Ameen Qudir

Published:
2018-12-14 00:15:44 BdST

এটি কি আসলে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান? না টাকা বানানোর কারখানা



অরবিন্দ পাল অখিল_________________


বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে বিজ্ঞান শিক্ষকদের (বিএস-সি শিক্ষক) কাছে নাজেহাল (নিগৃহীত) হন নি, অথবা আতংকিত থাকেন নি এমন ছাত্র-ছাত্রী খুব কম পাওয়া যাবে অন্তত এ দেশে। সম্প্রতি রাজধানীর অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নুন গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারির আত্মহত্যার ঘটনাটি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে আমরা কেমন অমানবিক শিক্ষক দ্বারা শিক্ষিত করে তুলছি আমাদের ভবিষ্যত নাগরিকদের।

ঢাকার একটি নামী স্কুলের অবস্থা যদি এই হয় সারাদেশে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থিরা কি অবস্থায় আছে তা সহজেই অনুমেয়। আমাদের শিশুরা বেড়ে উঠছে শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। যা স্বাভাবিক বলে আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু যাদের আচার আচরণ অনুসরণ করে যাদের আদর্শ নিয়ে শিক্ষার্থিরা বড় হবে তাদের কাছ থেকে পুরস্কার প্রাপ্তি যদি এমন হয়, সেটা মেনে নেয়া কষ্টকর। আমাদের সন্তানেরা বেড়ে উঠছে সতত আতংক, হীনমন্যতার মধ্য দিয়ে। সব সময়ই তারা কিছু জানে না, কিছু বুঝে না, এমন ভাবতে শেখায় অধিকাংশ শিক্ষকেরা এমন অনেক প্রমান আছে । অনেক শিক্ষক নিজেদের যাদুকর ভাবেন। তারা একবারও ভাবেন না নিজের শৈশবের কথা। আমরা অভিভাবকরাও আমাদের সন্তানদের মনোবিকাশের সুস্থ ধারার দিকে না তাকিয়ে একটি অসম, অশুভ এবং কৃত্রিম প্রতিযোগিতায় ঠেলে দিচ্ছি। কিন্তু ওই প্রতিযোগিতার মাঠ যে মসৃণ নয় সেখানে তারা কিভাবে বেড়ে উঠছে কি মানসিকতা অর্জন করছে তা ভাবলে অবশ্যই শংকিত হতে হয়। মহামান্য আদালত এ ঘটনাটি হৃদয় বিদারক এবং মেয়ের সামনে বাবা মায়ের অপমানকে বাজে ঘটনার দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করেছেন। এ বাজে ঘটনা ঘটিয়েছেন রাজধানীর একটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিনজন শিক্ষক যাদের আমরা মানুষ গড়ার কারিগর অভিধায় প্রকাশ করি।
আমি নিশ্চিত অরিত্রীর বাবা-মা স্কুল সময় ছাড়াও সকাল সন্ধ্যা প্রাইভেট টিচার/ টিউটর দিয়ে পড়িয়েছেন। হয়তো এমনও হয়েছে অরিত্রীরা প্রাইভেট- টিউশনের কারণে বছরের ছুটির সময়গুলোতে কোথাও বেড়াতেও যেতে পারে নি। সব বাবা -মা ই চায় তার সন্তান সুশিক্ষায় শিক্ষিত হউক। অরিত্রীর বাবা মাও তাই চেয়েছিলেন। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে অরিত্রীর মাকে এক বারের জন্যও বসতেও দেয়া হয় নি। অসহায় বাবা-মাকে হেনেস্তা করা হয়েছে অপমান করা হয়েছে। নকলের শাস্তি তাকে দেয়া যেত প্রচলিত নিয়মেই। কিন্তু তা না করে বাবা-মাকে অপমান অপদস্থ করা হয়েছে তাদের আত্মজার সামনেই। কতটুকু কষ্ট পেলে একটি মানুষ আত্মঘাতি হয় তা মনোবিদরা ভাল বলতে পারবেন। পত্রিকা মারফত ( দৈনিক বাংলাদেশের খবর, ৬ ডিসেম্বর ‘১৮) জানা গেছে সে ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় হয়েছিল। ৬ টি ভাষায় কথা বলতে পারতো , গীটার বাজাতে পাড়তো। নিঃসন্দেহে সৃজনশীল ছিল অরিত্রী, সে খারাপ ছাত্রী ছিল না। সারা বছর ক্লাস করে প্রাইভেট পড়ে যদি তাকে নকল করতেই হয় তখন প্রশ্ন জাগে আমাদের গুনধর শিক্ষকরা তাকে কি পড়িয়েছেন কি বুঝিয়েছেন ! শুধু কাড়ি কাড়ি টাকা কামানোই যদি উদ্দেশ্য থাকে। তবে এ প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না বলে ‘মানি মেইকিং মেশিন বা মানি মেইকিং লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে ঘোষণা দেয়া যেতে পারে।
মর্মান্তিক এ ঘটনার দায় একজন শিক্ষার্থির অপরাধের চেয়ে শিক্ষক তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর বর্তায় বৈ কি! গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) শিক্ষমন্ত্রী ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলেন সেখানে তিনি বলেছেন,‘ এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়।’ তিনি বিষয়টি জানেন তাহলে এতদিন কোন ব্যবস্থা নেন নি কেন ? সেদিন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পাহাড়সম অভিযোগের কথা শোনেছেন। এসব ঘটনায় অবাক হতে হয় এটি কি আসলে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান? না টাকা বানানোর কারখানা।


