Ameen Qudir

Published:
2017-04-04 06:06:13 BdST

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ,প্রিয় বন্ধু মোর



মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ

 

______________________________

অসীমে, রংধনুর দেশে চলে গেলেন আজাদ। ঘৃণ্য জংগীদের বোমায় তাঁর জীবন প্রদীপ নিভে গেল।


তার সাথে আমার সখ্যতা প্রায় এক যুগের। ষ্টাফ রোডের অফিসারস কোয়ার্টারে তিনি ছিলেন আমার নিকটতম প্রতিবেশী। সেই সুবাদে ছুটির অবকাশে পরস্পরের বাসায় যাওয়া -আসা শুরু হল। দুজন দুজনকে খুব কাছের থেকে জানাবার সুযোগ হল।

২।জানলাম, বেগম আজাদ ভাবী আমার মেডিকেল কলেজের সহপাঠী DrSamil Uddin AhmedShimul এর বোন। ফলে দুজনের কথা বলবার ' কমন টপিক'ও বেড়ে গেল। আজাদ পদাতিক কোরের , আর আমি মেডিকেল কোরের অফিসার হওয়া সত্ত্বেও দুজনের সম্পর্ক হল স্নেহ আর শ্রদ্ধার অপরুপ মিশেল।

৩।সেনাবাহিনীর চাকুরীতে বদলী একটি স্বাভাবিক বিষয়। তাই, আমরা ভিন্ন ভিন্ন গ্যারিসনে চলে গেলাম। জাতি সংঘের মিশনে শান্তি রক্ষী হিসেবে কংগো যাবার সময় ২০০৯ সালে কুমিল্লাতে আমি ' এসম্বেল' হলাম। আমি যে অফিসারস মেসে উঠলাম আজাদও সেই মেসে আমার পাশের রুমেই থাকতো। আজাদ তখন সদ্য বাবা হয়েছেন। শিশুপুত্রকে নিয়ে বিকেলে তিনি বারান্দায় বসে থাকতেন।

৪।এবার র‍্যাবের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ছিল। মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ইন্সটিটিউটে তাঁকে পেলাম অনেক বছর পর। স্বভাব সুলভ আন্তরিকতায় তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। র‍্যাবের হোষ্ট অফিসার হিসেবে চা - নাস্তায় আপ্যায়িত করলেন। মোবাইল নম্বর বিনিময়ে তিনি আমার নম্বরে কল দিলেন। তখনও জানি নাই, সেটিই লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদের থেকে পাওয়া শেষ রিং।

৫।পেশাগত জীবনে তিনি ৩৫ তম দীর্ঘ মেয়াদী কোরসে কমিশন লাভ করেন। উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের এই অফিসার বিভিন্ন পদাতিক ব্যাটালিয়নে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। জাতি সংঘের মিশনে তিনি বিশেষ সাফল্যের পরিচয় রাখেন। গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে যোগদানের পূর্বে তিনি র‍্যাবের একটি ইউনিটের অধিনায়ক হিসেবে গৌরবদীপ্ত ভূমিকা রাখেন। তিনি ছিলেন সাহসী- ক্ষিপ্র এক ছত্রীসেনা- প্যারা কমান্ডো।চাপাই নবাবগঞ্জে জন্ম হলেও তিনি কর্মদক্ষতায় সমগ্র দেশের সূর্য সন্তান হিসেবেই পরিচিত হলেন।

৬।।নশ্বর মানুষের জীবনে এক যুগ অনেক লম্বা সময়। এই সময়ে খুব কাছের থেকে তাঁকে দেখবার - বুঝবার সুযোগ হয়েছে। তিনি আপাদমস্তক একজন দেশপ্রেমিক, মেধাবী, পরিশ্রমী,ত্যাগী, চৌকস অফিসার। তাই র‍্যাবের গোয়েন্দা প্রধানের মত সংবেদনশীল ' এপয়েন্টমেন্ট' -এ তিনি অভিষিক্ত হয়েছিলেন।

৬।ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন বিনয়ী, ধার্মিক, মৃদুভাষী, প্রাণচঞ্চল। সৎ আর্মি অফিসারদের মতই তার জীবনাচার ছিল সাদামাটা, বাড়তি আড়ম্বরমুক্ত। সবামী হিসেবে তিনি ছিলেন প্রেমময় , সন্তান হিসেব মাতৃভক্ত, পিতা হিসেবে দায়িত্ববান- সন্তান বৎসল।

৭।।ঘৃণ্য জংগীবাদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন আপোষহীন। অকুতোভয় এই অফিসার তাই জংগীবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটুকুও ছাড় দেন নি।

৮।।মৃত্যু মানুষের অনিবার্য এক সত্য। কিন্ত,তাঁর মৃত্যু প্রকৃত এক বীরের মৃত্যু, দেশপ্রেমিকের মৃত্যু। পুরো সামরিক সন্মানে যখন তাঁকে যখন সমাহিত করা হল তখন অনেকের মতই আমিও অশ্রুজল লুকাতে পারি নি যে! লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ, আপনি যেখানেই থাকুন, আমি জানি, আপনার আত্মায় শুধু একটি শব্দই আঁকা, আর সেটি হল 'বাংলাদেশ।'

_____________________________


মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ , আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজ।
ওয়েস্টার্ন সাহারায় শান্তিরক্ষী হিসেবে সফলভাবে এক বছরের কাজ শেষে আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি বিভাগে যোগ দিয়েছেন।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়