Ameen Qudir
Published:2017-08-08 04:48:07 BdST
পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী করতে গিয়ে অনেকেই বিয়ে করতে পারেননি,করলেও বিয়ে টেকে নি
ডা. মিথিলা ফেরদৌস
__________________________________
পোস্ট গ্রাজুয়েশন ।
এমবিবিএস পাশ করার পর জীবনের প্রকৃত যুদ্ধ করার জন্যে ঢাকায় আসে অসীম ভাই। বিএসএমএম ইউ এর লাইব্রেরীতে পড়াশুনা করা,আজিজ সুপারের চার সিটের এক সিটে উঠা,ক্লিনিকে সপ্তাহে তিনটা ডিউটি করে মাসে পাওয়া যেত ৫০০০ টাকা,তার সাথে টুকটাক এসিস্ট ফি।সপ্তাহে একদিন নিজ গ্রামে গিয়ে প্রাক্টিস।এদিকে ডাক্তার ছেলের দিকে তাকায় আছে বাবা মা অনেক আশায়,এতদিনে ছেলের খরচ চালাইছে তারা,এখন যাতে সে ছোট ভাইবোনদের দেখাশুনা করে।অসহায় লাগে অসীম ভাইএর।ঢাকা শহরে নিজের খরচ চালায় বাবা মা কে টাকা পাঠাতে নাভিশ্বাস উঠে তার।
তিনবছর টানা এফ সি পি এস মেডিসিনে পার্ট ওয়ানের জন্যে চেষ্টার সাথে বি সি এস।বিধি এখানেও তার সাথে নাই।কোনটাই হয়না।কেউ একজন শর্টকাটের পরামর্শ দেয়।এনেস্থিসিয়ায় ৫০০ টাকা দিয়ে অনারারি ট্রেনিং এ ঢুকে,একবছর বিনা পয়সায় অমানবিক পরিশ্রম।লাইব্রেরী কেন্টিনে ২৫ টাকার লাঞ্চ,২৫ টাকার ডিনার।হেটে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে ট্রেনিং করে টাকা বাচানো নিদারুণ কস্টের জীবন।
সময় বয়ে যায়,ভাইয়াকে সবাই মিলে বিয়ের কথা বলি,ডাক্তার মেয়েও ছিল।ভাইয়া হয়তো জীবনের ওয়াইজ ডিসিসান তখনই নিয়ে ফেলেছিল, ডাক্তার মেয়ে বিয়ে করবেন না।তার ইচ্ছা সাধারণ ঘরের সুন্দরি মেয়ে বিয়ে করা।অনেক খোজাখুজির পর এমন মেয়ের সন্ধান তার বন্ধু মহল থেকে পেয়ে যান।ভাবী সুশিক্ষিতা,অসাধারণ সুন্দরি কিন্তু উচ্চাভিলাষী নন।তিনি ডাক্তার জামাই পেয়েই সুখী।
দাম্পত্য জীবন শুরু হয়,হাতির পুলের এক ফ্লাটের সাবলেট এক রুমে।রান্নাঘর অন্য তিন জন ডাক্তার দম্পতির সাথে শেয়ার করতে হয়।অসীম ভাই এর অনারারীর সারাদিনের পরিশ্রম,ক্লিনিকের কস্টের ডিউটি,সপ্তাহে নিজ গ্রামের একদিনের প্রাক্টিস তার সাথে লাইব্রেরীর পড়াশুনার মাঝে একটুকরা সুখ ভাবী।খুব ঘুরতে ইচ্ছে হলে টি এস সি বা কলা ভবনে হেটে ভাবীকে নিয়ে,চপ আইসক্রিম বাদাম খেয়ে ঘুরেই যা শান্তি।
