SAHA ANTAR

Published:
2022-09-05 18:45:53 BdST

হরলিক্স ও কমপ্ল‍্যানের ভুল তথ্য


ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়, ডায়াবেটিস এনডোক্রাইনোলজি কনসালটেন্ট

 

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়,
ডায়াবেটিস এনডোক্রাইনোলজি কনসালটেন্ট
______________________
২০০৮ সালের কথা । হরলিক্সের 'টলার, স্টংগার, শার্পার' বিজ্ঞাপন চরম তুঙ্গে । এই হরলিক্সের বিজ্ঞাপন প্রচার করছিল নেপালী এক চ্যানেল । নেপালী সেই চ্যানেল ব্রডকাস্ট হচ্ছিল লন্ডনের কিছু নেপালী পাড়ায় । লন্ডনের এক এ্যাডভোকেট তো সেই বিজ্ঞাপন দেখে আকাশ থেকে পড়লেন ! কারণ যুক্তরাজ্যে 'sleeping aid pill' হিসেবে খাওয়ানো হয় হরলিক্স মল্টেড দুধকে । সেটা কিভাবে 'টলার, স্ট্রংগার, শার্পার' করে সেটা জানতে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে দেন । মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রচার করায় হরলিক্সের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এএসএ ।
তারা তখন মস্করা করেই বলেছিল - “দক্ষিণ এশিয়ানরাই এই সব জিনিস খাবার হিসেবে খাবে ।” তাই হচ্ছে আজকাল আমাদের দেশে ।
আমাদের দৈনিক খাবারের আইডিয়াল মেনু কে 'RDA' বলে আর ব্যালেন্সড ডায়েট হতে যা যা লাগে তার খুব সামান্যই আছে এই সব খাবারে । আসল কথা হল, হরলিক্স অথবা কমপ্লানের মতো খাবার US FDA দ্বারা approved নয় । তবুও সবাই খাচ্ছে মুড়িমুড়কির মতো আর বিজ্ঞাপনের প্যাঁচে পড়ে 'সব পুষ্টিগুণের আশায় ভাত মাছ বাদ দিয়া হরলিক্স আর কমপ্লান নিয়া পইড়া থাকে মায়েরা ।' বিজ্ঞাপনের আন্টির ডায়লগটা শুনলেই মেজাজ গরম হয় - "যত বার দুধ, ততবার হরলিক্স ।"
'বর্নভিটা' নামক আরেক দুধ কোম্পানী দাবী করে, তাদের প্রোডাক্ট দৈনিক প্রোটিন চাহিদার ৪০% পুরণ করে । অথচ তাদেরই ফাইন প্রিন্টে লেখা আছে বর্নভিটার দুধে খুব সামান্যই প্রোটিন আছে । নিজেরাই নিজেদের কথার বিরোধী ।
হরলিক্স এবং কমপ্লান দুটো কোম্পানীই দাবী করে যে, তাদের দুধে সুষম পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে । কিন্তু কমপ্লানে প্রতি ১০০ গ্রামে এদের পরিমাণ যথাক্রমে ১৮ গ্রাম, ৬২ গ্রাম, ১১ গ্রাম, ৮০০ মিগ্রা ও ৭৮০ মিগ্রা । সেখানে হরলিক্সের প্রতি ১০০ গ্রামে এদের পরিমাণ যথাক্রমে ১১ গ্রাম, ১৪ গ্রাম, ২ গ্রাম, ৭৪১ মিগ্রা ও ২৮০ মিগ্রা । এদের তুলনায় বোর্নভিটা ও বুস্টে এসব পরিমাণ আরো অনেক কম থাকে । তাহলে এখন বলুন কোনটা আসলে সুষম । দামের হিসাবে সবাই কিন্তু প্রায় সমান ।
সুতরাং আপনার শিশুর পুষ্টির চাহিদা জানতে ডায়েটিশিয়ানের কাছে যান । বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ হয়ে ভুল বুঝবেন না ।
জুনিয়র হরলিক্সে কী পরিমাণ ডিএইচএ আছে, তা পরীক্ষা করে দেখেন BCSIR-এর বিজ্ঞানীরা । প্রতিবেদনটি বলছে - "ইলিশের প্রতি ৪০ গ্রামে ১০ গ্রাম তেল পাওয়া যায় যার মধ্যে ডিএইচএ ছিল ৫৭ মিলি গ্রাম । একই পরিমাণ ‘নিউ জুনিয়র হরলিক্স উইথ ডিএইচএ’-তে ০.৫৫ গ্রাম তেল পাওয়া গেলেও কোনো ডিএইচএ পাননি গবেষকরা ।"
এখানে উল্লেখ্য, ডিএইচএ সমৃদ্ধ খাবার খেলে মস্তিষ্ক, ত্বক এবং চোখের রেটিনার উন্নতি হয় ও কার্যকারিতা বাড়ে ।” DHA অর্থাৎ Decosa Hexaenoic Acid একটি ওমেগা-৩ প্রাইমারি অ্যামিনো এসিড ।
যাই হোক, জীবনের প্রথম ৬ মাস মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই । কিন্তু বছরের পর বছর যদি বাচ্চাকে সাপ্লিমেন্টারি ফুড না দিয়ে দুধের উপর নির্ভরশীল করে ফেলেন, তাহলে 'মিল্ক ইঞ্জুরি' নামক রোগের শিকার হতে পারে আপনার বাচ্চা । সেই বাচ্চা ফোলাফাঁপা থাকবে (oedematous) প্রোটিনের অভাবে কিন্তু ভেতরে সব ধরণের পুষ্টির ঘাটতিতে ভুগবে । তখন কোথায় থাকবে সেই 'টলার, স্ট্রংগার, শার্পার !' বদলে তখন বাচ্চাকে বলবে - 'ফ্যাটার, উইকার, লুজার' (fatter, weaker, looser) ।
বিজ্ঞাপন মানুষের মাথায় ভুত হিসেবে ঢুকছে । এটা আপনার সাধারণ বুদ্ধি বিবেচনা ও বিবেককে নষ্ট করে দিচ্ছে । সচেতন হোন নিজের জন্য, নিজের সন্তানের জন্য ।@
___________________
ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় ভারতবর্ষের একজন শীর্ষ
ডায়াবেটিস এনডোক্রাইনোলজি কনসালটেন্ট ;তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। এমডি করেছেন। কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
তিনি বাংলা, ফরাসী , ইংরাজী সহ বহুভাষায় পারদর্শী।

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়