Ameen Qudir

Published:
2017-03-14 00:25:05 BdST

সেই ভয়ঙ্কর দিনটির কথা



শিল্পী সেন

____________________________

এই সেই ভয়ংকর ৪-৫ মার্চ।

কেন পারছিনা অতীত ভুলতে? এত বেশি হাসিখুশি থাকতে চাইছি তাও কেন বুকের ভেতরটা হাহাকার লাগছে।গায়ের কাটা শিউরে উঠছে।হাসতে হাসতে চোখে জল চলে আসছে।আমি এমন ভয়ংকর অতীত চাইনা মনে করতে। কেন পারছিনা??

গত বছর এই দিনে বাড়ি থেকে বের হলাম টাঙ্গাইলের উদ্দেশে।সময় সকাল ১১ টা। বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। কোন কারনে যাওয়া হয়নি। ট্রেন স্টেশনে দুই বান্ধবী আমি আর পিংকি সময় কাটালাম। দুপুরে হালকা খাবার খেয়ে নিলাম।

ট্রেনে উঠলাম।বান্ধবীর সাথে কত গল্প করছিলাম।আর ওকে বলছিলাম একটা অজানা কষ্ট আমাকে খুড়ে খুড়ে খাচ্ছে কয়েকদিন ধরে।কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিনা। ও আমাকে বলল ছুটি থেকে ফিরছিতো তাই এমন লাগছে।

রাত ৪ টা বাজে।ট্রেন তখন যমুনা সেতুর উপর।বাবা ফোন করল।বাবাকে বললাম আমি নেমে তোমাকে কল করব।বাবা বলল সাবধানে নেমো মা।

ট্রেন থেমে গেল।পিংকি কে বললাম আমি আগে নামি তুই আমার হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে দিস।তারপর তুই নামিস।এক পা সিড়িতে দিতেই ট্রেন সামনের দিকে চলতে শুরু করল। আমার পা সরে গেল।দরজার রেলিং ধরে ঝুলে থাকলাম।কয়েক সেকেন্ড পর অনুভব করলাম আমি নিচে পড়ে গেছি।

প্রচন্ড ভয়ে আমি চিৎকার করতে লাগলাম। শুনতে পাচ্ছি পিংকি ও উপর থেকে চিৎকার করছে।সে কি এক ভয়ংকর অনুভুতি..... হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমার একটা পা যেন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।একটা চিকৎকার করলাম তারপর চিৎকার করার শক্তি হারিয়ে ফেললাম।আবার অনুভব করলাম বুকের সাথে,কোমরের ট্রেনের নিচের লোহা চাপ লাগছে।দম নিতে পারছিলাম না।মনে হচ্ছিল এটাই আমার জীবনের অন্তিম মুহুর্ত।

সৃষ্টিকর্তার নাম,পিতা-মাতার নাম নিতে নিতে বুঝতে পারলাম ট্রেন থেমেছে ও আমার জ্ঞান আছে।তখন আবার চিকৎকার করলাম।পিংকি কাঁদতে কাঁদতে সবাইকে বলছে আমার বান্ধবীকে বাচাও.....

চেষ্টা করেও আমাকে ট্রেনের নিচ থেকে বের করা যাচ্ছেনা।আমাকে বলা হল হাত দুটো ট্রেনের নিচ থেকে বের করে দিন।আমি হাত বের করলাম।আমাকে টেনে বের করা হলো।

খুব কান্না করছিলাম।ব্যাথা সহ্য করতে পারছিলামনা।রক্তে প্লাটফর্ম ভিজে যাচ্ছে। আমি বললাম চাদর দিয়ে পা বেধে দিতে।কেউ ভয়ে কাছে আসছেনা।যে আমাকে ট্রেনের নিচ থেকে বের করল সে আমার পা বেধে দিল।

আমাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়ি আনতে গেলেন।কপাল খারাপ থাকলে যা হয়।৪০ মিনিট পর ২ টা রিক্সা নিয়ে আসলেন।আমাকে রিক্সায় তোলা হল।হসপিটালে ততক্ষনে খরব পেয়েছেন। উন্নতি দি,কল্পনা দি,পদ্মা দি,আরো অনেকে ছোটো ছুটি করে ওয়াডে নিলেন।

সবাই আমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে ছুটে এসেছেন।আমাকে দেখে অনেকে মাথা ঘুরে পড়ছে।১৫ মিনিটেরর ভিতর ডক্টর এলেন।ওটি রেডি।অপারেশন শুরু হল।আমার একটাই কথা ছিল "স্যার যেভাবে হোক আমার পা রাখবেন। পা কেটে ফেললে আমি যে আর হাটতে পারবনা"

অপারেশন শেষে আমাকে আই.সি.ইউ তে নেওয়া হলো।প্রথমবার মাথা উচু করে দেখলাম সত্যি আমার পা নেই।এক্সিডেন্টের পর থেকে আমার মনে হত এই বুঝি আমার দম টা বের হলো।

কিন্তু আমার মন বলত আমি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাব।তাই হলো।আমাকে সবাই আর্শিবাদ করবেন।

_______________________

শিল্পী সেন । মানবতাবাদী স্বাস্থ্যসেবাকর্মী ।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়