ডা শাহাদাত হোসেন

Published:
2022-08-28 19:47:29 BdST

সুগার বয়, সুগার গার্ল


প্রতিকী ছবি । মডেল হয়েছেন অনুপমা পরমেশ্বরন

 

 

ডা. সাঈদ এনাম
______________________


"বাবু তুমি কেনো বোঝনা, আমি একটা সংসার করি। আমার বাচ্চা কাচ্ছা আছে, স্বামী আছে, সমাজ আছে। এ অবস্থায় তোমাকে আমি বিয়ে করবো কিভাবে"? অলকা খানিকটা ঝাঁজ নিয়ে বলেন।

"তাহলে তুমি আমার সাথে প্রতারণা করছো। আমাকে মোটেও ভালোবাসনা। ভালোবাসলে অমন বলতেনা, আমার হাত ধরে চলে যেতে", অভিমান করে উত্তর অমিত।

অলকা অমিত কে কাছে টানেন। মাথার চুল গুলো আলতো করে টেনে দেন।

"বাবু তোমার মাথা আজ বড্ড বেশী গরম আসো টান্ডা করে দেই", কাছে টেনে নেন অমিত কে মিসেস অলকা।

অমিত ভার্সিটিতে পড়ে। অলকা গৃহিণী। স্বামী সন্তান বাড়ি গাড়ি সবই আছে। তবুও কি যেনো নেই। সেই 'নেই' থেকেই তার ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে অমিতের সাথে।

তাদের সম্পর্ক দু'বছর গড়ালো। কেউ টের পাননি, সন্দেহও করেন নি। অলকাকে সবার সামনে আন্টি বলেই ডাকে অমিত।

কিন্তু ইদানীং অমিত বেশী ইমোশনাল। পালিয়ে বিয়ে করতে চায় অলকা কে। অলকার পক্ষে এ অসম্ভব। বেকার, চরিত্রহীন, লম্পট একটা ছেলের সাথে পালিয়ে যাবেন, অসম্ভব। আবার এভোয়েড করতেও খারাপ লাগছে।

দুজন দুজনের সাথে একেবারে মিশে গেছেন।

অলকার স্বামী আজ সাকলায়েন সকালের ফ্লাইটে ব্যবসার কাজে কয়েকদিনের জন্যে সিংগাপুর গেছেন। অলকা তাই সকাল সকাল ফোন দিয়ে অমিত কে আনেন। উদ্দেশ্য আদর করে আজ অমিত কে বুঝাবেন। মাথা থেকে বিয়ের চিন্তা তাড়াবেন। রাণী-রাজত্বের স্বপ্ন ভেঙে দিতে হবে।

"অমিত, আমার স্বামী আমার সাথে একটা প্রতারণা করেছেন। তিনি আমার নামে ব্যাংক থেকে ৫ কোটি টাকার লোন নিয়ে ব্যবসা খুলেছেন সিংগাপুর। আমি গতরাত ব্রিফকেসের ফাইল পত্র ঘেটে পেলাম। কি করা যায় অমিত? আমি ভয়ে আছি। কখন কোন মামলায় ফেঁসে যাই"।

অমিত চমকে যায়। "বলো কি? এতো বড় প্রতারণা! তোমার স্বামীতো ভারী বদমাশ। কি হবে এখন"?

"হ্যা আমিও তাই ভাবছি। অমিত তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই। এই বিপদে তুমি আমার পাশে থেকো। এ সময় আমাদের আরো সাবধানে চলতে হবে। ইমোশনাল হওয়া যাবেনা, ধৈর্য ধরে থাকতে হবে"।

অমিত জড়িয়ে ধরে অলকাকে। "জান ভয় পেয়ো না আমি আছি,থাকবো আজীবন, এভাবে পাশাপাশি"।

ডোমেস্টিক লাউঞ্জে প্রিয়াঙ্কা অপেক্ষা করছে। আজ ৩ দিনের ট্যুরে কক্সবাজার যাবে। সাকলায়েন সাহেব পিছন থেকে এসে গালে একটা টোকা দিলেন। প্রিয়াঙ্কা চমকে যায়, "অফ এত্তো দেরী তোমার"?
সাকলায়েন সাহেব হাসেন, "আরে সিংগাপুরের বুকিং ক্যান্সেল করে কক্সবাজারের বুকিং দিলাম, এতেই দেরী...। চলো মাই সুইট ডল, মাই সুইট বেবী..."

-----------
ভন্ড 'নারায়ণ-পীর' বাবারা.....

সুমনা (ছদ্মনাম) বয়স ২৪ হঠাৎ করে উল্টোপাল্টা আচরণ শুরু করেছেন। মা-বাবা, ভাই-বোন কাউকেই মানছেন না, কারো কথা শুনছেনা। অসভ্য, অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ আর উশৃংখল আচরণ করেই চলেছেন।

তাঁকে বেঁধে রাখাও দায়। এরই মাঝে ছোট ভাইকে বসার পিঁড়ি দিয়ে মেরে তার মাথার তালু ফাটিয়ে দিয়েছেন।

ভুত প্রেতে- আছর লেগেছে, খারাপ বাতাস গায়ে লেগেছে এই ভেবে তারা ডজন খানেক ভন্ড মোল্লা অলরেডি 'অন-কলে' দেখিয়েছেন। কোন কাজ হয়নি। বরং উৎপাত বেড়েই চলেছে। হাদিয়া হিসেবে কয়েক হাজার নাই।

