SAHA ANTAR, Kolkata

Published:
2022-09-07 07:36:47 BdST

বাংলাদেশ ভারত যেসব মউ স্বাক্ষর হল : লাভের খতিয়ান



অভিজিৎ চৌধুরী , কলকাতা
__________________
কুশিয়ারা নদীর জল বণ্টন সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত-বাংলাদেশ।
তিস্তার জল বণ্টন নিয়ে দীর্ঘ কয়েক দশকের আলোচনা এখনও ফলপ্রসূ হয়নি। তবে এরই মাঝে এবার গুরুত্বপূর্ণ এক নদীর জলবণ্টন নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হল ভারত-বাংলাদেশের। এদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর এই সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় দুই দেশের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী মোদী আজকে এই বিষয়ে বলেন, ‘ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ৫৪টি নদী প্রবাহিত হয়। উভয় দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে যুক্ত এই নদীগুলি। এই আবহে আজ আমরা কুশিয়ারা নদীর জল বণ্টন সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছি।’


এদিন ভারতবর্ষ প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং হাসিনা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বন্যা প্রশমনে একে অপরের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। আমরা বাংলাদেশের সাথে বন্যা সংক্রান্ত রিয়েল-টাইম ডেটা শেয়ার করছি এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়েও আলোচনা করেছি। এটা অপরিহার্য। আমরা একসাথে সেই শক্তির মোকাবিলা করি যারা আমাদের প্রতিপক্ষ।’ মোদী-হাসিনা আরও বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ ও পারমাণবিক খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নিয়েও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।’

আজকে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকের পর মোদী বলেন, ‘আজ ভারতের উন্নয়নের বৃহত্তম অংশীদার বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলে আমরা একে অপরের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক সহযোগিতাও ক্রমাগত বাড়ছে।’ প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘গত বছর আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করেছি। আমরাও প্রথম মৈত্রী দিবস উদযাপন করেছি। আগামী দিনে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে।’

 

ভারতে এসে কী কী মউ স্বাক্ষর করলেন হাসিনা? কী ভাবে উপকৃত হবে বাংলাদেশ : আনন্দবাজার পত্রিকা

তিস্তা জলবণ্টন নিয়ে সুরাহা হবে বলে আশা করেছিল বাংলাদেশ, মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে তা নিয়ে আশ্বাসও মিলেছে। তবে মউ স্বাক্ষর হয়েছে কুশিয়ারা নদীর জলবণ্টন এবং আরও ছ’টি বিষয় নিয়ে।


হাসিনার ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে মোদী-হাসিনার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর দু’জনে একটি যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানেই ওই সাতটি মউ স্বাক্ষরিত হওয়ার ঘোষণা করা হয়। যার অনতিবিলম্বে হাসিনা তাঁর ধন্যবাদ জ্ঞাপক বক্তৃতায় বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, তা যে কোনও দু’টি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের আদর্শ হতে পারে।


কিন্তু যে সাতটি মউ স্বাক্ষর করার পর হাসিনা এ কথা বলেছেন, তার মূল বিষয় কী? ঠিক কোন কোন বিষয়ে ঢাকাকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দিল্লি? জানা যাচ্ছে, এই তালিকায় যেমন কুশিয়ারা নদীর জলবণ্টনের বিষয় রয়েছে, তেমনই, বাংলাদেশের রেল, বিচার ব্যবস্থা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এমনকি পরমাণু ক্ষেত্র নিয়েও মউ সই করেছে দু’দেশ।


প্রথমেই বলা যেতে পারে কুশিয়ারা নদীর জলবণ্টন সংক্রান্ত সমঝোতার কথা। দু’দেশের এই সমঝোতাকে ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন মোদী। মোদী বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ৫৪টি নদীর উপর দু’দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে। স্থানীয় মানুষের জীবন যাপনও নির্ভর করে। এর মধ্যে কুশিয়ারা নদীর জল বণ্টন নিয়ে দু’দেশের যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশে সিলেট অঞ্চল এবং ভারতের দক্ষিণ অসম উপকৃত হবে।


উল্লেখ্য, কুশিয়ারা নদীতে বাঁধ সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। নদীটি বন্যাপ্রবণ। সম্প্রতি কুশিয়ারা নদীর দুই তীরের ভাঙন বাংলাদেশ সরকারকে চিন্তায় ফেলেছে। ভারত জানিয়েছে কুশিয়ারা থেকে ১৫৩ কিউসেক জল নিয়ে নেবে ভারত। এতে এই নদী থেকে হওয়া বন্যার সমস্যায় সিলেট অঞ্চল আর ভুগবে না বলেই আশা। এ ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার কথাও বলেছেন মোদী।

