Ameen Qudir

Published:
2017-05-09 14:51:05 BdST

রবিঠাকুর আমার অন্তরের দেবতা


 

 

 

 

ডা. রেজাউল করীম
________________________________

 

রবিঠাকুর আমার অন্তরের দেবতা। মানুষ তার জীবনব্যাপি মনুষ্যত্বে উত্তরণের আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে। কখনো দস্যু রত্নাকর, কখনো বাল্মীকি হয়ে সে নিজেকে খুঁজে পেতে চায়।

দিগভ্রান্ত মরুরাশির মায়া-মরিচিকায় পথভ্রান্ত হয়ে তার অন্তর-পিপাসা বেড়ে চলে, তাই পানের অযোগ্য মদিরা পান করে মত্ত হয়- সেই মদমত্ততাকেই সে ধর্ম বলে মনে করে।

 

মুসলমানের ধর্মে আচার সর্বস্বতা আর নিয়মের আধিক্য আছে। নিষ্প্রান ধর্মীয় আচার দিয়ে স্বর্গ লাভের উপায় বলে মনে করা হয়। মুহম্মদ হেরা পর্বতের নির্জনতায় ঈশ্বরকে অনুভব করেছেন, মুসাকে তুরের চূডায় উঠে ঈশ্বরের জ্যোতি অনুভব করতে হয়েছে। কাবাগৃহ পুনরুদ্ধার করে তিনি সেখানে কোন মসজিদ নির্মান করেন নি। তিনি আব্রাহাম-পদধন্য মাকামে ইবরাহিমকে কাবার অংশ হিসেবে গ্রহন করেছেন। আরবদের চিরায়ত সমস্ত উৎসব, আচার, সামাজিকতাকেই পুন:প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি নিজে কোন নতুন ধর্মের অবতারনা করার দাবী করেননি। তাঁর ঈশ্বর ইব্রাহিমেরও ঈশ্বর। তিনি যে একটি বিশিষ্ট নামে ঈশ্বরকে ডাকতে চাননি তার প্রমান হল তার ঘোষনা- তোমার ঈশ্বর ইব্রাহিম-মুসা-ইশার ঈশ্বরের থেকে আলাদা আলাদা নয়। সারা বিশ্বব্যাপি ইসলামের নামে যে রক্তপাত চলছে তা ঈশ্বরের সৃষ্টিকে শুধু যে ধ্বংস করছে তাই নয়, তা মানুষের মধ্যে যে ঈশ্বরের জ্যোতি আছে তাকে প্রতি মূহুর্তে লাঞ্ছিত করছে। তাই মোল্লাতন্ত্রের হাত থেকে ইব্রাহিমের ঈশ্বরকে মুক্ত করতে হবে।

 

এদেশে ঈশ্বর লাভে রবীন্দ্রনাথের আদর্শ নিয়ে আমি গর্বিত। মুহম্মদের ঈশ্বর আর রবীন্দ্রনাথের ঈশ্বরের মধ্যে আমি কোন পার্থক্য দেখি না। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন
"ভারতবর্ষের ব্রহ্মবিদ্যার মধ্যে আমরা দুইটি ধারা দেখিতে পাই , নির্গুণ ব্রহ্ম ও সগুণ ব্রহ্ম , অভেদ ও ভেদাভেদ । এই ব্রহ্মবিদ্যা কখনো একের দিকে সম্পূর্ণ ঝুঁকিয়াছে , কখনো দুইকে মানিয়া সেই দুইয়ের মধ্যেই এককে দেখিয়াছে । দুইকে না মানিলে পূজা হয় না , আবার দুইয়ের মধ্যে এককে না মানিলে ভক্তি হয় না । দ্বৈতবাদী য়িহুদিদের দূরবর্তী দেবতা ভয়ের দেবতা , শাসনের দেবতা , নিয়মের দেবতা । সেই দেবতা নূতন টেস্টামেন্টে যখন মানবের সঙ্গে এক হইয়া মিশিয়া আত্মীয়তা স্বীকার করিলেন তখনই তিনি প্রেমের দেবতা ভক্তির দেবতা হইলেন । বৈদিক দেবতা যখন মানুষ হইতে পৃথক তখন তাঁহার পূজা চলিতে পারে কিন্তু পরমাত্মা ও জীবাত্মা যখন আনন্দের অচিন্ত্যরহস্যলীলায় এক হইয়াও দুই , দুই হইয়াও এক , তখনই সেই অন্তরতম দেবতাকে ভক্তি করা চলে । এইজন্য ব্রহ্মবিদ্যার আনুষঙ্গিকরূপেই ভারতবর্ষে প্রেমভক্তির ধর্ম আরম্ভ হয় । এই ভক্তিধর্মের দেবতাই বিষ্ণু ।" দারাশুকো তার সপ্ত সমুদ্রের মহামিলনে ঈশ্বরের দ্বান্দ্বিকরূপের ব্যাখা করে অবশেষে ভক্তিকেই ঈশ্বর লাভের উপায় হয়ে গ্রহন করেন। আমাদের মত নগন্য প্রান কি ভাবছে তার যথার্থ কোন মূল্য নেই। কিন্তু আমার হৃদয় যে ঈশ্বরকে গ্রহন করেছে তা প্রেমের ঈশ্বর। আর প্রেমের ধর্ম হল সে সোচ্চারে সারা পৃথিবীকে তার প্রেমের কথা বলতে চায়। মানবের ক্ষুদ্র প্রেম আর ঈশ্বর প্রেমে সেখানে কোন ফারাক নেই।

জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ।
ধন্য হল, ধন্য হল মানবজীবন॥
নয়ন আমার রূপের পুরে সাধ মিটায়ে বেড়ায় ঘুরে,
শ্রবণ আমার গভীর সুরে হয়েছে মগন॥
তোমার যজ্ঞে দিয়েছ ভার, বাজাই আমি বাঁশি–
গানে গানে গেঁথে বেড়াই প্রাণের কান্না হাসি।
এখন সময় হয়েছে কি ? সভায় গিয়ে তোমায় দেখি’
জয়ধ্বনি শুনিয়ে যাব এ মোর নিবেদন॥

 

_______________________________

ডা. রেজাউল করীম । পশ্চিম বাংলার প্রখ্যাত চিকিৎসক । মানবসেবী। কবি ও কল্যাণকলামিস্ট।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়