অবশেষে কোন এক টাউটের কথায় তারা 'নারায়ণ পীর' কে আনার ব্যবস্থা করলেন। ইয়া মোটা নারায়ণ পীর পালকি ছাড়া আসেন না। তার জন্যে বিশ পায়ার একটা পালকি লাগে। তার ওজন ৪০০ কেজি।

নারায়ণ পীর সাহেব নাকি জন্মসুত্রে 'পীরাকি' লাভ করেছেন। তার বাবা পরিচিত ছিলেন 'ল্যাংটা পীর' পারে। বছরের ২/৩ মাস তিনি ল্যাংটা হয়ে মাজারে মাজারে ঘুরতেন। তাই তার নাম ল্যাংটা পীর। আবার বস্তা পরিধান করতেন বলে কেউ কেউ বস্তা পীর ও ডাকতেন।

লোকে বলতো ন্যাংটা বা বস্তা পরা অবস্থায় পীর সাহেব যা বলতেন তাই নাকি হয়ে যেতো। অনেকে তাকে চিনতেন ইঞ্জিন পীর হিসেবে। কেনো 'ইঞ্জিন পীর' বলা হতো তাকে? তারও একটা ছোট ইতিহাস আছে।

একবার এক ইন্টারসিটি ট্রেন মাঝপথে বিকল হয়ে যায়। কোন ইঞ্জিনিয়ার কুলকিনারা করতে পারেনা। ন্যাংটা পীর কে তখন ধরাধরি করে নিয়ে আসা হয়। সে নাকি ট্রেনের ইঞ্জিনের চিমনী দিয়ে প্রশ্রাব করে দেয় আর ওতেই নাকি ইঞ্জিন স্ট্রার্ট হয়।

আসলে এগুলো মুখে মুখে রটনা, কিংবা ন্যাটা পীর কে নিয়ে যারা ব্যবসা ফেঁদেছিলেন ব্যবসা চাঙা করতেই ওদেরই একটা সাজানো ছোট নাটক।

যাহোক ভটকু টাইপের 'নারায়ণ পীর' তার দল বল নিয়ে এসে 'আসন' পাতলেন সুমনাদের ঘরে। সুমনাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলেন। তার এক হাতে একটা বেত আরেক হাতে তসবিহ। তসবিহ পরে কয়েকটা ফুঁ দিতেই সুমনা চিৎকার দিয়ে উটলো, 'ওরে ভোটকা ভইন্ডা, তুই আইছস কিত্তে'।

নারায়ণ পীর গম্ভীর হয়ে বললেন, 'হুম খুব খারাপ বাতাস লেগেছে। সারারাত জিকির আজগার করতে হবে, কোরান খতমও লাগবে। সাথে একটা কালো গরু আল্লাহর রাস্তায় দিয়ে দিতে হবে। গরীব খাওয়াতে হবে। তবেই ভুত যাবে..'।

যেমন বাবার নির্দেশ তেমন কাজ। সারারাত নারায়ণ পীরের টিম জিকির আজগর করলেন। গরু জবাই হলো। ধুমসে ভূরিভোজন চললো।

সুমনার বাবার এক রাতে ৫০ হাজার টাকা নাই। তিনি চিন্তিত নন। টাকা বড় কথা নয়, মেয়েটা ভালো হলেই হলো। ফজরের নামাজ পরে পীর সাহেব মোটা অংকের হাদিয়া নিয়ে টিম সহ লাপাত্তা।

এদিকে সারারাত না ঘুমিয়ে সুমনার অবস্থা আরো খারাপ। সকালে হাতে বটি দা দিয়ে সে নারায়ণ পীর কে খুঁজেছে। ঘুমুতে দেয় নি তাকে। যাহোক ভাগ্য ভালো নারায়ন পীর ভোরেই লা-পাত্তা।

সুমনাকে বেঁধে আনা হলো চেম্বারে।

সে মুলত ব্রেইনের রোগ বাই-পোলার মুড ডিসওর্ডার (BIPOLAR MOOD DISORDER/ BMD) এর রোগী। ব্রেইনের ডোপামিন (DOPAMINE NEUROTRANSMITTER/ DA) নামক হরমোন জাতীয় ক্যামিকেলের তারতম্যে এরকম হয়ে থাকে।

ঠিক এক বছর আগে তার এরকম হয়েছিলো। তখন প্রথমে ভন্ড পীর, মোল্লা, কবিরাজ পরে জনৈক এক মৌলভীর পরামর্শে ব্রেইনের ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। সে সুস্থ হয়েছিলো। কিন্তু একটা ঔষধ নিয়মিত কয়েকদিন খাওয়ানোর পরামর্শ ছিলো। সেটা তারা করেন নি।

যথাযথ ধর্মীয় জ্ঞান ও সু-শিক্ষার অভাবে দেশের ব্রেইন বা মানসিক রোগীরা চরম অপচিকিৎসার শিকার। আর এর ফায়দা নেয় ভন্ড "নারায়ন-পীর" বাবারা।
____________________
ডা. সাঈদ এনাম
(ডিএমসি-কে ৫২, বিসিএস -২৪)
সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি
সিওমেক।

 

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়