দু’দেশের দ্বিতীয় সমঝোতাটি হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে। এর ফলে বাংলাদেশের রেলব্যবস্থা আরও উন্নত হবে বলে মনে করছে ভারত।


যাত্রিবাহী ট্রেনের পাশাপাশি মালবাহী ট্রেন যথাযথ ভাবে চালানোর যে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রযুক্তি, তাতে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে ভারত। এ ছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের সার্বিক ‘আইটি অ্যাপ্লিকেশেন’-এর ক্ষেত্রেও সাহায্য করবে ভারত।


শুধু মাত্র তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রেই নয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণেও সাহায্য করবে ভারত। এটিই ভারত-বাংলাদেশের তৃতীয় সমঝোতা।


এই মউ অনুযায়ী বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীরা ভারতীয় রেলের ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও ভারতের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন হাসিনা।


ভারত-বাংলাদেশের চতুর্থ সমঝোতায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা সংক্রান্ত আধিকারিকদের আরও উন্নত মানের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের আরও কুশলী হতে সাহায্য করবে ভারত।


পঞ্চম মউ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি সংক্রান্ত। ভারতের প্রধান বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি সংক্রান্ত সংস্থাগুলি বাংলাদেশের এ বিষয়ক মূল সংস্থাগুলির সঙ্গে পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান করবে। ফলে একসঙ্গে আরও উন্নতির পথে এগোবে দু’দেশ। এমনটাই দাবি করা হয়েছে মউ-এ।

এ ছাড়া এই একই সমঝোতায় বলা হয়েছে, শিল্প গবেষণা সংক্রান্ত দু’দেশের সংস্থা নিজেদের মধ্যে গবেষণালব্ধ তথ্য আদানপ্রদান করবে।

মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সহযোগিতার সমঝোতা হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। এটি ভারত এবং বাংলাদেশের ষষ্ঠ মউ।

টিভি সম্প্রচারের ক্ষেত্রেও ‘সমঝোতা স্মারক’ সই করেছেন মোদী-হাসিনা। প্রসার ভারতী এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন এ ব্যাপারে পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করে চলবে।

তবে এই সাতটি মউ বা সমঝোতা স্মারক ছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয়ে দু’দেশের সহযোগিতার উল্লেখ করেছেন মোদী।

মোদী বলেছেন, ‘‘আমরা তথ্য প্রযুক্তি, মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে সহযোগিতার পাশাপাশি পরমাণু শক্তির মতো বিষয় অর্থাৎ তরুণ প্রজন্ম যা নিয়ে বেশি ভাবে, সে ব্যাপারে পারস্পরিক সহযোগিতার কথাও ভেবেছি। এ ছাড়া ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ‘পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইন’ নিয়েও কথাবার্তা এগিয়েছে।’’

বাংলাদেশে উন্নয়নের সমস্ত ক্ষেত্রেই ভারতের সহযোগিতা পেয়ে থাকে। তবে দু’দেশ এ বার একটি ‘কমপ্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ’ চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। অর্থনৈতিক বিষয় ছাড়াও, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং আরও অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।


তবে এ সত্ত্বেও নিজের ধন্যবাদ জ্ঞাপক বক্তৃতায় তিস্তার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন হাসিনা। বলেছেন, ‘‘আমার আশা, তিস্তা নিয়েও দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’’ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই ১৯৭২ সালে তিস্তার জল নিয়ে যৌথ নদী কমিশনের দ্বিতীয় সভায় আলোচনা হয়। ১৯৮৩ সালে অন্তর্বর্তী কালীন একটি চুক্তিও হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রাপ্য ছিল ৩৬ শতাংশ, ভারতের ৩৯ শতাংশ আর ২৫ শতাংশ জল ছিল নদীর নাব্যতা বজায় রাখার জন্য। ১৯৮৫ সালে সেই অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ১৯৮৭ সালে মেয়াদ আরও দু’বছর বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আর কোনও চুক্তি হয়নি। হাসিনার আশা সেই চুক্তিও অদূর ভবিষ্যতে হবে।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়