এর মধ্যে রেসিডেন্সিতে চান্স পেয়ে যান, বি এস এম এম ইউ এর ই এন টিতে এম এস কোর্সে।ভর্তি হতে চল্লিশ হাজার টাকার ভয়ংকর ধাক্কা।ধার দেনা, জমানো টাকা দিয়ে কোন ভাবে ভর্তি হয়ে যান।মাসে তখন দশ হাজার টাকা করে পেতেন এতেই খুশী অসীম ভাই।সাদাসিধা মানুষের সরল চাওয়ায় কষ্ট হয়না তার।এর মাঝে একবার শুনেছিলাম,সেই ভাতাও বন্ধ করে দেয়া হয়,পরে তা চালু হইছিলো কিনা আমার জানা নাই।
জীবন যখন ধীর গতিতে চলছে, তখন সবচেয়ে বড় কস্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বিয়ের অনেক বছর পর তাদের বাচ্চা হচ্ছিলো না।তার চিকিৎসার পিছনেও প্রচুর খরচ,তাছাড়া সময়ও দিতে হয় ডাক্তার,ডায়াগ্নোসটিক সেন্টারে ঘুরে ঘুরে।উনি পড়াশুনার মাঝে সেইখানে সময় করে উঠতে পারছিলেন না।বেশ কয়েকবার ফাইনাল পরিক্ষা খারাপ হয়।একবারে থিসিস কম্পলিট হলেও বেশ কয়েকবার ক্লিনিক্যালি খারাপ হয়ে যায়।লাস্ট কয়েকবার অস্পিতে খারাপ করে হতাশায় ভেঙে পরেন।কিছুদিন আগে শুনলাম,ভাইয়া এমএস পাশ কম্পলিট করে গেছেন।খুব খুশী হই শুনে।পাশ করার পরেই উনি ইন্ডিয়া চলে যান ভাবীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্যে।নিন্দুকেরা এখানে বলবেন ডাক্তার হয়ে কেন ইন্ডিয়া গেলেন তিনি?ভাই,আমার খুব প্রিয় মানুষের যদি তেমন কিছু হয় আমি ফকিরের কাছে ঝাড়ফুঁক করতেও যাবো।
কিন্তু ইন্ডিয়া থেকে তেমন কোন আশ্বাস পাননি।ভাইয়া কয়দিন আগে এক প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে ঢুকেছেন।#পোস্টগ্রাজুয়েশান কম্পলিট হইলেও চাওয়া কি তার শেষ হয়ে গেছে?সামনে বাবা ডাক শোনার অনিশ্চয়তা,তাছাড়া শুধু চাকরী টাকায় প্রয়োজন মিটে কিন্তু সাধ আহ্লাদ। বয়স এখন ৪৬ তার।
উপরোক্ত কাহিনী একটুও বাড়িয়ে বলা হয়নি।একই কাহিনী এদিক সেদিক করলেই অনেকের জীবনের কাহিনী হয়ে যায়।
যার শেষে ডিগ্রী কম্পলিট করতে গিয়ে অনেকেই ঠিক সময়মত বিয়ে করতে পারেন নাই,বিয়ে করলেও বিয়ে টিকাতে পারেন
নাই,বিয়ে টিকলেও বাচ্চা হয়নি,বাচ্চা হলেও বাচ্চা দেখাশুনা নিয়ে খিচাখিচিতে অসুস্থ বাচ্চা জন্ম নিয়েছে,বা সুস্থ বাচ্চা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়েছে,কারো সব ঠিক থাকলেও প্রাক্টিস জমে উঠেনি।মোট কথা একটা #পোস্টগ্রাজুয়েশন জীবনের মুল্যবান সময়টুকু কেড়ে নিয়েছে অনেকের,কে তার খবর রাখে?
আপনারা যখন একটা ডাক্তারে গাড়ি বাড়ি দেখে চোখ উল্টান তারা জানেন না তার পিছনে থাকে কত কস্টের ইতিহাস?
_____________________________
ডা. মিথিলা ফেরদৌস । সুলেখক।
আপনার মতামত দিন: