ডেস্ক

Published:
2021-05-04 02:56:55 BdST

মিলন সমাচার: এই মিলন, সেই মিলন


লেখক এর ছবি 

 

ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
রক্ত রোগ বিশেষজ্ঞ
দুই বাংলায় সমাদৃত সঙ্গীতশিল্পী
-----------------------------------

লেখক হিসেবে ইমদাদুল হক মিলনের শক্তিমত্তা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। তার যাবজ্জীবন, কালাকাল, পরাধীনতা পড়ে মূগ্ধ হয়েছিলাম। মিলনের ছোট গল্প 'গাহে অচিন পাখি' বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গল্পের তালিকায় ঢুকে যেতে পারে অনায়াসে। 'গাহে অচিন পাখি'র মিলনকে আমি ভুলতে পারিনা।

এনটিভিতে মিলন একটি বায়োগ্রাফিক্যাল অনুষ্ঠান উপস্থাপন করতেন। উপস্থাপক মিলনও দারুন বুদ্ধিদীপ্ত এবং বাচিক উৎকর্ষে দীপ্তিমান।

মিলনের নাটক বাংলা টিভি নাটকের ইতিহাসে স্থায়ী আসন পেয়ে গেছে। সংশপ্তক (নাট্যরূপ), কোন কাননের ফুল, রূপনগর ভোলার মত নয়। মিলনকে লেখালেখি করেই জীবিকা নির্বাহ করতে হয়েছে৷ বাংলাদেশের দ্রুত বিকাশমান পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে মিলন নিজেকে দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত অবস্থাতেও দেখতে চাননি। তাই সেই শুরুর কিছুদিন পর থেকেই পুঁজির কাছে আত্মসমর্পণ করেই গেছেন। জীবনের নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়েছেন। নানারকম চাকরি, ব্যবসা, প্রোডাকশন হাউজ - সব শেষে এখন কালের কন্ঠের চাকুরে।

২০০০ সালে প্রথম আলোতে তাঁর একটা লেখা পড়েছিলাম। নতুন শতাব্দীতে তিনি কি বদলাতে চান? মিলন লিখেছিলেন তিনি নিজেকে বদলাতে চান। তিনি আর কোন সস্তা, চটুল, বাজারধরা লেখা লিখবেন না। কারণ যে অর্থনৈতিক দৈন্যের কারণে তিনি তা লিখতে বাধ্য হতেন সেটা কেটে গেছে। প্রডাকশন বিজনেসে (নাটক টিভিসি ইত্যাদি বানানো) তিনি তখন ভাল করছিলেন। বেশ গোছানো অফিস টফিস নিয়ে এলাহী কারবার। কালের স্রোতে মিলনের সেই ব্যাবসাটাও শেষ হয়ে গেল কয়েকবছর পর। লোকসান খেয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেলেন। প্রচুর প্রায়ভেট চ্যানেল হওয়া, নাটকের দাম পড়ে যাওয়া, প্রোডাকশন বিজনেসে বড় টাকাওয়ালা ব্যবসায়ীদের ঢুকে পড়া, দর্শকের রুচি পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে মিলনের মত একে একে আরো অনেকেই গুটিয়ে নিলেন প্রোডাকশন বিজনেস।

এরপরই ধরলেন কালের কন্ঠ।
শুরুতে সাহিত্য সম্পাদক। ভালই করছিলেন। আমি কালের কন্ঠের বেশ ক'টি সাহিত্য পাতার বিশেষ সংখ্যা সংগ্রহ করেছিলাম কারণ সেগুলো মিলনের মুন্সিয়ানায় বেশ উঁচুমানের হয়ে উঠেছিলো।

বসুন্ধরা গ্রুপের সাথে প্রথম আলো গ্রুপের বেশ একটা যুদ্ধ শুরু হলো সেবার। নগ্নভাবে আক্রমণ করছিল বসুন্ধরা গ্রুপ প্রথম আলো/ ট্রান্সকম গ্রুপকে।

ব্যাবসায়িক গোষ্ঠির এই গ্রুপবাজির সাথে আপোষ করতে না পারায় আবেদ খান প্রধান সম্পাদকের পদ ঘোষণা দিয়ে ছেড়ে দিলেন। মিলন চলে এলেন সম্পাদকের আসনে।

মিলন হতাশ করেননি মালিকপক্ষকে। সেই থেকে পারপাজ সার্ভ করে চলেছেন নিষ্ঠার সাথে।

সম্পাদক হিসেবে তিনি বিশেষ কোন মৌলিকত্ব দেখাতে পারেননি। আপাতত দামী ফ্ল্যাটে থাকেন, দামী গাড়িতে চড়েন, উচ্চ বেতন পান, অভিজাত জীবনযাপন করেন এই নিয়েই তিনি সুখী।

এ জন্যই হয়ত বলে মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। মিলন হয়ত এমন জীবনের স্বপ্নই দেখেছিলেন। তিনি হয়ত ভাল থাকবেন, ভাল পরবেন, ভাল খাবেন- এটাই চেয়েছিলেন। হয়ত লেখালেখি করেই সেটা চেয়েছিলেন, হয়নি। শেষে সম্পাদকের চাকরি থেকে পেলেন সেই কাংক্ষিত জীবন।

আমি বিশ্বাস করি মিলন তার একাকী সময়ে একজন কালজয়ী লেখক হতে না পারার বেদনায় পুড়েন, মুখে বা লেখায় তিনি যা'ই বলুন। গাহে অচিন পাখির ইমদাদুল হক মিলনকে আমি কোনদিন ভুলবোনা।
হয়ত মিলনও সেই মিলনকে মিস করেন।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়