Ameen Qudir

Published:
2019-03-16 21:25:30 BdST

যে অনন্য কর্মের জন্য স্বাধীনতা পদক পেলেন ডা. নুরুন্নাহার ফাতেমা বেগম


 


ডা. শরীফুল আলম রুবেল
_________________________

 

এবছর ‘স্বাধীনতা পদক ২০১৯’ এর জন্য মনোনীত হওয়া ১২ জন ব্যক্তি ও ১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নুরুন্নাহার ফাতেমা বেগম রয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ‘শিশুদের জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি’ নিয়ে কাজ করে আসছেন।

শিশুদের জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি (congenital Heart Defect) এর ক্ষেত্রে অনেক সময় ‘ওপেন হার্ট সার্জারী’ করা দুষ্কর হয়ে পড়ে, এক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বে ‘কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেন’(Cardiac Catheterisation) তথা ‘ডিভাইস ক্লোজার’ এবং ‘বেলুন ভাল্বোপ্লাস্টি’(balloon Vulvoplasty,Intervention) করা হয়। এদেশে ও একই মানের চিকিৎসা দেয়া হয়,যা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ এবং উন্নয়ন এদেশে যাদের মাধ্যমে হয়েছে; অধ্যাপক ডা. নুরূন্নাহার ফাতেমা বেগম তার মধ্যে অন্যতম। যেমন ধরা যাক, লাইভ ভাল্ব (Live valve) প্রতিস্থাপন করা। এটা না করলে,একজন বাচ্চাকে প্রতি ৩-৪ বছর পর পর ওপেন হার্ট (OPEN HEART) সার্জারীর মাধ্যমে ভাল্ব প্রতিস্থাপন করতে হয় কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ বার। সাউথ এশিয়ায় পালমোনারি লাইভ বাল্ব প্রতিস্থাপন (Pulmonary Live valve Replacement ) সর্বপ্রথম তাঁর মাধ্যমে হয়। তিনিই প্রথম ৫ বছর বয়সী একটি বাচ্চার হার্টে Live valve প্রতিস্থাপন করেন, বুক না কেটে।

১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬২ সালে এম,এ,ওয়াদুদ ও ময়নুন্নেছা খাতুন দম্পতির পরিবারে জন্ম নেয়া মৌলভীবাজারের মেয়ে বেড়ে উঠেন সিলেট নগরীর মিরাবাজারে। সিলেট কিশোরী মোহন উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ,সিলেট সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি পরীক্ষা দেন মেডিকেলে। সিলেট এম,এ,জি, ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে এম,বি,বি,এস পাশ করা ডা. নুরূন্নাহার ফাতেমা বেগম ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং পরিচিত সকলের কাছে ‘শিরীন’ নামে পরিচিত। ১৯৮৭ সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে যোগ দেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদানের পাশাপাশি,বর্তমানে তাঁর অনেকগুলো দেশি-বিদেশী ডিগ্রী ও ফেলোশিপ আছে,তিনি পেডিয়াট্রিক্স এ এফসিপিএস (FCPS)করেন,এডিনবার্গ থেকে এফআরসিপি (FRCP),ইউএসএ তে এফএসিসি (FACC) এবং এফএসসিএআই (FSCAI) নামক উচ্চতর ডিগ্রি এবং ফেলোশিপ অর্জন করেন। ১৯৯৮ সালে সৌদি আরব থেকে দুই বছরের ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে তিনি বাংলাদেশের প্রথম শিশু কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। বর্তমানে ঢাকা সিএমএইচ (Combined Military Hospital) এর ‘শিশু হৃদরোগ’ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক হিসাবে তিনি সফলতার সাথে কর্মরত। Neonatal,Paediatric & Structural Interventional Cardiologist হিসাবে এ পর্যন্ত তাঁর অনেকগুলো আর্টিকেল বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

অত্যন্ত মেধাবী এ ডাক্তারের মেধার পরিচয় পাওয়া যায় পোস্ট-গ্রাজুয়েশন পরীক্ষার সময়। ১৯৯৬ সালে এফসিপিএস (FCPS) ভাইভা বোর্ডের পরীক্ষকরা তাঁর মেধার প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘যদি একজন পরীক্ষার্থী ও পাস করে,তবে সেটা ডা. নুরুন্নাহার।’
এম,বি,বি,এস চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষার ফলাফল ও ছিল ঈর্ষণীয়, মেধা তালিকায় ২য়।

তাঁর সামাজিক কর্মকান্ডের স্বাক্ষর হিসাবে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানসমূহ সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
এদেশের নামকরা শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এম,আর, খানের সাথে স্থাপন করা ‘চাইল্ড হার্ট ট্রাস্ট’ তাঁর পরিশ্রমের পরিচয় দেয়।এছাড়া প্রতি শুক্রবারে মৌলভীবাজারের পাকশাইল গ্রামে পিতা মাতার নামে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা “ওয়াদূদ-ময়মুন্নেসা ফাউন্ডেশন” বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ।তাঁদের পরিবারের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সদস্য হলেন থোরাসিক সার্জন ডা.এ,কে,এম রাজ্জাক, যিনি সিওমেক এর প্রাক্তন শিক্ষার্থী। আরেক ভাই এ,কে,এম বদরুদ্দোজা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসাবে এবং বোন ফাহমিদা জলি শিক্ষকতায় কর্মরত আছেন। বড় মেয়ে মার্জিয়া তাবাসসুম ব্যাংকে এবং ছোট মেয়ে মাশিয়াত মাইশা আহমদ যুক্তরাজ্যে মেডিকেল সাইন্সে অধ্যয়নরত।

বিবাহিত জীবনে কর্ণেল ডা. আজহারের (যিনি সিওমেক ১১তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন) সহধর্মিণী এবং দুই কন্যা সন্তানের জননী অসম্ভব সাহসী এ নারীর পথচলা কখনোই সহজ ছিল না। ১৫ বছর বয়সে বাবা-মা দুজনকেই হারান। তাঁর দ্বিতীয় কন্যার অকালপক্ব (Premature) জন্ম বিদেশে ট্রেনিং চলাকালীন সময়ে হয়।এছাড়া নারী বিশেষজ্ঞ হিসাবে ‘শিশু হৃদরোগে’ জায়গা করা ও কষ্টসাধ্য ছিল।পরিবার-ট্রেনিং-চাকুরী-উচ্চশিক্ষা-সামাজিক অবদান সব কিছু সামলানোর স্বীকৃতি হিসাবে এ বছরের স্বাধীনতা পুরষ্কারের জন্য তিনি মনোনীত হয়েছেন।

এছাড়া তাঁর সাথে এবছর পুরস্কার পাচ্ছেন আরেকজন চিকিৎসক ডা. কাজী মেজবাহুন নাহার।

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর দেশের এ সর্বোচ্চ পুরস্কার দিয়ে আসছে। স্বাধীনতা পদকের ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১৮ ক্যারেট মানের পঞ্চাশ গ্রাম ওজনের স্বর্ণপদক, পদকের একটি রেপ্লিকা, ৩ লাখ টাকা ও সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
আগামী ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার তুলে দেবেন।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অধ্যাপক ডা.মইনূল হক্ব স্যার,অধ্যক্ষ সিওমেক।
তথ্য কৃতজ্ঞতাঃ সহকারী অধ্যাপক ডা.মো: শামসুল ইসলাম স্যার,বিভাগীয় প্রধান ফরেনসিক মেডিসিন,সিওমেক।

_______________________

 

ডা. শরীফুল আলম রুবেল। লেখক। 

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়