Ameen Qudir

Published:
2018-07-20 20:19:42 BdST

‘তুই কোথা থেকে পাস করছস’ ‘তোর ডাক্তারি সার্টিফিকেট নকল’ ‘ব্যাটা জাঙ্গিয়া খুলে পিটামু ’


অকুস্থলের একটি ছবি। লেখকের সৌজন্যে ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া।

 

ডেস্ক রিপোর্ট-------------

চেম্বারে কি ভয়ঙ্কর নিরাপত্তাহীন ভাবে রোগী দেখেন একজন চিকিৎসক , তার বর্ণনা দিলেন একজন প্রথিতযশ সাংবাদিক। তিনি লিখেছেন সেই বিবরণ , যেখানে সিরিয়াল ব্রেক করে রোগী দেখতে অপারগ ডাক্তারকে নিম্মোক্ত ভাষায় গাল দিচ্ছিল এক সহিংস লোক :

"তেড়ে গেলেন ডাক্তারের দিকে। তারপর যা বললেন তার সব শব্দ হয়তো লিখতে পারব না। কিছু বাক্য বলি–‘তুই কোন জায়গা থেকে পাস করছস’ ‘তোর সার্টিফিকেট নকল’ ‘ব্যাটা জাঙ্গিয়া খুলে পিটামু চিনস আমারে’ ‘এক ঘণ্টার নোটিশে হাসপাতাল বন্ধ করে দিমু’ ‘ব্যাটা কালকাই ম্যাজিস্ট্রেট আইনা ১০ লাখ টাকা জরিমানা করামু তোগো হাসপাতালের, দরকার হলে লগে কইর‍্যা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ আনমু’ ‘১০জন ম্যাজিস্ট্রেট আমগো পায়ে পড়ে আর তুই কে’ এমন আরও কত বিশ্রি কথা! লিখতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।

 লেখাটি ঢাকার এক হাসপাতালে বাংলাদেশের এক প্রথিতযশ সাংবাদিকের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লেখা । তার নাম: মাসুম আলী অপু
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, প্রথম আলো। আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে অনন্য লেখাটি প্রকাশ করলাম। ________________________

