Ameen Qudir

Published:
2017-03-23 00:23:28 BdST

ফেইসবুকীয় আত্মহত্যা এবং কিছু কথা


 

 

 

ডা. নাসিমুন নাহার
________________________

 

Girls ,
ভালো থাকো-জীবনে থাকো
---------------------------

রাশার খুব ইচ্ছে সে সেলিব্রেটি হবে।এটাই তার জীবনের একমাত্র শখ এবং এইম ইন লাইফও বটে।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তার লেখাপড়া করতে ভালো লাগে না।গান, নাচ, অভিনয়, মডেলিং এসব কোন গুণও নেই তার।কিন্তু সে স্বপ্ন দেখে সেলিব্রেটি হবার। পরিশ্রম না করে সহজ কোন পথে সে নাম ছড়াতে চায় নিজের।

কি করা যায় ভাবতে ভাবতে ফেসবুকিং করছিল সে।ইসসস, ফেবুতেও কত সেলেবের ছড়াছড়ি !
স্ট্যাটাস লিখেই হিট হয়ে যাচ্ছে মানুষ ! কত সহজ ! এরা পারলে আমি কেন পারব না ভাবল রাশা।দুই/তিন দিন টানা পরে রইলো ফেবুতে।
কিন্তু তিন চার লাইনের বেশি লেখা এল না তার।

ফেসবুকে ঘুরতে ঘুরতে আরেক ধরনের সেলিব্রেটি দেখতে পেল সে।যারা দারুন দারুন সব সেলফি এবং সুন্দর সুন্দর লোকেশনে তোলা ছবি আপলোড দিয়ে রীতিমত সেলেব হয়ে গেছে।এই অপশনটা তার বেশ মনে ধরল।বেশ সহজ পদ্ধতি।শুধু একটা ডিএসএলআর আর স্মার্ট ফোন থাকলেই বাজিমাত।আর এই দুটোই তার আছে।ইয়াহু, আর কে পায় তাকে !

এভাবেই সহজ এবং সস্তা পরিশ্রমহীন পথে সেলেব হতে শুরু করল রাশা।দিনে চার/পাঁচটা পিক আপলোড করতে থাকল, সাথে তিন চার লাইনের স্ট্যাটাস।মাসখানেকের মধ্যে হাজারখানেক ছাড়িয়ে গেল তার ফলোয়ার সংখ্যা।ইনবক্সে চাটুকারের ছড়াছড়ি।কত শত আবদার-ফান-ট্রুথ-ডেয়ার গেমস-ভিডিও চ্যাট।কেউ একজন পরামর্শ দিল লাইভে আস রোজ রাতে- একটু স্মার্টলি ওপেনলি আসবা; দেখবা তোমার সেলেব হওয়া কে ঠেকায় ? ফলোয়ারের বন্যায় ভেসে যাবা তুমি।

পরের দিন থেকে রোজ রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ রাশা ফেবুতে লাইভে আসতে থাকলো ওপেনলি এবং তথাকথিত স্মার্টলি ! ধুমাইয়া ভাইয়া এবং আংকেল সমাজ ঝাপিয়ে পড়ল ওর আইডিতে।রিয়েল, ফেইক আইডি খুলে ফলো ,কমেন্ট করতে থাকল রাশার আইডিতে।

আহ স্বপ্নের জগতে ভাসতে থাকল রাশা।হোক না শারীরিক সৌন্দর্যে নিজেকে উপস্থাপন ( এটাকে উপস্থাপন না বলে উৎসর্গ বলা উচিত) আস্তে আস্তে ভক্তদের প্রত্যাশা 'উর্ধমুখী নিন্মমুখী সর্বমুখী' হতে থাকল। চলল বেশ কিছু মাস।

এক সময় খানিকটা মন্থরতা এল।ভক্তকূল নতুন কারো ওপেন হওয়া উপভোগ করতে শুরু করল।এটাই জগতের নিয়ম।একই পণ্য বেশি দিন ব্যবহারে মনোটোনাস হবেই, পুরনো লাগতে শুরু করবে।তাই শরীর যদি ভালোবাসা মায়া যত্ন এবং সম্মানের সাথে ব্যবহার না করে পণ্য সামগ্রীর মতো ব্যবহার করা হয় (applicable for both male & female) তাহলে অবশ্যই তা আবেদন হারাতে বাধ্য।

