Ameen Qudir
Published:2017-06-11 16:28:00 BdST
ওসিডি ডায়েরি :১২৭ বছরের বিবাহিত জীবনে কোন রোমান্টিক দৃশ্য তার মনে পড়ে না: শুধু অবহেলাই পেয়ে গেলেন
ওসিডি ডায়েরি :১
ডা. সুলতানা আলগিন
____________________________
পঞ্চাশোর্ধ এক দম্পতি এলেন । দুজনেই নিজ নিজ পেশায় প্রতিষ্ঠিত।দেখতেও সুদর্শন। চেম্বারে ঢুকেই স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে যতরকম দোষারোপ করা যায় এক নিশ্বাসে বলে গেলেন। এই ২৭বছরের বিবাহিত জীবনে কোন রোমান্টিক দৃশ্য তার মনে পড়ে না । শুধু অবহেলাই পেয়ে গেলেন। এর বিচার আমাকে এই মুহূর্তে করতে হবে।
স্বামীর কাছে জানতে চাইলাম ব্যাপার কি ? এত অবজ্ঞা কেন ? উত্তরে জানালেন সবই ঠিক। পেশার কারণে আমাকে বাইরে অনেক বেশী সময় দিতে হয়। আমার স্ত্রী সংসারটাকে সন্তান দুটোকে আগলে রেখেছে। নিজ হাতে রান্না করে খাইয়েছে । অন্যের হাতের কাজ রান্না বান্না তার পছন্দ নয় ।
অফিস থেকে ফিরে সময় যতটুকু পায় রান্নাঘর বাথরুম আলমারী ফার্নিচার ঘরের কোনাকানচি নিয়েই ব্যস্ত থেকেছে সেই শুরু থেকেই।
স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। তাই বাসায় এসে একসাথে চা নাস্তা খাওয়া আড্ডা দেওয়া বাইরে ঘুরতে যাওয়া আর হয়ে ওঠে নাই। স্বামী বললেন, আর আমিও বাইরের কাজে বেশী ব্যস্ত হয়ে গেলাম। ওর তিরিক্ষি মেজাজকে সত্যি বলতে এড়িয়ে চলেছি।
স্ত্রীও জানালেন সবই সত্যি । আমি বিশৃঙ্খলা পছন্দ করি না । অগোছালো জিনিষপত্র,ঘরদোর দেখলে আমি মেজাজ ধরে রাখতে পারি না । আমার মেজাজও দিনে দিনে রূক্ষ হয়ে উঠেছে। অন্যকে দোষারোপ করাই এখন আমার শান্তি। মনে হয় জীবনটা শুধুশুধু কেন সংসারের পেছনে নষ্ট করলাম। কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত থাকলে ভাল হতো।
সব শোনার পর যখন বললাম স্ত্রীটি শুচীবাই বা ওসিডি রোগে ভুগছেন বিয়ের আগে থেকেই । তার এই আচরণ এই রোগেরই লক্ষণ। প্রথমে উনি তা মেনে নিতে পারেন নাই।
পরে যখন বললাম সময় দিতে হবে দুজনকেই। শতব্যস্ততার মাঝেও নিজেদের জন্য সময় বের করতে হবে। সংসার দুজনার। সব দায়িত্ব একার কাঁধে নেয়ার মত বোকামি হয় না । কোয়ালিটি টাইম পেতে দুজনকেই সমানভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এই ওসিডি রোগের চিকিৎসা সম্ভব। সুস্থ হওয়া সময়ের ব্যপার মাত্র। শুধু রোগটা সম্পর্কে ধারণা আর চিকিৎসা নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।
____________________
প্রিয় সুজন ,
আপনি কি অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই রোগে
ভুগছেন ?
একটু সময় দিতেই হবে আপনাকে আপনার ও সকলের স্বার্থে। প্রশ্নগুলো পড়ুন অনুগ্রহ করে।
১।আপনি কি অতিরিক্ত ধোয়া-মোছা করেন অথবা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন?
২।আপনি কি কোন কিছু অতিরিক্ত চেক/ যাচাই-বাছাই করেন?
৩। আপনার মাথায় কি কোন অপ্রীতিকর/ অনাকাঙ্খিত চিন্তা আসে ? যা কিনা আপনি চাইলেও মাথা থেকে সহজে বের করতে পারেন না ?
৪।আপনার কি দৈনন্দিন কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়?
৫। আপনার মধ্যে কি আসবাবপত্র, বই খাতা, কাপড়-চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখার প্রবণতা আছে ?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর যে কোন একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ বোধক হয় তবে মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।
লেখার সৌজন্য
ওসিডি ক্লিনিক । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রতি মঙ্গলবার ।
____________________________
ডা. সুলতানা আলগিন । সহযোগী অধ্যাপক , মনোরোগবিদ্যা বিভাগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
আপনার মতামত দিন: