Ameen Qudir
Published:2017-03-14 16:38:57 BdST
এক ডাক্তারের প্রার্থনা
ডা. তারিক রেজা আলী
________________________________
মহিলার নাম পিয়ারী। যদিও তিনি দুই মেয়ের মা, নাম শুনে বুঝা গেলো উনিও ছিলেন তাঁর বাবার আদরের মেয়ে। এ আর নতুন কি, যে কোন মেয়েই তার বাবার অতি আদরের, অতি আহ্লাদের সন্তান। নিশ্চয়ই পিয়ারীর বাবা ছোট বেলা মেয়েকে ডাকতেন, পিয়ারী মা, কোথায় গেলি, আমার তোয়ালে টা তো পাচ্ছি না। দূর থেকে ছোট্ট পিয়ারী দৌঁড়ে আসতো, এই যে বাবা, এই নাও তোমার তোয়ালে। জলদি হাত-মুখ ধুঁয়ে আসো, তোমার সাথে খাব বাবা !
আজ কিন্তু পিয়ারী এলেন তাঁর দশ বছর বয়সী ছোট মেয়ের হাত ধরে। নিজ ঘরে তিনি সংসারের সব কাজই করতে পারেন, রাঁধতেও পারেন কিন্তু বাইরে গেলে কারো সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না।
সমস্যা শুরু হয়েছিল প্রায় দু' দশক আগে, বয়স যখন ছিল পনের বছরের মতো। রাতের বেলা ভাল দেখতে পেতেন না কিশোরী পিয়ারী। ভয়ে ভয়ে বাবাকে বলেওছিলেন। বাবা সাধ্যমত চিকিৎসা করিয়েছেন। গ্রাম থেকে শহর, সব জায়গাতেই ডাক্তারদের কাছে তাঁরা একই কথা শুনেছেন। এই রোগের নামটি কঠিন, উচ্চারণ করতে কষ্ট হয়, রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা (Retinitis Pigmentosa)। এই রোগে রোগী প্রথমে রাতকানা রোগে ভোগে। ধীরে ধীরে তার দেখার ক্ষমতা কমতে থাকে, এত কম যে রোগী দূরে-কাছে কোথাও ভাল দেখতে পায় না। কখন যে কে এই রোগের রোগী হবে তারও কোন পূর্বাভাস নেই, কেউ হয়তো একেবারে ছোট বয়সে আক্রান্ত হলো, কেউ হয়তো বা পিয়ারীর মতো, দশ-পনেরো বছর বয়সে। ভয়ংকর তথ্য হলো, সারা পৃথিবীতে এই রোগের কোন সঠিক চিকিৎসা নেই। ক্ষীণ দৃষ্টির জন্য কিছু বিশেষ ধরণের চশমা দেওয়া যেতে পারে। দৃষ্টি খুব কমে গেলে রোগী কিভাবে দৈনন্দিন কাজ করবে তার জন্য স্পেশাল প্রশিক্ষনের ব্যবস্থাও আছে, যাকে বলে 'ভিস্যুয়াল রিহ্যাবিলিটেশন'।
লেখাপড়া পুরোপুরি করা হলো না পিয়ারীর। কিছুদিন পরে বিয়ে হয়ে গেল। শ্বশুর বাড়ীর সাহায্য পেয়েছেন, গন্জনাও সহ্য করেছেন। গেল তো, একটা জনম, পার তো হয়ে গেল প্রায়। এখন মেয়ে দুটিকে বড় করে বিয়ে দিতে পারলেই মিটে যাবে সংসারের সব হিসেব।
ক্ষীণ দৃষ্টির চশমা দিয়েও পিয়ারী দূরে ভাল দেখেন না, কিন্তু অভ্যাসমত করতে পারেন নিজের আর সংসারের সব কাজ। চলে যাবার জন্য উঠে দাঁডা়লেন, মেয়ের হাত ধরে দু' পা এগিয়ে হঠাৎ থমকে গেলেন। হাহাকার আর আকুলতা নিয়ে প্রশ্ন করলেন, "ডাক্তার সাহেব, আমার মেয়েদেরও কি এই রোগ হবে?" আশ্বস্ত করলাম, আশা করি হবে না। শুধু আত্মীয়ের মধ্যে, অর্থাৎ চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো কোন ভাই এর সাথে বিয়ে দেয়া যাবে না মেয়েদের। আর তাদেরও নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করাতে হবে।
হে ঈশ্বর, আমার প্রার্থনা মন্জুর করুন, পিয়ারীর দু' মেয়েই যেন ভাল থাকে আজীবন, মায়ের যন্ত্রণা-গন্জনার জীবন যেন তাদের পোহাতে না হয়।
____________________
লেখক ডা. তারিক রেজা আলী Assistant Professor, Retina. at Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University
আপনার মতামত দিন: