Ameen Qudir

Published:
2017-06-11 13:10:11 BdST

এই বৃদ্ধ চিকিৎসক প্রায় কেন আক্রান্ত, ক্ষতবিক্ষত



ডা. রেজাউল করীম
_______________________________

১৯৯০ র ১৬ ই আগষ্ট। লালু আলম নামে এক গুণ্ডার আক্রমণে বাংলার তৎকালীন যুবনেত্রী আক্রান্ত হন। তাঁর উপর সে আক্রমণ বাঙালীর বিবেককে কে ক্ষতবিক্ষত করেছিল। তারপর সেই নেত্রী যেখানে গেছেন, মানুষ দুহাত তুলে তাকে সমর্থন করেছে। আজ বাংলার মসনদে সেদিনের সেই আক্রান্ত মহিলা।

আজ এক বৃদ্ধ চিকিৎসক প্রায় একই ভাবে আক্রান্ত ক্ষতবিক্ষত। বাঙালীর সেই জাগ্রত বিবেক কোথায়? নাকি দুজন নির্যাতিত মানুষের গুনগত কোন ফারাক আছে? দুজনেরই রক্ত ঝরেছে- একজন জনগনের সেবার প্রশিক্ষন নিয়েছেন আর মনপ্রাণ ঢেলে সেই কাজটিই করেছেন। সুভদ্র, সদালাপী এই বৃদ্ধের দোষ কী? অন্যজন পেশাদার রাজনীতিক- তিনিও জনসেবার শপথ নিয়েছিলেন। এখানে নাম গৌন, মুখ্য হল তাদের নিগ্রহের গুন ও পরিমাণগত সামঞ্জস্য।

 

সেদিনের সেই আহত মহিলা এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী- সারা রাজ্যের মানুষ তাকে "দিদি" সম্বোধনে ভূষিত করেছেন। অথচ, তাঁর রাজত্বে একের পর এক চিকিৎসকরা আক্রান্ত হচ্ছেন। গত তিনমাসে পাঁচজন চিকিৎসক আক্রান্ত ও নিগৃহীত হয়েছেন। রানাঘাটে চিকিৎসকের বাড়ী ভাঙচুর করে তাঁর স্ত্রীকে শাবল দিয়ে খোঁচানো হয়েছে। গুসকরায় একজন চিকিৎসককে নির্দয়ভাবে পেটানো হল। তারপর ফলাও করে নির্যাতনের ভিডিও নানা জায়গায় ছড়ানো হল। দুটি ঘটনায় কেউ ধরা পড়ল না। জেলাশাসক বললেন গুসকরায় আততায়ীদের চিহ্নিত করা হয়েছে, দুদিনের মধ্যে তাদের ধরা হবে। কিছু করা হল না। আমরা নতুন করে আমাদের দাবী চিঠি লিখে জেলাশাসক ও স্বাস্থ্য আধিকারীকদের জানালাম। কোন পদক্ষেপ নেওয়া দূর অস্ত, চিঠির প্রাপ্তি স্বীকারেরও সৌজন্য তারা দেখালেন না। রামপুরহাট ও লালগোলায় ঘটনারও একই রকম প্রতিক্রিয়া। অথচ, আইন আছে। চিকিৎসক নিগ্রহে তিনবছরের জেল ও ৫০০০০ টাকা জরিমানার সংস্থান আছে। জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হওয়ার কথা। মামলা হয় না। গুসকরায় অভিযোগপত্র পুলিশ নিতেই চায় নি। আজকের ঘটনাতেও একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি। অথচ, কারনে অকালে ডাক্তারদের থানায় ডেকে নিয়ে পুলিশ জেরা করছে। দার্জিলিং এর ঘটনায় পুলিশ চিকিৎসককে তুলে নিয়ে থানায় বসিয়ে রাখল। কুমার অতনু কেসে বিনা কারনে 304 ধারায় মামলা করা হল।

 

তাহলে কে খুন করার চেষ্টা করছে? যিনি ওষুধ দিয়ে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারলেন না তিনি খুনের আসামী আর অন্য একজন খুন করতে পাথর ছুঁডে মারল, কপালের জোরে চিকিৎসক বেঁচে গেল। খুনের মামলা হল না, উল্টে থানার ছোট অফিসার প্রশ্ন করলেন, কেন রোগী মারা গেলেন? বলি হচ্ছেটা কী? সারা রাজ্য জুড়ে এই গুণ্ডাগিরি এই কী কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি এ পরিকল্পিত চক্রান্ত। বাঙলার সব গর্বের জিনিস, তার সুপ্রাচীন ঐতিহ্য সব কিছু ভেঙে গুঁডিয়ে তছনছ করে দাও। রাজনীতি কী তবে মনুষ্যধর্ম বিবর্জিত কোন আদর্শহীন সুবিধাবাদ আর নিরিহ চিকিৎসকরা কোল্যাটারেল ড্যামেজ!!
________________________________

ডা. রেজাউল করীম । পশ্চিম বাংলার প্রখ্যাত চিকিৎসক । মানবসেবী। কবি ও কল্যাণ কলামিস্ট।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়