Ameen Qudir

Published:
2016-11-23 00:11:49 BdST

আমি সামান্য একজন নার্স বলছি


 

আমি সামান্য একজন নার্স বলছি

শিল্পী সেন
___________________________


হাসপাতালে মৃত্যু পথযাত্রী রোগীকে রাতদিন সেবা করে সুস্থ করে তোলেন নার্সরা। কিন্তু রোগী সুস্থ হলে দিনশেষে তার পুরো কৃতিত্ব পান ডাক্তার। নার্সদের কথা কারো মনেই থাকে না। সবাই মনে করে নার্স তো তেমন কিছুই জানে না। সে তো ‘সামান্য একজন নার্স’।

“আমি সামান্য একজন নার্স। প্রতিদিন সকালে নিজের সাধারণ নার্সের পোশাকটি গায়ে পরে ব্যস্ত হাসপাতালে ছুটে চলি।

‘আমি নার্সের চাকরি করি। ‘নার্স’ শব্দটি আমি অনেকবার শুনেছি। আজকের শব্দটা শুনে আমার হৃদয়টা মোচড় দিয়ে উঠলো। আজকে জানতে পারলাম, ‘আমি দুই টাকার সামান্য একজন নার্স।’

‘আমি একজন নবজাতকে এই পৃথিবীতে আসতে সাহায্য করি। কোন কোন সময় নবজাতকের মুখে মুখ দিয়ে শ্বাস দিয়ে তাকে প্রথম নিঃশ্বাস নিতে সাহায্য করি। অথচ আমি ‘একজন সামান্য নার্স’।

‘আবার একজন মৃত্যুপথযাত্রী আমার হাত ধরে পৃথিবীর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। আমি তার ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ না করে তাকে পরিস্কার পরিছন্ন করি। তারপর সম্মানের সাথে পরিবারের হাতে তুলে দেই। অথচ ‘আমি একজন সামান্য নার্স’।

 

 

‘আমি সন্তান হারানো বাবাকে শান্তনা দেই। গর্ভধারিনী মা আমার বুকে মাথা রেখে অশ্রু ফেলে। আমি তার শরীরে হাত বুলিয়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও তার কষ্ট ভোলাতে সাহায্য করি। কিন্তু ‘আমিই সামান্য একজন নার্স’।

‘আমি রোগীর সিপিআর (কার্ডিওপুলমোনারী রিসেসসিটেশন) করে তার জীবন ফিরিয়ে আনি। নতুন করে তাকে বাঁচার স্বপ্ন দেখাই। আমি সেই ‘সামান্য একজন নার্স’।

‘আমি মেডিকেল অফিসারের চোখ, কান ও হাতের কাজ করি। তারা আমার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে আপনাকে ওষুধ দিয়ে সারিয়ে তোলেন। অথচ আমি ‘সামান্য একজন নার্স’।

‘আমি একজন নবজাতকের বুকে কান দিয়ে তার ফুসফুসের শব্দ শুনতে পাই। তার কোন অঙ্গের অবস্থা কেমন আছে তা জানতে পারি। তা জেনে তার পরিচর্যা শুরু করি। আমি সেই ‘সামান্য একজন নার্স’।

‘আমি রোগী, পরিচর্যাকারী ও জুনিয়র নার্সদের প্রশিক্ষণ দিতে পারি। অথচ আমি ‘সামান্য একজন নার্স’।

‘একজন রোগীর স্বাস্থ্য পরিচর্যার ক্ষেত্রে আমি তার উকিলের কাজ করি। আমার কাছে সবার আগে গুরুত্ব পায় আমার রোগীর সুস্থতা। রোগীকে সুস্থ করার জন্য আমি ডাক্তারের সাথে যুদ্ধ করি। অথচ আমি ‘একজন সামান্য নার্স’।

‘আমি আপনার বাবা মা বা আদরের সন্তানের সেবা করতে গিয়ে নিজের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারি না। আমার সন্তানদেরও জন্মদিন পালন করতে পারি না। অথচ আমি ‘খুব সামান্য একজন নার্স’।

‘আমি রোগীর শরীরে রক্ত দিতে পারি। রক্ত চেকআপ করতে পারি। ছোটখাটো কাটাছেঁড়াও করতে পারি। ক্ষত স্থান সেলাই করতে পারি।অথচ আমি খুব সামান্য একজন নার্স।

আমি শারিরীকভাবে অসুস্থ।ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলাম।আমাকে সবাই আর্শিবাদ করবেন আমি যেন আবার নার্সিং করতে পারি।সবাইকে সেবা করতে পারি।আমার বাবার ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারি।আমার বাবার অনুপ্রেরণায় আজ আমি একজন নার্স।

 

 

___________________________________________


লেখক শিল্পী সেন
পেশা: নার্সিং । গত মার্চে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হন।ট্রেন থেমে গিয়ে আবার চলতে শুরু করে।তিনি নামতে গিয়ে ট্রেনের নিচে পড়ে যান। । আমার ডান পায়ের উপর দিয়ে ট্রেনের চাকা গেছে।পা কেটে ফেলতে হয়েছে। বুকের দুটো হাড়,কোমরের পেলভিকে দুই যায়গায় ভেঙ্গে যায়। । শিল্পীর চিকিৎসা হয়েছে তার কর্মস্থল কুমুদিনী হাসপাতালে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর তিনি এখন অনেকটা সুস্থ। তাকে ঘিরে বাংলাদেশে মানবিক জাগরণ ঘটে। যা অভূতপূর্ব ।

 

 


সম্পাদকের নোটস
________________ ________________________________________


শিল্পী সেনের সঙ্গে ২২ নভেম্বর সন্ধ্যায় ডাক্তার প্রতিদিন সম্পাদক ডা. সুলতানা আলগিন বেশ কিছু সময় কথা বলেছেন। তিনি এখন ভাল আছেন বলে জানিয়েছেন। সকলের কাছে তার সর্বাঙ্গীন কল্যান ও মঙ্গল কামনা করেছেন। তার পাশে দেশবাসী দাঁড়ানোয় কৃতজ্ঞতা জানান । বর্তমানে বাগেরহাটে ভাইয়ের বাসায় শিল্পী অবস্থান করছেন।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়