ফলে হঠাৎই হতাশা ঘিরে ফেলল রাশাকে।
বছরখানেকের উদ্দাম সেলেব ফ্লেভারের জীবনটা সে ভীষন মিস করতে থাকল।একনিষ্ঠ ভক্তরাও সিক্রেট পিক/ভিডিও ছাড়া হাই পর্যন্ত বলে না।

ক্লান্ত বিধ্বস্ত একুশ বছরের সদ্য তরুণী যেন জীবন শুরু করার আগেই সব হারিয়ে ফেলল !
কি হবে এই জীবনের ?কি লাভ বেঁচে থেকে ? কার জন্য বেঁচে থাকা ?--'' এমন অজস্র প্রশ্নের জর্জরিত আজ রাশা।কত রাত সে ঘুমায় না।

ঘুমাতে হবে।অনেক ভেবে রাশা সিদ্ধান্ত নিল শেষবারের মতো আর একবার সে লাইভে আসবে।এই পৃথিবী কে ভীষন এক শিক্ষা দিবে।
রাত সাড়ে বারোটায় বহুদিন পর সে লাইফে এল।কোন কথা না বলে এক বক্স ঔষধ সবাইকে দেখাল।তারপর একটা একটা করে ট্যাবলেট খুলে বেশ অনেকগুলো একসাথে মুখে পুরে দিল।অতঃপর লাইভ থেকে উধাও। ফেসবুকবাসী তো হতভম্ব।ইনবক্সে, কমেন্টে ঝড় উঠতে থাকল।
-এভাবে সবার চোখের সামনে মরে গেল মেয়েটা?!
-আহারে.......
-আরো একটা সুইসাইড?!
-কি হচ্ছে এগুলো ?!

ঘন্টা দুয়েক পরে হাহা ইমো দিয়ে রাশার আইডি থেকে একটা স্ট্যাটাস আপলোড করা হলো ------ আরে আমি ঘুমের ওষুধ খাইনি।ভিটামিন ছিল ঐগুলো।আমি দেখছিলাম তোমরা সত্যিই আমাকে ভুলে গেছ কি না ?

ফেসবুকবাসী speechless !
আত্মহত্যা কি একটা জোকস হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকাল ? মৃত্যু নিয়ে ফান ?
ঐ পোস্টে একজন কমেন্ট করল--ওকে তুমি যেমন আমাদের ইমোশন নিয়ে মজা করলা, মৃত্যু কে ফান বানালা; এবার দেখ আমরা কিভাবে তোমার সাথে মজা করি।
Guys চল সবাই মিলে রাশার আইডিটা উড়াইয়া দেই।
ব্যাস আর কি ? কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই মিলে রিপোর্ট করে আইডি উধাও করে দিল রাশার।

That's it.

----আমি আসলে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে একটা কথা বুঝেছি - মেয়েদের জন্য ফেইম অর্জন করার অনেক কঠিন দুর্বার কষ্টকর পথ যেমন আছে, সহজ সস্তা ফাঁকিবাজি টাইপ পথও আছে।কিন্তু মনে রাখতে হবে -সস্তার তিন অবস্থা।পরিশ্রম, দক্ষতা , যোগ্যতা এবং ভীষনরকম প্যাশন ছাড়া যেই ফেইম আসবে সেই ফেইম অবশ্যই অবশ্যই ফাঁপা হবে।

হে বোনেরা আমার,
জীবনে সহজ হও কিন্তু জীবনে কখনোই সস্তা হইও না।
প্রয়োজনে ভাব নাও,
মুডি মেয়ের মুখোশে নিজেকে সহজলভ্য হওয়া থেকে নিজেই রক্ষা কর।
মোটকথা, ভালো থাকো-জীবনে থাকো সব সময়।

__________________________

নাসিমুন নাহার। লোকসেবী চিকিৎসক, পরামর্শক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়