Ameen Qudir

Published:
2017-03-28 17:55:29 BdST

চিকিৎসকের হাতে নারী রোগীর শারীরিক পরীক্ষা- নিরীক্ষা যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে না


 

 

___________________________

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মিথ্যা যৌন হয়রানির অভিযোগে চিকিৎসক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, তদন্তে সত্যতা মেলে নি। তদন্ত কমিটির সুপারিশে রোগী দেখার ক্ষেত্রে মেডিকেল এথিকস বিরোধী জেন্ডার বিভাজন—চিকিৎসা জগতে বিভ্রান্তির জন্ম দেবে । লিখেছেন ডা. বাহারুল আলম ।

পুরুষ চিকিৎসকের নারী রোগীর শারীরিক পরীক্ষা- নিরীক্ষা কখনও যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে না। এ ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি রোগী-চিকিৎসক উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভরশীল।

নারী রোগীর প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় পুরুষ চিকিৎসককে তার শরীর স্পর্শ করতে দেওয়ার আগেই রোগীর সম্মতি থাকা প্রয়োজন।

অপরদিকে পুরুষ চিকিৎসকের উচিত, নারী রোগীর শারীরিক পরীক্ষা করার পূর্বে তার সম্মতি নেওয়া। রোগী সম্মতি দিলে যৌন হয়রানির অভিযোগ আইনসিদ্ধ নয়। বাংলাদেশ প্যানাল কোডে চিকিৎসককে এ বিষয়ে দায়মুক্তি দেওয়া আছে।

সম্মতি দেওয়ার পরেও রোগী যদি পরবর্তীতে অভিযোগ করে তা হবে মেডিকেল এথিকস বিরুদ্ধ এবং আইনসিদ্ধ নয়। পুরুষ চিকিৎসক সেক্ষেত্রে সম্মতি প্রমাণে সাক্ষী স্বরূপ রোগীর স্বজন অথবা নার্স পাশে রাখা বাঞ্ছনীয়। নারীস্বজন ও নার্সের উপস্থিতি ছাড়া নারী রোগী পুরুষ চিকিৎসকের শারীরিক পরীক্ষা করা এথিকস-এ নিষেধ। এ ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ যাই হোক না কেন, নারী রোগী অভিযোগ করলে চিকিৎসক অভিযুক্ত হবেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরুষ চিকিৎসক ছাত্রী রোগীকে পরীক্ষা করার সময় সম্মতি নেওয়া , তার নারী সহপাঠী ও স্বজন সেখানে সরজমিনে উপস্থিত থাকলে ঐ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে আন-এথিকাল ,অন্যায় , বিধি বহির্ভূত এবং চরিত্র হনন।

রাষ্ট্রে, কর্তব্য পালনের সময় দায়মুক্তি ও স্বজনরা উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও দুর্বৃত্তরা চিকিৎসক লাঞ্ছিত করার বিষয়টি কতটা অমানবিক - তা দায়িত্ব ও সংবেদনশীল মানুষ মাত্রই বুঝতে পারবে।

রাষ্ট্র একধারে তার নারী রোগীকে চিকিৎসার দায়িত্ব অর্পণ করেছে পুরুষ চিকিৎসকের উপর, অথচ তার কোন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি ! প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর অর্পিত আছে।

তদন্তে যৌন হয়রানি প্রমাণিত না হওয়ার পরিপেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঐ ছাত্রী ও লাঞ্ছনাকারী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কিনা তা জানা যায় নি। অপরাধীদের শাস্তি না হলে চট্টগ্রাম বিএমএ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা না করলে , চিকিৎসকের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে , সেখানে কোন চিকিৎসকই দায়িত্ব পালন করবে না - এই মর্মে সিদ্ধান্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।

নারী চিকিৎসক নারী রোগী দেখবে , আর পুরুষ চিকিৎসক পুরুষ রোগী দেখবে – তদন্ত কমিটির এই সুপারিশ ‘রোগী চিকিৎসকের জেন্ডার বিভাজন’ - হীনমন্যতা ও মেডিকেল এথিকস বিরুদ্ধ। কখনও রোগী চিকিৎসকের জেন্ডার বিবেচিত হয় না, কেবল রোগী-চিকিৎসক হিসাবেই বিবেচিত হয়। এ ধরনের সুপারিশ চিকিৎসা জগতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।
তদন্তে যৌন হয়রানির কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া স্পষ্টতই প্রমাণ করে , চিকিৎসক লাঞ্ছনা দুর্বৃত্তদের পূর্ব-পরিকল্পিত। এ বিষয়টিও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএমএ শাখা আমলে নেওয়া প্রয়োজন।

___________________________

ডা. বাহারুল আলম । প্রখ্যাত পেশাজীবী নেতা। লোকসেবী চিকিৎসক । সুলেখক। সুবক্তা।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়