Ameen Qudir

Published:
2017-08-27 16:56:05 BdST

নাম : সিদ্দিকুল:পাসপোর্ট নাম্বার : BB...


 

 

 

 




ডা. মোশাররাত জাহান কণা
____________________________________

কেবিন ক্রুর দেয়া কফির কাপ ভদ্রলোক এগিয়ে দিলেন। তাও আবার দু বার করে। সেই সুবাদেই চোখে পড়ল ওনার বাম হাতের বৃদ্ধাংগুলির শেষ কড়টা নেই। দেখে মনে হল কাটা পরেছে, হয়ত কোন হেভি মেশিনারিজে । একদম প্রথম সিটে একজন থাই মহিলা , মাঝে উনি। আর জানালার পাশে আমি। দেশি মানুষ।
নাহ! কথা বলা দরকার।
- কোথা থেকে ফিরছেন? ভদ্রতার খাতিরে হেসে জিগেস করলাম।
- মালয়েশিয়া।
-থাইল্যান্ড হয়ে যে? ডিরেক্ট ফ্লাইট ছিল না?
-ছিল। পাইনি। মা মৃত্যু শয্যায়। দেখতে চায় আমাকে । ডাবল ভাড়া দিয়ে থাই এয়ারলাইন্সে কাটলাম । এর আগে বাবা মারা গেল। এরপর ছোট ভাই। কাউকেই শেষ দেখা দেখিনি । মা কেও পাই কিনা...


ভদ্রলোকের গভীর দীর্ঘশ্বাসে চমকে উঠলাম।
- আল্লাহ্‌ ভরসা। কফির কাপে চুমুক দিয়ে মেঘ দেখায় মনোযোগ দিলাম। পাশের সীটে বসা শোক বিহবল মানুষ টাকে কি বলা যায় মনে মনে তাই ভাবছি।
এভোমিনের সাইড ইফেক্ট হিসেবে ঘুম আর জাগরনের মাঝামাঝি। সময় কতক্ষণ পার হয়েছে জানি না। হঠাত ওনার ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম।
আপা!
একটা উপকার করবেন আমার?
ওনার কি উপকার করতে পারি ঘুমের ঘোরে আমার মাথায় আসছে না।
- জ্বী বলুন?
কিছুটা দ্বিধান্বিত আমি।
বিব্রতভাবে লাগেজ ডিক্লেয়ারেশন ফরম টা এগিয়ে দিলেন উনি।
- ফরম টা পূরণ করে দেবেন?
- অবশ্য ই। পাসপোর্ট দেন।
ঘুম জড়ান হাতে লিখতে শুরু করললাম।

 

নাম : সিদ্দিকুল
পাসপোর্ট নাম্বার : BB *******
লাগেজের সংখ্যা : ৩টি
-লেখা পড়া জানি না তো আপা। লেবারের কাজ করি । আমাদের বেশির ভাগের ই কাগজপত্র লিগ্যাল না। অনেক কষ্টে পালায় পালায় থাকতে হয়। এই তো কিছু দিন আগে ও পাহাড়ে রাত কাটাতে হইছে।
কলম থেমে গেল হঠাত। ওনার হাতের এম্পুটেশনের কারন টা বুঝতে পারলাম ।
-ইস! কষ্ট তো অনেক ? দেশে থেকে যান? হেসে বললাম।
- উপায় নেই আপা। অভাবের সংসার। বাচ্চা ছোট।
হুম। নিজের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসল। এই কথার প্রতিউত্তর আমার জানা নেই।
গন্তব্যে পৌঁছে আমি বলার আগেই উনি আমার লাগেজ নামিয়ে দিলেন।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসলাম।
চেক ইন ডেস্কের সুদীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাত পিছনে ফিরে দেখি উনি বিদেশি পাসপোর্ট লাইনে। উপরের লেখা উনি পড়তে পারেন নি । বুঝতে বাকি রইলো না।
পাশের ভদ্রলোক কে অনুরোধ করলাম ওনাকে বুঝিয়ে বলতে। ভদ্রলোক তাচ্ছ্বিল্যের সুরে জবাব দিলেন -" বাদ দেন তো। ঠেইকে শিখুক।"
অগত্যা লাইন ছেড়ে ওনাকে ডেকে বললাম। ক্লান্ত বিষন্ন চোখে অসম্ভব কৃতজ্ঞতা নিয়ে উনি প্রবাসী লাইনে এসে দাঁড়ালেন।
আমার দেরি হয়ে গেল কিছুটা ।
নিজেদের শ্রমে ঘামে দূরের কোন গ্রামে নিরন্তর হাসি ফুটিয়ে চলা, প্রত্যাশার ভারবাহী এই ক্লান্ত মানুষগুলোর বাকি পথচলা টুকু সহজ হোক।
পাহাড়ে পালিয়ে থেকে লাগেজ ভর্তি শ্যাম্পু, লোশন নিয়ে বাড়ি ফেরা সিদ্দিকুলেরা ভাল থাকুক।
সকল সিদ্দিকুলের মায়ের স্বপ্ন, বাড়ি ফিরুক....

______________________________

লেখক ডা. মোশাররাত জাহান কণা । সুলেখক।


Former Medical Officer at Khidmah Hospital (Pvt.) Ltd.

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়