Ameen Qudir

Published:
2017-05-31 19:33:03 BdST

যে গল্প ত্রাসের, যে গল্প দুঃসাহসের



মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
___________________________________

১। মরোক্কোর নাগরিকরা ঐতিহাসিকভাবে ধর্ম পরায়ণ, শান্তিপ্রিয়। ধূর্ত ইউরোপীয়রা সেই সুযোগে বারবার মরোক্কো দখল করেছে। সবশেষে দুই প্রতিবেশী দেশ স্পেন ও ফ্রান্স কূট কৌশলে দীর্ঘসময় এই দেশ দখলের পর ভাতৃপ্রতিম দুই মুসলিম জনগোষ্ঠী সাহারাউই এবং মরোক্কোবাসীদের মধ্যে বিবাদ লাগিয়ে চলে যায়। তার পরিনামে ওয়েস্টার্ন সাহারা অঞ্চলের আদিবাসী সাহারাউই এবং তাদের সশস্ত্র সংগঠন পোলিসারীয় এবং মরোক্কোর রাজকীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বলি হতে হয় হাজারো মরুবাসীকে।

২।জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রক্তপাত বন্ধ হয় এবং দুই দলের মধ্যে শান্তিচুক্তি সাধিত হয় বেশ কয়েক বছর আগে। সম্প্রতি, মরোক্কো আর মৌরিতানিয়ার সীমান্তের 'বাফার স্ট্রিপ '( no man's zone )এ মরোক্কো সেই চুক্তি ভংগ করে ' স্থায়ীভাবে পাকা রাস্তা ' তৈরী করছে এই অভিযোগ এনে সশস্ত্র পোলিসারিওরা তাদের পতাকা উড়িয়ে সামরিক অবস্থান নিলে মরোক্কোও সেই এলাকায় সৈন্য নিয়োগ করে। মুখোমুখি হয় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের আশংকায় জাতি সংঘ বহুজাতিক শান্তিরক্ষী প্রেরণ করে। প্রায় মাস তিনেক আগে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় অন্যদের সাথে আমিও এম আই -৮ নামক রাশান হেলিকপ্টারে এখানে আসি।

৩।আবাস হয় 'হোটেল বারবাস ' এ। প্রতিদিন সূর্য উঠবার সাথে সাথে প্রায় ১০০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে ' জুলু ২৪' নামের এই অঞ্চলে আসি। মরোক্কোর শেষ সীমা নাগাদ আমাদের গাড়িতে মরোক্কোর নম্বর প্লেট লাগানো থাকে। তারপর সেটি বদলিয়ে জাতি সংঘের প্লেট লাগাই। সামরিক পোশাক পরা থাকলেও শেষসীমায় আমাদেরকে আইডেন্টিটি কার্ড দেখিয়ে ঢুকতে হয়। মুখোমুখি হওয়া যুদ্ধংদেহী দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মাঝখানে আমরা অবস্থান নেই।

৪।তারপরের গল্প বলা সহজ, উপলব্ধি কঠিন। দুই উত্তেজনাময় মুখোমুখি প্রতিপক্ষের মাঝখানে অবস্থান নেয়ার ঝুঁকি প্রকাশের শক্তি আমার কলমের নেই। যে কোন সময় যে কোন দলের পক্ষ হতে কিছু করা হলে তার প্রথম 'ভিক্টিম' হব আমরা। দুই বিবাদমান প্রতিপক্ষের মাঝখানে কেউ থাকলে কোনপক্ষই তাদের বিশ্বাস করে না। আমাদের অবস্থাও হয়ত তাইই। সূর্য ডুবলে এরা অলিখিত' শান্তিচুক্তি 'মেনে চলে। তাই আমরাও হোটেলে ফিরে আসি। আসবার আগে পোলিসারীয় যোদ্ধা এবং মরোক্কোর রাজকীয় সেনাদের কাছে পৃথক পৃথক আলোচনায় জেনে নেই নুতন কোন অভিযোগ আছে কি না।তারপর সঠিক প্রতিবেদন (O K Report ) নেয়া হয় ।সবশেষে সামরিক কায়দায় পরস্পরকে সামরিক কায়দায় স্যলুট করে দিনের ডিউটির সমাপ্তি টানি ।

৫।আমরা পাঁচজন।রাশান চৌকস দলনেতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলেক্সি,মিশরীয় আর্মির স্পেশাল ফোরসের মেজর আহমেদ, মালয়েশিয়ান মেজর রামলে, ফ্রান্সের তরুণ ক্যাপ্টেন ফ্রাসোয়া , এবং আমি প্রতিদিন সকালে এই যমপুরীতে আসি, রক্ত মাংস অস্থিমজ্জা সচল আছে এই আশায় সূর্যোদয়ের পর আবার ১০০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে ডেরায় ফিরে আসি।

৬।প্রতিদিনই মুখোমুখি অবস্থান নেয়া দুইদলই পাঁচদেশীয় আমাদের এই পাঁচজনের সাথে কথা বলছে। হয়ত তাদের গোপন প্রতিবেদনে তাদের হেড কোয়ার্টারকে আমাদের নাম - জাতীয়তা জানাচ্ছে,পাঠিয়ে দিচ্ছে গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও । আবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এই পাঁচদেশীয় পাঁচজনের দলের অন্যতম বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে আমার নামও যাচ্ছে।

৭।প্রিয় ধরিত্রী মাতা, তোমাকে স্যালুট। তোমার আশিসে এই ত্রাসের রাজ্যে শান্তিরক্ষীর দুঃসাহসী কাজে এক বংগ সন্তান, এই আমিও অংশগ্রহণকারী হবার সুযোগ পেয়েছি।

 

__________________________

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ । সম্প্রতি

আর্মড ফোরসেস ফুড এন্ড ড্রাগ ল্যাবরেটরির উপ অধিনায়কের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন। ঐতিহ্যবাহী এই ইউনিটটি সেনা, নৌ,বিমান বাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীতে ব্যবহারকৃত সকল খাদ্যসামগ্রী এবং ড্রাগ তথা ওষুধ পথ্য পরীক্ষা - নিরীক্ষা করে ব্যবহারের উপযুক্ততা/ অনুপযুক্ততা নিরুপন করে।

এর আগে ছিলেন আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজএ ।
ওয়েস্টার্ন সাহারায় শান্তিরক্ষী হিসেবে সফলভাবে এক বছরের কাজ শেষে আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়