Ameen Qudir

Published:
2018-02-13 17:07:19 BdST

প্রবাসী সিনিয়র সাংবাদিক বললেন, স্যালুট বাংলাদেশ ! কেন !


 

 


বদলে যাচ্ছে কি বাংলাদেশ। বাংলাদেশে থেকে সবসময় পরিবর্তনগুলো ধরা পড়ে না। ধরা পড়ে প্রবাসীদের চোখে।দীর্ঘদিন ধরে কানাডা প্রবাসী সিনিয়র সাংবাদিক, প্রথম আলো সহ দেশের শীর্ষ সংবাদপত্রে কাজ করা তুখোড় সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর সম্প্রতি ঘুরে গেলেন বাংলাদেশ। ফেরার পথে জানালেন তার অভিজ্ঞতার কথা।

 


শওগাত আলী সাগর
কানাডা প্রবাসী সিনিয়র সাংবাদিক

_______________________________

 

সেদিন এয়ারপোর্টের মুখে ঢুকতেই সামনে আটকে থাকা সারি সারি গাড়িগুলো চোখে পড়লো। না, এটা জ্যাম নয়। প্রতিটি প্রাইভেট কার, প্রতিটি সিএনজিই তল্লাশি করছে পুলিশ। পেছন থেকে দেখতে পাই- কোনো কোনো গাড়ীর পেছনের বনেট খুলে লাগেজও দেখছে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মরত।


রাস্তায়, বিমানবন্দরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে এটা আগেই টের পেয়েছিলাম। দিনটা ৮ ফেব্রুয়ারি বলে কথা। দুদিন ধরেই সারাদেশে এক ধরনের আতংক বিরাজ করছে। অন্তত নিয়মিত টেলিভিশন যারা দেখেন তারা তো রীতিমতো ‘ট্রমাটাইজড’ হয়ে আছেন। টিভি চ্যানেলগুলো তাদের সংবাদ পরিবেশনার কৌশলে পুরো দেশকে আতংকিত করে ফেলতে পেরেছে।


আমার ফ্লাইট ৫টায়। উত্তরা থেকে এয়ারপোর্টে যেতে সামান্য সময়ের ব্যাপার। তবু আমি বাসা থেকে বের হয়েছি দুপুর দেড়টায়। কারন কিছুক্ষণের জন্য টিভির খবর দেখে আমি নিজেও ‘ট্রমাটাইজড’ হয়ে পড়েছিলাম। খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর যখন আদালতের উদ্দেশ্যে রাস্তায়, আমি তখন বিমানবন্দরের প্রবেশপথে নিরাপত্তা তল্লাশির অপেক্ষায়।


: ‘স্যার- আপনাদের পাসপোর্টগুলো’- চমকে ওঠি আমি। পুলিশ অফিসারের মুখে স্মিত হাসি।‘আপনারা কয়জন স্যার?’- তিনি জানতে চান। হাতের পাসপোর্টগুলো গুনে গাড়ির ভেতর তাকিয়ে আপনমনেই বলেতে থাকেন- চারজন, ফ্যামিলি স্যার?
: হ্যাঁ- আমি অল্প কথায় উত্তর দেই। উত্তর দেবো কি- আমি আসলে অফিসারের দিকেই বার বার তাকিয়েছিলাম। সারাদেশ এক ধরনের ট্রমাটাইজড।ঢাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার প্রচন্ডরকমের গুরুদায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর একটা জায়গার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন পুলিশ সদস্য এতোটা নিয়ন্ত্রিত থেকে, এতোটা শান্ত থেকে এমন ভীড় সামলাচ্ছেন কিভাবে?
:’আমরা প্রতিদিন এমন তল্লাশি করি না। আজ বাড়তি ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। আপনি নিশ্চয় সেটা জানেন স্যার।
আমি অফিসারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি।
: আপনার অসুবিধার জন্য দু:খিত, আপনার ভ্রমন আনন্দদায়ক হউক হউক, আপনি যেতে পারেন স্যার।
খানিকটা এগুতেই আরেকজন পুলিশ সদস্য। চেহারা দেখে মনে হলো খুবই অল্প বয়স্ক। দেখেই মনে হলো- মুচকি মুচকি হাসছে।
: স্যার, আপনাদের পাসপোর্টগুলো?
: একটু আগেই তো দেখালাম।
: জ্বী, আমি জানি স্যার। আমাকেও দেখতে হবে। সম্ভবত বিমানবন্দরে ঢোকার আগে সামনে আরেকদফা দেখা হবে। আপনাদের নিরাপত্তার জন্যই আমাদের বাড়তি এই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে স্যার।
পাসপোর্ট আর গাড়ির আরোহীর মাথা গুনে সামনে যাবার ছাড়পত্র দেন তিনি। চমৎকার একটা হাসি দিয়ে ‘আপনাদের ভ্রমন আনন্দদায়ক’ হউক- কথাগুলো ছুড়েঁ দেন তরুন এই পুলিশ সদস্য।


বিমানবন্দরে ঢুকতে ঢুকতে দুই পুলিশ সদস্যের আচরণ মাথায় ঘুরতে থাকে। বাংলাদেশের পুলিশও তা হলে রাস্তায় সাধারন একজন যাত্রীকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করেন? প্রচন্ডচাপের মধ্যেও বাংলাদেশের পুলিশ এমন উঁচু পেশাদারিত্ব রেখে, এমন সুন্দর করে কথা বলে?
টার্মিনালে গাড়ি থেকে নেমে পেছনের দিকটায় তাকাই। দুই পুলিশ সদস্যের কারো চেহারাই স্পষ্ট দেখা যায় না। কিন্তু বিমানবন্দরের প্রবেশ পথে তারা দায়িত্ব পালন করছেন- সেটা বোঝা যায়। সেই দৃশ্যটার দিকে আমি অপলক তাকিয়ে থাকি। ফিস ফিস করে বলি, স্যালুট অফিসার, স্যালুট বাংলাদেশের পুলিশ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়