পরলে এখনো ভালো লাগায় মনটা ভরে যায়!)

_____________________________


ডা. ছাবিকুন নাহার । সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়