সাংবাদিক মাসুম আলী অপু লিখেছেন ____________

আমি লজ্জিত,বিস্মিত,অনুতপ্ত! একজন রোগীর এটেনডেন্ট হিসেবে লজ্জাটা আমারও। আমি মেনে নিতে পারিনি,কিছু করার ছিল না। আজ দুপুরে যে অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে তা বলতেও আমার কষ্ট লাগছে, লজ্জা লাগছে।
ডাক্তাররা একটু এদিকে সেদিক করলেই আমরা হৈ হট্টগোল করে সব এক করে ফেলি। অথচ আমরা রোগিরা;রোগীর আত্মীয়রা যে মাঝে মাঝে কি অন্যায় করে ফেলে সেটা হয়তো অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশও পায় না। প্রাইভেট আরোগ্য-নিকেতনগুলো হয়তো মার্কেটিং এর কথা চিন্তা করে বিষয়টা এড়িয়ে যায়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে কার সঙ্গে ঘটেছে, সেটাও অবশ্য অনেক বড় ফ্যাক্টর।
বুধবার দুপুরে অপেক্ষা করছিলাম ডাক্তারের জন্য । গেন্ডারিয়ার আসগর আলী হাসপাতালে। হেমাটোলজি বিভাগের অপেক্ষা ঘরে আমরা খুব বেশি সংখ্যক রোগী না। এর মধ্যে এক ভদ্রলোক(!) ঢুকলেন স্ত্রী, বাচ্চা এবং সঙ্গে আরও ৭/৮জন নিয়ে। ভদ্রলোক ঢুকেই ব্যতিব্যস্ত। এদিকে ওদিক করছেন। এর মধ্যে তাঁর লোকজন বারবার ডেস্কে থাকা হাসপাতালের কর্মীকে বলছিলেন,সিরিয়াল ব্রেক করে তাঁদের আগে ভেতরে যেতে দিতে...বারবার। একসময় ডাক্তার সাহেব ভেতর থেকে বের হয়ে জিজ্ঞেস করলেন কে তাড়া দিচ্ছে, একটু ধৈর্য ধরুন। সিরিয়াল ব্রেক করা যাবে না...খুব সুন্দরভাবেই তিনি যা বলা যুক্তযুক্ত তাই বলছিলেন। শুনেই রোগীর ওই এটেনডেন্ট ভদ্রলোক রেগে একাকার। তেড়ে গেলেন ডাক্তারের দিকে। তারপর যা বললেন তার সব শব্দ হয়তো লিখতে পারব না। কিছু বাক্য বলি–‘তুই কোন জায়গা থেকে পাস করছস’ ‘তোর সার্টিফিকেট নকল’ ‘ব্যাটা জাঙ্গিয়া খুলে পিটামু চিনস আমারে’ ‘এক ঘণ্টার নোটিশে হাসপাতাল বন্ধ করে দিমু’ ‘ব্যাটা কালকাই ম্যাজিস্ট্রেট আইনা ১০ লাখ টাকা জরিমানা করামু তোগো হাসপাতালের, দরকার হলে লগে কইর‍্যা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ আনমু’ ‘১০জন ম্যাজিস্ট্রেট আমগো পায়ে পড়ে আর তুই কে’ এমন আরও কত বিশ্রি কথা! লিখতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।
কথা শুনে তাঁর পরিচয় পেয়ে গেছি আমরা। ভদ্রলোক (!) নিজের পরিচয়ও দিলেন। তিনি একটি রাজনৈতিক দলের ঢাকা দক্ষিণের সহসভাপতি।
ইতিমধ্যে হাসপাতালের বেশ কয়েকজন কর্মীও এলেন (সম্ভবত কাস্টমার কেয়ারের) । যেহেতু ঐ ভদ্রলোক ‘কিছু একটা’ তাই এসেই তাঁর কাছে কাচুমুচু করে সরি চাইলেন। বড় ভুল হয়ে গেছে, ঠিক হয়নি, আপনাকে চিনতে পারেনি...ইত্যাদি ইত্যাদি।
এক সময় ডাক্তার সাহেব ভেতরে গেলেন। এবং অবশ্যই ঐ ভদ্রলোকের রোগী (সম্ভবত স্ত্রী)কে ঠান্ডা মাথায় দেখলেন। চিকিৎসা পরামর্শ দিলেন।
প্রসঙ্গত, ওই ডাক্তার শুধু বাংলাদেশের অন্যতম সেরা হেমাটোলজিস্ট নন, অমায়িক এবং ভাল মানুষ। আমার জানা এবং দেখা মতে তিনি পুরোদস্তর একজন সৎ মানুষ। সময় নিয়ে রোগী দেখেন। অকারণে টেস্ট দেন না।
আমি আর আমার স্ত্রী, আমাদের দুজনেই মনটা খুব খারাপ হয়েছে। বাসায় ফিরতে ফিরতে আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। কেননা ঐ সময়ে আমি কোন প্রতিবাদ করতে গেলে নিশ্চিত শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হতাম। তা ছাড়া আমি হাসপাতালের কোন প্রতিনিধি না। কি আর বলবো। পরিচয় পেয়ে ঐ হাসপাতালের কর্মীরা যেভাবে উল্টা উনাকেই তেল মারছিলেন...আর আমি কে?
দুপুর থেকে কিছু প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। আচ্ছা এখানে ঐ লোকের জায়গায় যদি কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে কিংবা সরকারিই কোন চাকুরে হতেন কিংবা সাংবাদিকই হতেন– তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবস্থান কি হতো?

_____________________________

লেখাটি লেখককের ফেসবুক থেকে নেয়া।

 

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়