Ameen Qudir
Published:2017-08-08 15:58:02 BdST
ক্যান্সার হাসপাতালের স্বপ্ন এবং
মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
_____________________________
লেখক হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের মাটিতে ক্যান্সার হাসপাতাল বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। সে স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই অনিবার্য মৃত্যুর হলাহল তাঁকে পান করতে হয়। এই স্বপ্ন নিছক তাঁরই ছিল না। হাজারো ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী, তাদের পরিবারের ভুক্তভোগী লাখো সদস্যসহ প্রকারন্তরে সকল বাংলাদেশীদেরই স্বপ্ন।
২।ক্যান্সারের প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও ভেজাল খাদ্যকে অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়। পানিতে মেশানো আর্সেনিক নীরব ঘাতক হিসেবে ক্যান্সারকে ডেকে আনছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি মাছ - মাংশ- দুধ- ফলসহ বিভিন্ন পচনশীল খাদ্যে ফরমালিনসহ বিভিন্ন কার্সিনোজেনিক রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফল পাকানোর জন্য কারবাইড, মিষ্টি এবং ফাস্টফুডে কৃত্রিম রঙের ব্যবহার ভয়াবহ আকারে বেড়েছে। ট্রাফিকজ্যামে নাকাল নগরবাসী কার্বন, সীসাসহ বিষাক্ত পদার্থ প্রতিদিনই ঘন্টার পর ঘন্টা ফুসফুসে টেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন ।এ ছাড়াও ক্যান্সার হওয়ার অসংখ্য 'রিস্ক ফ্যাক্টর' -এ আমরা প্রতিনিয়ত 'এক্সপোজার' হচ্ছি ।
৩।ক্যান্সারের চিকিৎসা এক জটিল ও বহুমুখী প্রক্রিয়া । এরজন্য প্রয়োজন বিশেষায়িত হাসপাতাল। এই ধরণের হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার আছে কিনা সেটি নিশ্চিত করা হয়। ক্যান্সারটি কোথায়,সেটির ধরণ,কোথায়,কোন স্তরে আছে সেটি নির্ণয় করা হয়। কেমোথেরাপি দেয়া হয় বিশেষায়িত চিকিৎসক দ্বারা বিশেষ ব্যবস্থাপনায়। অনেক ক্ষেত্রে শল্য চিকিৎসারও দরকার হয়।
৪।আমাদের দেশে এমন হাসপাতাল না থাকায় হাজারো রোগী বিদেশে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। রোগী ও রোগীর সাথে থাকা এটেন্ডেন্টকে দীর্ঘদিন বাহিরে থাকা যেমন সময় সাপেক্ষ তেমনি ব্যয়বহুল। 'ক্যান্সারের মূল চিকিৎসা' ছাড়া আনুতোষিক বিশাল খরচ বহন না করতে পেরে অনেকেই ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর সবাদ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার এই বিশাল খরচ বহন করতে যেয়ে অনেক পরিবার একেবারে পথে বসে যায়।এ ছাড়া ব্যপক অর্থ বিদেশের মাটিতে ব্যয়িত হওয়ায় রাষ্ট্র বিপুল পরিমাণে দেশী -বিদেশী মুদ্রা হারায় ।
৫।বাংলাদেশে ধনাঢ্য ব্যক্তির সংখ্যা যথেষ্ট। পথে পথে বি এম ডাব্লিউ গাড়ি দেখা যায়। সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখবার অন্যতম দেশ বাংলাদেশ। এদের ভিতরে অনেকেই সুহৃদয় ব্যক্তি থাকতে পারেন। রাষ্ট্রও এই বিষয়ে এগিয়ে আসতে পারে। প্রয়োজন বিভিন্ন স্তরের বিশেষজ্ঞদের সমন্বিত দূরদর্শী, সময়োপযোগী, বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন।
৬।আমাদের ও পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করতে গেলে ক্যান্সার হাসপাতাল বানানো অতি জরুরী। এই স্বপ্ন পূরণ যত দেরী হবে ততদিন ক্যান্সার শুধু আমাদের শরীরেই বাসা বাঁধবে না আমাদের স্বপ্নও ক্যান্সার আক্রান্ত হবে।
_______________________________
মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ ।
আর্মড ফোরসেস ফুড এন্ড ড্রাগ ল্যাবরেটরির উপ অধিনায়কের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন। ঐতিহ্যবাহী এই ইউনিটটি সেনা, নৌ,বিমান বাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীতে ব্যবহারকৃত সকল খাদ্যসামগ্রী এবং ড্রাগ তথা ওষুধ পথ্য পরীক্ষা - নিরীক্ষা করে ব্যবহারের উপযুক্ততা/ অনুপযুক্ততা নিরুপন করে।
এর আগে ছিলেন আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজএ ।
ওয়েস্টার্ন সাহারায় শান্তিরক্ষী হিসেবে সফলভাবে এক বছরের কাজ শেষে আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন।
।
[email protected]
আপনার মতামত দিন: