Ameen Qudir
Published:2017-04-05 16:07:21 BdST
লিঙ্গ বলে দিয়ে নিষ্পাপ শিশুটির মৃত্যুর জন্য দায়ী মনে হচ্ছে নিজেকে
ডা. শাহাদাৎ হোসেন রোমেল
________________________________
চট্টগ্রামে যেখানে আল্ট্রাসনো করতাম, সেখানে রুমের সামনেই নোটিশ লিখে দিয়েছিলাম - "এখানে আল্ট্রাসনো করে গর্ভস্থ শিশু ছেলে কিংবা মেয়ে বলা হয় না"। প্রেগনেন্ট মহিলা কিংবা তার সাথের লোকজন তাতে কম জ্বালাতন করতো।
"ছেলে হবে" শুনলে যতটা খুশী হতো, "মেয়ে হবে" শুনলে অনেকের মুখই অন্ধকার হয়ে যেতো। তাই আমি চেষ্টা করতাম গর্ভস্থ শিশুর "সেক্স" পারতপক্ষে না বলতে।
এক মহিলার প্রথম সন্তান কি হবে জানতে চাইলো। সাথে রোগিণীর মা ছিলো। অনেক অনুরোধের পরে বললাম - মেয়ে হবে। রোগিণী কিছুটা মন খারাপ করলেও, তার মায়ের সেকি আহাজারি!! উনার নাতনি হবে কিছুতেই তিনি মানতে রাজী না। আমাকে বললেন, ভালো করে দেখতে। ভুল হচ্ছে হয়তো আমার। আমি যখন কনফার্ম করে বললাম, মেয়ে হবে। রোগিণীর মায়ের বিলাপ কান্না শুরু হলো। অনেকক্ষণ পরে তিনি শান্ত হলে জানা গেলো, উনার ৫ মেয়ে নিয়ে উনি জীবনে অনেক দু:খ পেয়েছেন। তাই তার মেয়ের জীবনেও একই দু:খ আসুক, তা তিনি চান না।
কিন্তু বর্তমানে যে শহরে আল্ট্রাসনো প্র্যাকটিস করি, সেখানে নোটিশে কোন কাজ হয় না! এখানে প্রেগনেন্সীতে আল্ট্রাসনো করাতে আসে গর্ভস্থ শিশু ছেলে না মেয়ে হবে তাই জানতে। শিশুটি সুস্থ আছে কিনা, কিংবা মায়ের কোন সমস্যা আছে কিনা শতকরা ১০ জনে ও তা জানতে চায় না!! ভীষণ অদ্ভুত মানসিকতা! এমন কি ৭ মাস বয়সী শিশুটির হার্টবিট না পেয়ে যখন বললাম, গর্ভের শিশুটি মারা গেছে। তখনো জিজ্ঞেস করেছে, শিশুটি ছেলে না মেয়ে? এখানে শিশুর সেক্স ডিটারমিনেশন বলা চলে ম্যান্ডেটরি। সেক্স না বলে দিলে, সাথে সাথে রোগিণী কিংবা সাথের লোকজন বলবে, "অমুক ডাক্তার তো বলে দেয়"। অগত্য গর্ভস্থ শিশুর লিংগ জানাতেই হয়।
গতকাল এক হাসপাতালে আল্ট্রাসনো করে রোগিণীর সাথের লোকজনের পীড়াপীড়িতে বলতেই হলো - শিশুটি মেয়ে। ২৯ সপ্তাহের মেয়ে শিশু। আজ আবার সেই রোগিণী আল্ট্রাসনো করাতে এসেছে প্রচুর ব্লিডিং নিয়ে। জিজ্ঞেস করায় জানতে পারলাম, কাল আল্ট্রাসনো করার পরেই কোন এক ধাত্রীর কাছে গিয়ে শিশুটিকে খুন করিয়েছে। সেটা যে কতটা নৃশংস, কারণ ২৯ সপ্তাহ বয়সী শিশুটিকে তো সহজে ভূমিষ্ঠ করানো যায়নি। আর অপচিকিৎসার কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণে রোগিণীর অবস্থা বর্তমানে আশংকাজনক!
রোগিণীকে দেখে এবং তাদের কর্মকান্ডের কথা শুনে নিজেকে এখন অপরাধী মনে হচ্ছে। ঐ শিশুটির লিঙ্গ বলে দিয়ে নিষ্পাপ শিশুটির মৃত্যুর জন্য দায়ী মনে হচ্ছে নিজেকে।
______________________________
ডা. শাহাদাৎ হোসেন রোমেল । প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক । নোয়াখালী।
আপনার মতামত দিন: