Ameen Qudir
Published:2017-08-10 02:00:55 BdST
মা আমাদের যতোখানি বোঝে, আমরা মা'কে তার এক বিন্দুও বুঝি না
ডা. রাজীব দে সরকার
_________________________________
কিছুদিন আগেই মা ভীষণ অসুস্থ ছিলো।
বাংলার আবহমান পরিবারধারায় সবাই অসুস্থ হলেও মা'দের অসুস্থ হবার কোন রীতি নেই। মায়েদের অসুখ লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে গেছে যুগের পর যুগ।
"ভীষণ" অসুস্থ বলতে মা'র মোটামুটি বিছানায় পড়ে যাওয়া বোঝাচ্ছি আমি। বিছানায় শুয়ে শুয়েও মা চিন্তা করতো, আমাদের রান্না হবে কীভাবে। বুয়া এলো কী না, বুয়া না এলে ঘরদোর পরিষ্কার করবে কে। রান্না না হলে আমরা খাবো কী। অথচ মা কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই 'ভীষণ' অসুস্থ ছিলো।
অসুস্থতা নিয়েও মা আমাদের জন্য রান্না করেছে। যতোটুকু না করলেই না, ততোটুকু ঠিকই করে গেছে। হয়তো মায়েরা এমনই করেন। কারন মায়ের কোন ছুটি নেই।
>
এই মুহূর্তে আমি অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছি।
অফিসে যাচ্ছি না দু'দিন। প্রচন্ড মাথাব্যাথা। চোখ ব্যাথা করছে। কাশি আর জ্বরে যথেষ্ট ধরাশায়ী। ঠিক ছোটবেলার মতো মা এখনো আমার যত্ন নিয়ে যাচ্ছে।
মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে মা। মাথা হাতিয়ে দিচ্ছে। যখন চা খেতে ইচ্ছে করছে, মা চা বানিয়ে নিয়ে আসছে। একের পর এক খাবার জিনিস মুখের সামনে এনে ধরছে। ঘন্টায় ঘন্টায় ওষুধ, ডাবের জল, চা - কোন কিছুতেই মা'র ক্লান্তি নেই।
জ্বরের ঘোরে ছিলাম কাল রাতে। যে কয়বার চোখ খুলেছি, দেখেছি মা একটু পর পর এসে দেখে গেছে আমাকে। মায়ের পায়ের শব্দ আমি চিনি।
গোয়ালন্দে চাকরী করার সময় এক বৃহস্পতিবার বিকেলে এমনই ধুম জ্বর গায়ে ভর করলো। ইমার্জেন্সী ডিউটি থাকায় ঢাকা যেতে পারলাম না। এদিকে হাসপাতাল ডরমিটরী খালি। ২ দিন পরেই ভালো হয়ে গিয়েছিলাম। অথচ বাসায় আসার পরেই মা বুঝে ফেললো আমার জ্বর এসেছিলো।
অজস্র মাইল দূরে থেকেও মা সম্ভবত তার সন্তানের ভালো থাকার বা মন্দ থাকার সিগনাল পান।
অথচ মা আমাদের যতোখানি বোঝে, আমরা মা'কে তার এক বিন্দুও বুঝি না। মা যখন অসুস্থ ছিলো, মা'র মতো করে মা'র যত্ন কী আমি করেছি? অথচ মা ঠিকই প্রতিবারের মতো নিজের সর্বস্বটুকু উজাড় করে দিয়ে চলেছে।
একটা জাহাজ অনেকগুলো ছোট ছোট ডিঙ্গী নৌকাকে টেনে নিয়ে চলতে পারে। কিন্তু এরকম অসংখ্য ডিঙ্গী নৌকার সাধ্য নেই সেই জাহাজকে টেনে নিয়ে চলার।
আজ নিজেকে সেই ছোট্ট ডিঙ্গীর মতো মনে হচ্ছে।
মা,
আমি তোমার ছোট্ট ডিঙ্গী।
মা, আমাকে টেনে নিয়ে চলো। সারাজীবন আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে চলো।
_______________________________
ডা. রাজীব দে সরকার । সুলেখক।
আপনার মতামত দিন: