Ameen Qudir

Published:
2017-03-28 17:43:18 BdST

বিয়ে ছেলেখেলা বা মেয়েখেলা কোন খেলাই না


 

 

ডা. নাসিমুন নাহার
___________________________________

'বিয়ে কোন ছেলে খেলা না'-- আব্বু আম্মুদেরকে এই কঠিন সত্যটা বোঝানোর চেষ্টা করা গেলেও কোনভাবেই একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে পাশের বাসার আন্টি/মায়ের সাথে মর্নিং ওয়াক করা আন্টি/বাবার অফিসের কলিগ আংকেল/জুম্মার নামাজ শেষে এলাকার চাচা এবং আত্মীয় স্বজনদের বোঝায় এমন সাধ্য কার ?!

সিরিয়াসলি বিবাহ সংক্রান্ত আলোচনা আমাদের সমাজে বরবরই চরম হটকেক।

প্রকৃত পক্ষে, বিয়ে ছেলেখেলা বা মেয়েখেলা কোন খেলাই না।বিয়ে হচ্ছে জীবনের মোটামুটি অবধারিত চুড়ান্ত একটি সত্য সিদ্ধান্ত।তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের সমাজে নিজের জীবনের এই চুড়ান্ত সিদ্ধান্তটি পাত্র আর পাত্রী নিজে নেবার সুযোগ খুব কমই পায় এখনো- এই যুগেও !

নিজে পছন্দ করে বিয়ে করতে চাইলে যেই যুদ্ধটা পারি দিতে হয় পরিবার সমাজের সাথে এক একটা ছেলে মেয়েকে, তা কোন অংশেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতির চেয়ে কম না।নিজে পছন্দ করলেই সেই ছেলে/মেয়েটার একশ একটা দোষ খুঁজে বের করতে সবাই উঠে পরে লাগবে।
পৃথিবীর সবচেয়ে তিতা টাইপ করল্লা বানিয়ে ফেলবে ঐ ছেলে/মেয়েটিকে।ঐ ছেলে/মেয়েটি হয়ে যাবে ভিলেন/ডাইনী/ড্রাকুলা/খারাপ !
অথচ পরিবারই যদি ঐ ছেলে/মেয়েটিকেই পছন্দ করে তাহলেই সে হয়ে যাচ্ছে রসগোল্লা,মালাইকারী, কাচাগোল্লা, রসমালাই, বালিস মিষ্টি !
কি অদ্ভুত হিপোক্রেসি !

আমাদের সমাজে একটা ছেলে চাকরি পাওয়া মাত্রই আশেপাশের আন্টি আংকেল সমাজ উঠে পড়ে লাগবেন ছেলেটার বিবাহ নিয়ে।অথচ নিজের পায়ের নীচের ভিত্তিটা একটু মজবুত না করে স্ত্রী সন্তান পরিবারের দায়িত্ব চাপিয়ে দিলে যে তা বোঝা মনে হতে পারে --- এই খুব সহজ কথাটা কেউ বোঝেই না যেন।

মেডিকেলের কথাই যদি বলি-- এমবিবিএস পাশ করতেই পাঁচ বছর।তাও রেগুলার হলে।
ইররেগুলারদের কথা নাহয় বাদই দিলাম।
এরপর এক বছর ইন্টার্নশীপ।তারপর বিসিএস/পোষ্ট গ্রাজুয়েশনের দৌড় ঝাঁপ।বেচারা লেখাপড়া করবে নাকি বৌ পালবে ?!!!! অথচ এমবিবিএস পাশ করলেই আশেপাশে ফিসফাস শুরু হয়ে যাবে --- ছেলেকে কবে বিয়ে দিচ্ছেন/মাথা তো স্টেডিয়াম হয়ে যাচ্ছে/ছেলের লেখাপড়া শেষ হয় না কেন ?? ইত্যাদি ইত্যাদি !

 

সবার তো আর পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত সাপোর্ট থাকে না।বহু ডাক্তার ছেলে মাসের পনেরো দিন টানা 'খেপ' মারে দূরের কোন এক জেলা শহরে এবং বাকী পনেরো দিন পরে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে/আজিজে। এরমধ্যে বিয়ে করে কোন মধু আহরণ করা সম্ভব বৌর সাথে মনোমালিন্য ছাড়া ??


ব্যাপারগুলো আসলে কখনোই এত সহজ না।

মেয়েদের অবস্থা তো আরো করুন এবং ভয়াবহ আমাদের সমাজে।খোদ ঢাকা শহরেও অনার্স পাশ করার আগেই মেয়ের বিয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে ওঠে পরিবার।অথচ বিয়ের সাথে একজন মানুষের শারীরিক মানসিক পরিপক্কতা যে প্রয়োজন তা পরিবার সমাজ তো ভাবতেই চায় না।দুঃখের কথা হচ্ছে রাষ্ট্রও আইন করে বিয়ের বয়স কমায় ! অথচ মায়ের স্বাস্থ্যের সাথে সন্তান জন্ম দানের ব্যাপারটা সরাসরি জড়িত।শিশু মৃত্যু হার, মাতৃ মৃত্যু হারও নির্ভর করে।


সন্তান মানেই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। সুস্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, সুন্দর দেশের জন্যই সুস্থ শিশু আবশ্যকীয়।

মেয়েদের ক্যারিয়ার, লেখাপড়া, স্বপ্ন --- সবই অধরা ঝাপসা হয়ে যায় একটা হঠাৎ বিয়ের সিদ্ধান্তে।

বিয়ে একটা সামাজিক রীতি, ধর্মীয় বিধান।কিন্তু সমাজ, ধর্মের নিয়মগুলো তো আসলে হওয়া উচিত মানব কল্যাণে, মানুষের সুবিধার, মঙ্গলের জন্য, তাই না ? সময়ের সাথে যুগের প্রয়োজনে তা অদল বদল হয়ে পরিবর্তিত পরিমার্জিত রূপে নতুনভাবে আসতেই পারে।
প্রস্তর যুগের, গুহামানব যুগের মতো এখনো যদি বিয়ে মানেই যদি একমাত্র সন্তান জন্ম দেয়ার ব্যাপার হয় তাহলে অবশ্যই তা দুঃখজনক।
__________________________


নাসিমুন নাহার। লোকসেবী চিকিৎসক, পরামর্শক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়