Ameen Qudir
Published:2017-05-09 16:02:40 BdST
মেয়েদের ওষুধ লাগে না, চিকিৎসা লাগে না,একা একাই ভালো হয়ে যায়
ডা. রাজীব দে সরকার
__________________________________
একজন শিক্ষক এলেন আমার চেম্বারে।
সাথে তাঁর ৯ বছরের ছেলে। জ্বর সর্দি-কাশি। ৩/৪ দিন ধরে।
সবকিছু দেখে শুনে প্রেসক্রিপশন লিখে দিলাম। এরপর উনি গল্প শুরু করলেন। অনেক গল্প। শিক্ষকদের গল্পের ঝুড়ি হয়তো বড়ই হয়।
গল্পের এক ফাঁকে বললেন, তাঁর ৭ বছর বয়সের মেয়েটাও অসুস্থ। জ্বর ঠান্ডা কাশি। শ্বাসটানেরও সমস্যা আছে।
- "তবে ডাক্তার সাহেব আমার মেয়েটা বড় ভালো। অসুখ হলে ওকে ওষুধ খাওয়াতেই হয় না। ৩/৪ দিন পর একা একাই ভালো হয়ে যায়। ওষুধ পত্র কিছুই লাগে না।"
আমি বুঝতে পারলাম, উনি তার মেয়েকে ডাক্তার দেখান না। ওষুধও খাওয়ান না। কারন একটাই। উনি মনে করেন ওনার মেয়ে একা একাই ভালো হয়ে যায়।
ছেলে এবং মেয়ে। দুটো সন্তানই তাঁর। অথচ এখানেও তাঁর আচরণে সমতা নেই। অথচ তিনি নিজে একজন শিক্ষক। প্রগতিশীল সমাজের মুখপাত্র তিনি।
এই মানসিকতা আমাদের অনেক পরিবারেই আছে। মেয়েদের অসুখটা অসুখ না।
মেয়েদের ওষুধ লাগে না। চিকিৎসা লাগে না। কারন তারা একা একাই ভালো হয়ে যায়। অদ্ভূত যুক্তি। অথচ এই যুক্তির কাছে অনায়াসে পরাজয় বরণ করে বসে থাকে আমাদের শিক্ষা, সভ্যতা, মমতা।
আমরা এটা ভাবতেই ভালোবাসি- "আমাদের মেয়েদের কখনো অসুখ হবে না"। আমাদের মায়েরা কাজ করতে থাকলেও তাদের ক্লান্তি আসবে না। গায়ে জ্বর থাকুক কিংবা কাশি, সেগুলো মামুলি ব্যাপার।
দাস প্রথা উঠে গেছে অনেক বছর আগে। অথচ আমাদের অজান্তেই আমরা মনে মনে দাসবৃত্তির চর্চা করি। পরিবার এর ড্রয়িংরুম থেকে রান্না ঘর - দাসপ্রথার মোডিফাইড সংস্করণ অজান্তেই চাষ করি।
সভ্যতার ছন্দে হাতে অ্যান্ড্রয়েড থাকলেও অন্তরে আমরা আজও সেই অনার্য্য, অন্তরে আজো আমরা বস্ত্রহীন গুহাবাসী।
আমি চেম্বারে বসে উপলব্ধি করলাম, আমি একজন অসুস্থ ছেলের সামনেই শুধু বসে নেই।
আমি দু'জন অসুস্থ মানুষকে সামনে নিয়ে বসে আছি।
একজনকে আমি চিকিৎসা দিয়েছি অনায়াসে,
দ্বিতীয় জনের চিকিৎসা এই চিকিৎসকের জানা নেই।
_____________________________
ডা. রাজীব দে সরকার
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা।
আপনার মতামত দিন: