Ameen Qudir

Published:
2017-03-25 22:03:22 BdST

যৌন হয়রানীর নামে হয়রানী:চিকিৎসকের দুর্বিষহ কষ্টের প্রতিকার কি?


 


ডা.এস এম মুইজ্জুল আকবর চৌধুরী
_____________________

 


যৌন হয়রানী! শুনলেই ঘৃণায় মুখের মধ্যে একদলা থুথু জমে যায় আর কিছু ভাবার আগেই থুথুটা ছুড়ে দেই।আবারো থুথু জমে উঠে আবার ছুড়ে দেই।মুখের ভেতরটা থুথু হীন হতে পারে না কিছুতেই। মানব জন্মের শ্রেষ্ঠত্ব মুহুর্তে এতোটাই নীচে নেমে আসে যে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত নোংরা কীটের সামনেও মাথা নত করে রাখতে বাধ্য হয়। যৌন হয়রানী আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিন্দিত ও ঘৃণিত অপরাধ।

এখানে অপরাধ ও অপরাধী উভয়ই চরমভাবে ঘৃণিত। এই অপরাধ একজন মানুষের বিবেক, রুচীবোধ,সামাজিক মুল্যবোধ, পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা ঘৃণিত কীটের থেকেও অধমে পরিনত করে। এদের প্রতি ঘৃণা আমার ভিতরে সারাক্ষন জেগে থাকা মানুষটার শিরায় শিরায় প্রবহমান। আমি জানি না অন্যদের কেমন মনে হয় কিন্তু আমার তাই হয়। মনে হয়, জগতের সব নোংরা প্রাণী অবজ্ঞাভরে দাঁত কেলিয়ে হাসছে আর বলছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রানী নোংরামিতেও শ্রেষ্ঠ!

 

সব অপরাধই আইন অনুযায়ী সাজা যোগ্য। কিন্তু যৌন হয়রানীর অপরাধ যেমন অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দণ্ডনীয় তেমনি যৌগ অপরাধীও অত্যন্ত ঘৃণিত ও সর্বজন পরিত্যাজ্য। যৌন নিপিড়ন প্রকৃত অর্থে বিশ্বাসী মানুষের অবিশ্বাসী অনৈতিক নোংরা মন-মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ । এটা মানব জন্মের জন্য সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক কলঙ্কিত ও গর্হিত কাজ। তাই যৌন হয়রানী সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিচার্য ও দণ্ডনীয়। যৌন অপরাধ ও অপরাধীর সর্বোচ্চ আইনী ও সামাজিক সাজা হওয়া অতীব জরুরী।

 

মিথ্যা যৌন হয়রানীর অভিযুক্ত ব্যক্তির উপরে যে সামাজিক পারাবারিক মানুষিক নিপীড়ন ও ভোগান্তি নেমে আসে তা একমাত্র ভুক্তভোগীই জানে।নিজ মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-পুত্র কন্যার সামনে এই অভিযোগ নিয়ে বেচে থাকা আর প্রতি মুহুর্তে নরক যন্ত্রনার চেয়ে বেশী। এতোটা বিস্বাদ জীবনের চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয় মনে হতে থাকে। তাই যৌন হয়রানীর মিথ্যা অভিযোগও ততোধিক ঘৃণিত, নিন্দনীয় ও দণ্ডনীয় অপরাধ।


দুষ্ট চিন্তার হীন মন-মানসিকতার এইসব মিথ্যাচারী ও তার সহযোগীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমুলক কঠোর সাজা আরো বেশী গুরত্বপুর্ন। না হলে অবিশ্বাসের বিষবাস্প সকল পারিবারিক সামাজিক বন্ধনকে হিংস্র নেখড়ের মত ছিড়ে ফেলবে। তখন পেশার সন্মানের চিন্তা দূরে থাক পিতা-কন্যা,ভাই-বোনের সম্পর্কও অবিশ্বাসের আতংকে প্রহর কাটাবে।


যে কথা লিখতে গিয়ে মনের মাঝে জমে থাকা এত কথা লিখে ফেললাম, সেই কথায় আসি।সর্বশেষ জানতে পারলাম, ডা. মোস্তফার বিরূদ্ধে আনিত যৌন হয়রানীর অভ কিযোগ মিথ্যা বলে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। ডা. মোস্তফার দায় মুক্তি ঘটেছে। এটা খুশীর খবর কিন্তু আমার মনটা শংকায় আচ্ছন্ন হয়ে বিষাদে ভরে গেছে । কারন অভিযুক্ত একজন চিকিৎসক আর অভিযোগ কারী সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী। শংকা জাগে,এটা কি চিকিৎসকের অসন্মান না চিকিৎসা পেশার বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র নাকি আরো ভয়ংকর কিছু......যা ঐক্যবদ্ধ বাংগালীর জাতি স্বত্বা ধ্বংস করতে বাংলাদেশে পেশাজীবী-শিক্ষার্থী অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।

 

উল্লেখ্য গত ১০ মার্চ (শুক্রবার) আনুমানিক রাত ৭.৪৫মি. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে পেটের ব্যথার চিকিৎসা নিতে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মো. মোস্তফা কামাল কর্তৃক যৌন হয়রানীর স্বীকার হওয়ার অভিযোগ করেন এক ছাত্রী। উক্ত ছাত্রীর কতিপয় সহপাঠী ঐ রাতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোস্তফাকে এক ঘন্টা ধরে মারধর -নির্যাতন করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রোক্টরিয়াল বডি ও প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা.মোস্তফা উদ্ধার করেন। যৌন হয়রানী ও কর্তব্যরত চিকিৎসককে নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে চবি কতৃপক্ষ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আক্তারকে প্রধান করে গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি সম্প্রতি যৌন হয়রানীর তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন।গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকেল চারটায় সাংবাদিকদের কাছে তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী। তাতে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির যে অভিযোগ এসেছিল তার কোনো সত্যতা পায়নি গঠিত তদন্ত কমিটি। আলী আজগর চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীর যে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিল তার কোনো সত্যতা খুঁজে পায়নি বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে থাকা সিসি ক্যামেরা, চিকিৎসক, ভুক্তভোগী ছাত্রী ও দায়িত্বরত স্টাফদের সাথে কথা বলে এই প্রতিবেদন দিয়েছে।


তিনি বলেন, কমিটি প্রস্তাব হিসেবে মেডিকেলে ছাত্রীদের দেখার জন্য মহিলা চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার জন্য বলেছে। পাশাপাশি মেডিকেলে আরও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্যও প্রস্তাব দিয়েছে এই কমিটি।

উল্লেখ্য, কর্তব্যরত চিকিৎসককে নির্যাতন তদন্তে গঠিত অপর কমিটির রিপোর্ট এখনো দাখিল হয়নি। রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি তাই মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। তবু উৎসুক মনে কিছু জিজ্ঞাসা ঘুরে ফিরছে।যেমন-একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী কেন এমন অভিযোগ করতে গেল? ঘটনার প্রায় ১ ঘন্টা পর সহপাঠী কিছু ছাত্র কেন চিকিৎসককে মারধর করতে গেল? তারা সহপাঠীর অপমানে ক্ষীপ্ত হয়ে মারতে গেল নাকি এর পেছনে অন্য কোন রহস্য রয়েছে? সহপাঠীর অপমানে প্রতিবাদী হওয়া তারুন্যের ধর্ম আর এই ধর্মকে অধর্মের কাজে কে ব্যবহার করল? গভীর একটা ষড়যন্ত্রের আভাস কি পাওয়া যাচ্ছে না?


তবে রিপোর্ট যাই হউক না কেন, মিথ্যা অভিযোগে কাটানো ডা.মোস্তফার দুর্বিষহ দিনগুলো কিছুতেই মুছে দেয়া যাবেনা, হারানো সন্মানের দিনগুলো ফিরিয়ে দেয়া যাবেনা। দিনের পর দিন তিলে তিলে অর্জিত সন্মান মিথ্যা কলংকে প্রশ্নবিদ্ধ হলো তা আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবেনা।যথা সময়ে তদন্ত শেষে সত্য প্রকাশ করার জন্য ও জনসাধারনের মনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করার জন্য উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও তার তদন্ত কমিটির প্রতি দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আর সাংবাদিক বন্ধুদের বলব, সত্যান্বেষী হউন, সত্য প্রকাশ করুন; অপর্যাপ্ত তথ্য নিয়ে অতিরঞ্জিত মনগড়া পক্ষপাত দুষ্ট সংবাদ পরিবেশন করে পেশাকে কলঙ্কিত করবেন না।

আমার অনেক সাংবাদিক বন্ধু আছে তাই আমি জানি সব সাংবাদিক এক নয়,পেশার প্রতি সৎ ও দ্বায়িত্ববানের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু মাঝে মাঝে বিশ্বাস জন্মে যায় যে পৃথিবীটা আসলেই নষ্টদের দখলে চলে যাচ্ছে। যাদের জন্য সাধারন মানুষ সাংবাদিকদের এখন জাতির বিবেক ভাবেন না, "সাংঘাতিক' বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন; আর সেইসব সাংবাদিকের দায় সবাইকে নিতে হচ্ছে। সচেতন সত্যান্বেষী সাংবাদিক বন্ধুদের বলব,ওদের দায় নিয়েন না, পেশার স্বার্থে দেশের স্বার্থে ওদের থামান।

ডা.মোস্তফার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আর যৌন হয়রানীর মিথ্যা অপবাদে কাটানো দুর্বিষহ দিনগুলোর কথা যতই ভাবি ততই মনটা বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে যায়, যে কোন চিকিৎসকের পেশার ধরন এমনই যে কারো জীবনে এমন দিন আসতেই পারে আর সেখানে ড. শিরীণ আক্তাররা নাও থাকতে পারে তখন কি হবে.....!!!!!আর ভাবতে পারছিনা শংকায় অস্থির হয়ে উঠছি বার বার আর প্রতিবাদী হয়ে উঠতে চায় দেহ-মন সব.....

আমি আমার কন্যার চোখে
এক মুহুর্তের জন্যও অশ্রদ্ধা দেখতে চাই না,
আমি আমার প্রিয়তমা স্ত্রীর ভালোবাসার চাহনীতে একবারের জন্যও অবিশ্বাস দেখতে চাই না,
আমি আমার মায়ের মাতৃত্বের অহংকারকে
কস্টের নীলে ক্ষনিকের জন্যও চোখের জলে ভাসাতে চাই না।
তাই........
আমি মিথ্যাচারের বিচার চাই।
মিথ্যা যৌন হয়রানীর অভিযোগকারী
ও তার সহযোগীদের বিচার চাই,
দৃষ্টান্ত মুলক সাজা চাই।।
(সহযোগী যেই হউক সহপাঠী বা সাংবাদিক বা অন্য কেউ)
আর
সেই সাথে
সকল প্রকৃত যৌন হয়রানীর
বিচার চাই, দৃষ্টান্ত মুলক সাজা চাই।

_________________________


ডা.এস এম মুইজ্জুল আকবর চৌধুরী
সাংগঠনিক সম্পাদক,
বিএমএ, চট্টগ্রাম

সহকারী অধ্যাপক
হৃদরোগ বিভাগ,

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়