Ameen Qudir

Published:
2017-07-30 01:54:14 BdST

নারীগন, বিদেশে চাকুরী নামক ফাঁদ থেকে নিজেদের বাঁচান


 


ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী

_________________________________________

বছর দশেক আগের কথা।সপ্তাহ দুয়েক এক এনজিও র সাথে কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছিল।ওরা যৌনকর্মীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিত।ডাক্তারের কাজ ছিল হিষ্ট্রি নিয়ে ট্রিটমেন্ট প্লান বলা।
রুগীনি রুমে ঢুকতেই সেদিন একটু চমকে গেছিলাম আমি।দামী বোরখা,বেশ সাজগোজ সাথে পারফিউমের উগ্র গন্ধ।

 


কিছুক্ষন কথা বলেই মনটা ব্যথিত হলো আমার।রুগীনি তার রুগ্ন স্বামী আর চার সন্তান নিয়ে ভীষন অর্থকষ্টে ভুগছিলেন।এক আত্মীয় তাকে বিদেশে যাবার কথা বললে উনি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন।স্বামী তার প্রায় বন্ধ থাকা পানের দোকান বিক্রি করে তাকে বিদেশে পাঠান।কথা ছিল তিনি গৃহকর্মীর কাজ করবেন।কিন্তু ঐ দেশে যাবার পর থেকেই শুরু হয় শারিরীক নির্যাতন।তাকে গৃহকর্মী নয়।যৌনকর্মী হিসেবে নেয়া হয়েছে।প্রথম প্রথম প্রতিবাদ করে মার খেত।শেষে এই দুর্ভাগ্য কে মেনে নিয়েছে।এখন সে দেশে আসে প্রতি বছর।এদের থেকে চিকিৎসা নেয়।ভাল আয় করে।ছেলেমেয়ে ভালো খায়, ভালো কাপড় পরে,পড়াশুনা করে।স্বামী চিকিৎসা করে সুস্থ।দেশে ফিরে উনি কাউকে কিছু বলেননি।সে দেশে দেশী বিদেশী সব রকমের ক্লায়েন্ট আসে।দেশীরা নাকি সুখ দুঃখের গল্প ও করে!

 

 

এই ঘটনা আমাকে স্তব্ধ করেছিল।আরো স্তব্ধ হলাম বছর দুয়েক আগে।বরিশালের খুব কাছাকাছি এক এলাকা থেকে সাংবাদিক গন এনেছিল মেয়েটিকে।তের বা চৌদ্দ বছর তার বয়স।বাবার সাথে তালাক হবার পর মা তাকে নিয়ে নানার বাড়ীতে আসে।কিছু দিনের মধ্যে মা আবার বিয়ে করে।এই ঘরে দুই ভাই বোন ছোট রেখে মা বিদেশ চলে যায়।বাড়ীতে নানী,সৎ বাবা এবং দুই ভাই বোন।মা বিদেশে কাজ করে সৎ বাবার কাছে টাকা পাঠায়।সৎ বাবা কোন কাজ করে না।ঐ টাকা দিয়ে সংসার চালায়।মা চলে যাবার অল্প দিনের পর থেকেই সৎ বাবা প্রতি রাতে অমানুষিক শারিরীক নির্যাতন চালায় তার উপর।মেয়েটির কোন চাহিদা এই পশু অপূর্ন রাখে না।শুধু প্রতিরাতে একাধিক বার পশুর মত ভোগ করে এই শিশুটিকে।ওর জন্মদাত্রী মায়ের বিদেশ বসে কষ্টার্জিত টাকায় জীবন ধারন করে প্রতিনিয়ত ওকেই ধর্ষন করে চলছে ঐ হায়ানা টা।

 


সম্প্রতি বেশ সংখ্যক নারীদের বিদেশ নেয়ার এবং পরবর্তীতে অনেকের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা সামাজিক এবং বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে।দিনভর গৃহের সব কাজ এবং রাতে বাড়ীর পুরুষদের দ্বারা গন নির্যাতনের খবর ও এসেছে।কিছু ভিডিও ও প্রকাশিত হয়েছিল বেশ কিছুদিন আগে!

বিষয়টি আমাকে প্রচন্ড আহত করছে বার বার।

 

এই সময়ের বাংলাদেশে একজন নারীর সদিচ্ছা এবং পরিশ্রম থাকলে সৎ এবং সম্মানজনক জীবিকা নির্বাহ খুব কঠিন নয়।তবে কেন নিজের সম্ভ্রম এবং নিরাপত্তার চিন্তা না করে কেবল একটু বেশী আর্থিক সচ্ছলতা পাবার আশায় এই অনিশ্চিতের পথে যাত্রা?

সব নারীদের জন্য আমার ছোট্ট পরামর্শ।সততার সাথে আত্মনির্ভরশীল হোন।নিজেকে সম্মান করুন।যে আপনাকে সম্মান করে তার জন্য সর্বোচ্চ করুন।যে বা যারা আপনাকে অসম্মান করে তাদের ত্যাগ করুন।

তাই আপনার নিজের এবং সন্তানের,বিশেষত কন্যা সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়ে কেবলমাত্র আর্থিক লাভবান হতে এই ধরনের ফাঁদে পা দিয়ে জীবন নরক বানাবেন না প্লীজ।অর্থাভাবে জীবন কষ্টকর হলেও কেটে যায়।কিন্তু সম্ভ্রমের বিনিময়ে কেনা স্বচ্ছলতা চিরতরে আপনার রাতের ঘুম কেড়ে নিবে।

তাই অসহায় নারীগন সময় থাকতে সাবধান হোন।এই ধরনের ফাঁদে পা দেয়ার আগে একবার ভাবুন।।
(বিঃ দ্রঃ নাম,ঠিকানা,দেশ হাইড করেছি রুগীদের প্রাইভেসীর জন্য)

____________________________________________________

Dr.Sherin Sabiha Tonny
Barisal

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়