Ameen Qudir
Published:2017-06-08 20:06:25 BdST
আসুন নারী শিশু এবং অসহায়ের সহায়তাকারী সমাজ গড়ি
ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী
____________________________
সারি বাধাঁ অনেক ঘরের মাঝখানে একটা ঘর।বেশ অগোছালো।প্রশস্ত এক চৌকিতে বিছানা পাতা।নীচে মেঝেতে গৃহকর্ত্রীর লাশ মোটা পাতার পাটিতে পেঁচানো।
আমি স্তব্ধ হয়ে টিভি স্ক্রীনে দেখছিলাম।
তিন কন্যার জননীকে তার রিকশাওয়ালা স্বামী মাদক সেবনের টাকা না দেয়ার অপরাধে গলা টিপে হত্যা করেছে।
আমি বিশ্বাস করি এই পৃথিবীর সবথেকে বর্বর,নৃশংস এবং অপরিনামদর্শী প্রানী হলো মানুষ।
স্থান কাল পাত্র অবস্থা ভেদে আমরা সকলেই জীবনের কোন না কোন সময়,কারো না কারো সাথে হয়ত অনেকটা হিংস্রতাই করে থাকি।
কিন্তু এই হিংস্রতা যখন সীমা ছাড়ায়??
আমি নিউজ টা শুনে কেবল ই ভাবছিলাম,মাদকসেবী বাবা এখন খুনী।মা উপার্জন করে তিন মেয়ের খাওয়া পড়া জোটাত।নিরাপত্তা দিত।এমন মায়ের মৃত্যুতে এই মেয়ে তিনটা কতটা অনিশ্চয়তা,নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পরেছে তা কি ওদের জন্মদাতা জানে??
কত ধরনের নির্যাতন না জানি ওদের জন্য অপেক্ষা করছে।
আমার প্রশ্ন অন্যত্র।
প্রতিবেশীদের ভাষ্যমতে মাঝে মাঝেই টাকার জন্য স্বামীটি তার স্ত্রীকে মারধর করত!
এই মাদকসেবী,অত্যাচারী,কর্মবিমুখ,দায়িত্বহীন পুরুষটিকে এতদিন ধরে স্বামী হিসেবে রেখে তার কি পুরস্কার এই নারী আর তার তিন মেয়ে সন্তান পেল??
আমি কসম কেটে বলতে পারি,ওর মৃত্যুর একদিন আগেও কিংবা এখন ও ওর অতৃপ্ত আত্মার সাক্ষাৎকার যদি আমি নেই।
কেন তুমি এই অত্যাচারী স্বামীর অত্যাচার সহ্য করেছ?কেন ছেড়ে গেলে না??
এই প্রশ্নের উত্তরে নিশ্চয় ই বলত,স্বামী না থাকলে সমাজ আমার দিকে আঙ্গুল তুলত!
চরিত্রহীনা বলত!
কামুক দুশ্চরিত্র পুরুষ গুলো ছোঁক ছোঁক করত!বাপ মা বলছে,স্বামীর হাতে মাইর খাইলে মাইরের জায়গা গুলো বিনা হিসেবে বেহেশতে যাইবে।ভাইয়েরা বলছে,সংসার ভেঙ্গে আমাদের ঘাড়ে আইস্যা পরলে আমাদের সংসারে অশান্তি হবে বোন।
পাড়ার বৌ ঝিরা হাটে বাজারে কটু কথা শোনাত।ভদ্র বাসায় সম্মান নিয়ে কাজ করতে পারতাম না।
ওর অতৃপ্ত আত্মার সাক্ষাৎকারের প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য।
তাহলে একটু ভেবে দেখুন তো এই গৃহবধুটি,তিন মেয়ের মায়ের খুনী কি কেবল ওর মাদকসেবী স্বামী??
আপনি,আমি,এই সমাজ, ওর বাবা মা,আত্মীয় পরিজন,প্রতিবেশী আমরা সকলেই কি খুনী নই??
স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমরা কি শিশু বান্ধব,নারী বান্ধব কিংবা অসহায়ের সহায়ক একটা সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পেরেছি??
আমরা সবাই ই মনস্তাত্বিক খুনী ,অত্যাচারী।
সমাজে যে যেখান থেকে নারীর উপর চড়াও হোক,অত্যাচার করুক - সেটা শারিরীক,মানসিক,সামাজিক যাই হোক না কেন,আমরা কখনোই নারীর পাশে দাঁড়াই না।তাকে শক্তি সাহস যোগাই না।
বরং আমরা আমাদের হীনমন্যতা আর নোংরামির ভয় ভীতি দেখিয়ে বার বার রক্তাক্ত করি অত্যাচারিত নারীকে,তার পরিবারকে তার সন্তানদের।
যখন নারীটির আত্মবিশ্বাস তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হতে পারে,তখন তার আত্মবিশ্বাস শূন্যতে নামিয়ে দি।
তার ফলে নারীটি মেরুদন্ড সোজা করে মানুষ হয়ে উঠতে পারে না।মানুষের মত ডিসিশন ও নিতে পারে না।অবলা প্রানীর মতো পরে পরে মার খায়।
একটা সময় সন্তানদের মাতৃহারা আর বাবা মাকে সন্তান হারা করে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।
এই যাওয়ার দায় আমাদের সকলের!
তাই নিজের ভাগের দায়টুকু এড়াতে পারিবারিক হিংস্রতাকে না বলুন।হিংস্রকে ঘৃনা করুন।আর নারী,শিশু এবং অসহায় বান্ধব সমাজ গড়ুন।
_________________________
ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী
#বরিশাল লোকসেবী চিকিৎসক ও কথাশিল্পী ।
আপনার মতামত দিন: