Ameen Qudir

Published:
2017-08-08 15:28:59 BdST

রোগী-চিকিৎসক নিম্নগামী সম্পর্ক এবং চিকিৎসক-সাংবাদিক সম্পর্ক



 

 


ডা. রেজাউল করীম

_______________________________


রোগী-চিকিৎসক নিম্নগামী সম্পর্কের পাশাপাশি চিকিৎসক-সাংবাদিক সম্পর্ক নিয়েও ভাবনা চিন্তা করার দীর্ঘ্য পরিসর রয়েছে, বিশেষত: "প্রসব করাতে গিয়ে শিশুর মাথা ছিঁড়ে ফেললেন চিকিৎসক" জাতীয় খবর কিংবা একটি বাংলা চ্যানেলের স্টুডিওতে বসে চিকিৎসকের ভুল ভ্রান্তির চুলচেরা আলোচনা যখন সেই সম্পর্ককে আরো নিম্নগামী করে তোলে। ইদানীং এই সব আলোচনায় একদল সবজান্তা চিকিৎসক ও দেখা যাচ্ছে সেই সব আলোচনায় বাঁধাবুলির পোঁ ধরছে- তাদের অবস্থা.............তা যাকগে, হাটে হাঁড়ি না ভাঙাই ভালো। এই পরিপ্রেক্ষিতে একদল তরুন চিকিৎসক ও সাংবাদিক পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে একটা সুস্থ সম্পর্ক রচনা করার জন্য আপ্রান চেষ্টা করছেন।

 

প্রথমত: এটা মেনে নেওয়া প্রয়োজন যে, চিকিৎসক বা সাংবাদিক কেউই ভুল ত্রুটির ঊর্ধ্বে নন- ভুল ও ইচ্ছাকৃত অবহেলা দুটি পৃথক বিষয়। বিশেষত: চিকিৎসার মত জটিল বিষয়ে ভুল নির্মান যে সমাজের জন্যও ক্ষতিকর তা বলাই বাহুল্য। অনেক সুদক্ষ সাংবাদিক অবশ্য আছেন যারা এই সুক্ষ্ম পার্থক্য নির্ণয় করতে পারেন ও সুস্থ সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

 

এই অশান্ত সময়ে বহরমপুরে চিকিৎসক- সাংবাদিকদের পারস্পরিক আদান-প্রদানের একটি মাধ্যম তৈরী করতে পারার জন্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম ধন্যবাদ দাবী করতে পারে। চিকিৎসক প্রতিনিধি হিসেবে বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা: সন্জয় হোম চৌধুরী, ডা: রাজীব পান্ডে, ডা: পবিত্র চক্রবর্তী, ডা: প্রলয় বাসু সহ ফোরামের ১৬ জন সদস্য এর জন্য ধন্যবাদার্হ। সাংবাদিকদের তরফে শ্রী রাজীব চৌধুরী ও শ্রীমতি সোমা যে দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন করেছেন তা খুবই প্রশংসার দাবী রাখে। আলোচনায় স্থির হয়-
চিকিৎসক-সাংবাদিকরা নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক তথ্য বিনিময় করবেন।

 

যে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে তার মূল কারন হল চিকিৎসা পরিকাঠামোর অভাব। আউটডোরেও কয়েক হাজার রোগীর জন্য পানীয় জল ও শৌচাগার নেই। চিকিৎসা কর্মীদের একাংশের সহমর্মিতার অভাব ও চিকিৎসক রোগীর তথ্য বিনিময়ের অনীহাও ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করেছে। মেডিকেল কলেজে বহুস্তরীয় ব্যবস্থা থাকা সত্বেও কেন একজন একজন ইন্টার্নকে মূমুর্ষু রোগীর চিকিৎসা করতে হয় তা যেমন বিস্ময়কর তেমনি রাত ১১টায় ছজন লোক বিনা বাধায় তিনতলায় কর্মরত মহিলাসহ জুনিয়ার ডাক্তারদের উপর হামল করতে পারল তা একই রকম গুরুতর ও বিস্ময়কর।

 

আরো বিস্ময়কর ঘটনা হল বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার হাসপাতালের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতি। এই পরিপ্রেক্ষিতে WBDF প্রতিনিধি দল জেলাশাসকের কাছে একগুচ্ছ প্রস্তাব রাখে:
চিকিৎসা পরিকাঠামোর উপযুক্ত মানোন্নয়ন করতে হবে।

 

হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে " হাসপাতালে হামলা ও সম্পত্তিহানী প্রতিরোধ আইন ২০০৯" প্রয়োগ করতে হবে।
সাংবাদিক বন্ধুরা দাবী করেন যে, হাসপাতালে অব্যবস্থার মূল কারন চিহ্নিত করতে হবে। চিকিৎসক-সাংবাদিক বিরোধ আসলে প্রশাসনিক আধিকারীকদের কষ্টকল্পনা ও নিজেদের পাপ স্খালনের প্রচেষ্টা বলে তারা বর্ণনা করেন ও হাসপাতালের অব্যবস্থা ও পরিকাঠামোগত ত্রুটি অবসানের জন্য চিকিৎসকদের সোচ্চার হওয়ার আবেদন জানান।


"Team WBDF" এর ১৬ জন চিকিৎসক বন্ধু যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা অন্য জেলায় ছডিয়ে পডবে এই আশা করাই যায়। দিনের শেষে, নিজের পেশার প্রতি সুবিচার করতে পারলেই মানুষ উপকৃত হবেন। রোগী-চিকিৎসক বা আরো বৃহত্তর ক্ষেত্রে মানুষে মানুষে বিভেদ কমানোর জন্য "ধোবির পাট" বা সশস্ত্রতা যে কোন কাজে লাগে না তা ধ্রুব সত্য। মানুষে মানুষে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের বাতাবরণ দূর করতে হলে চাই পারস্পরিক আদান প্রদান ও ভাব বিনিময়। পরম্পর বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত বসবাস করে ও পারস্পরিক ঝাল মেটানোর জন্য কাল্পনিক কাহিনী রচনা না করে মানববন্ধন রচনা করাই মহত্তম পন্থা।

______________________________


ডা. রেজাউল করীম । বাংলার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক ও মুক্তচিন্তক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়