অনেকে হয়ত মনে করবেন আমি নকলের পক্ষে সাফাই গাইছি । বিষয়টি একটু চিন্তা করে দেখুন, আপনি যদি কাউকে কোন একটি বিষয় বুঝিয়ে দিতে পারেন তবে অবশ্যই তাকে নকলের সাহায্য নিতে হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে মোবাইল নেয়ার উপর বিধি নিষেধ ছিল কি না জানি না। তবে কি করে অরিত্রী মোবাইলটি নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারলো? অরিত্রীকে টিসি দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন তারা। নকল করার দায়ে তাকে টিসি দেয়া হলে সে ঢাকার কোন স্কুলে ভর্তি হতে পারতো কি না সন্দেহ ! বিষয়টি অন্যভাবে দেখা যেতে পারে যদি একটি সিট খালি হয় তবে লক্ষ টাকার ব্যবসাটাও করা যাবে। পত্রিকা থেকে আরও জানা যায় আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। চাকুরী থেকে বরখাস্ত, আর এমপিও বাতিল কোন শাস্তি নয়। এদের হাত খুব লম্বা চাকুরী যোগাড় করা কোন কঠিন বিষয় নয়। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শিফট -ইন- চার্জ জিনাত আক্তার শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনার এমন শাস্তি চাই যা বাংলাদেশে অমানবিক শিক্ষকদের কাছে উদহারণ হয়ে থাকেবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতি দলবাজি এবং অনৈতিক অর্থলোভীদের সহায়ক প্রতিষ্ঠান না হয়ে সু নাগরিক এবং ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে মানবিক শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির বেশি প্রয়োজন। যে খানে শিক্ষকেরা শিক্ষকতাকে অন্য দশটি পেশার মত না নিয়ে ব্রত হিসেবে নেবেন। অরিত্রীর অনাকাঙ্খিত মৃত্যু আমাদের উদার করুক শিক্ষকরা নির্লোভ হউক মানবিক হউক এ প্রত্যাশা আমদের অভিভাবক সমাজের। অরিত্রীর মৃত্যুই উন্মোচন করুক মানবিক শিক্ষার দূয়ার ।
_________________________

লেখক- একজন বিচলিত অভিভাবক ও শিক্ষক।


অরবিন্দ পাল অখিল
নান্দাইল, ময়মনসিংহ।

ই মেইল [email protected]

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়