SAHA ANTAR
Published:2022-03-02 23:31:47 BdST
ওরা বলতে থাকল, "রক্ত চোষাটা আমাদের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে"
লেখক
ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
_______________
গতকাল রাতে আমি শান্তিতে বসে ইন্টারনেট চালাচ্ছিলাম, তখনই হঠাৎ কতকগুলো মশা এসে আমার রক্ত চুষতে শুরু করে দিল। ইন্দ্রিয়ের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার দরুন আমার থাপ্পড় পড়ল এবং ওদের দু-একটাকে পিষে ফেলল।
তারপর ??
তারপর মশারা চেঁচাতে শুরু করে দিল যে আমি অসহিষ্ণু হয়ে গেছি।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "এতে অসহিষ্ণুতার কী হল?"
ওরা বলতে থাকল, "রক্ত চোষাটা আমাদের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে।"
ব্যাস! "স্বাধীনতা" শব্দটা শুনতেই অনেক "বুদ্ধিজীবী" ওদের পক্ষ নিয়ে আমার সাথে তর্ক আরম্ভ করে দিল।
তারপর শুরু হয়ে গেল শ্লোগান --
"..কিতনে মচ্ছর মারোগে,
হর ঘর সে মচ্ছর নিকলেগা.."
বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের যুক্তি তর্কের সাথে খবরের কাগজে বড় বড় লেখা লিখতে শুরু করল।
তাদের যুক্তি ছিল মশারা দেহের উপরে বসেছিল, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা রক্ত চুষছিল, আর যদি চুষছিল তবুও অন্যায় কিছু করেনি এবং ওটাকে "দেহদ্রোহ" বলা যেতে পারে না। কারণ ওটা ওদের মৌলিক অধিকার।
আমি বললাম, "আমি আমার রক্ত চুষতে দেব না।"
তখন ওরা বলতে লাগল, "এটা উগ্র দেহপ্রেম। তুমি কট্টরপন্থী। সামান্য একটু রক্ত চোষার ফলে তোমার তো আর মৃত্যু হয়ে যাবে না! সামান্য কারণে তুমি ঐ বেচারা নির্দোষ মশাদের মেরে ফেলতে পার না।"
এরই মধ্যে কিছু রাজনৈতিক নেতা নেত্রীও এসে পড়ল, এবং তারা মশাদেরকে তাদের "বাগানের গর্ব" বলে উল্লেখ করল।
বিরক্ত হয়ে আমি বললাম, কিন্তু এইভাবে মশাদের রক্ত চুষতে দিলে ম্যালেরিয়া বা 'অজানা জ্বর' হতে পারে, যার ফলে দুর্বলতার কারণে মৃত্যু ঘটাও অসম্ভব নয়।
তখন তারা বলতে লাগল, "তোমার কাছে কোনো যুক্তি নেই, তাই তুমি কেবলমাত্র ভবিষ্যতের কল্পনার উপর ভিত্তি করে তোমার ফ্যাসিবাদী সিদ্ধান্তকে সত্য প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছ।"
আমি উত্তর দিলাম, "মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া বা 'অজানা জ্বর' হতে পারে এটা একটা বৈজ্ঞানিক সত্য এবং অতীতে এর ফলে হাজার হাজার লোকের মৃত্যুও ঘটেছে।"
এটা শুনে বুদ্ধিজীবীরা বলতে থাকল, "তোমার উচিৎ বর্তমানে বাঁচা। তুমি অতীতের রাগের ফলে বর্তমানের ঐ মশাদের মেরে ফেলতে পার না।"
এরপর সমস্ত মশারা মিলে আমার কানের কাছে চেঁচাতে থাকল, "স্বাধীনতা নিয়েই ছাড়ব। স্বাধীনতা নিয়েই ছাড়ব।"
এরপর আমি সত্যিই বিরক্ত হয়ে উঠলাম।
অবশেষে আমার মনে পড়ল, "যেমন কুকুর তেমন মুগুর।"
আর তারপর আমি একটা "কালা হিট"-এর স্প্রে নিলাম এবং ঐ মশাদের "জনসভা থেকে শুরু করে মিছিলে, বাগান থেকে শুরু করে নর্দমায়, ওদের প্রত্যেকটা গোপন আস্তানায়" স্প্রে মারতে লাগলাম।
মশাদের দল একবার দ্রুত ছিন্নভিন্ন হল, তারপর সব স্তব্ধ। তারপর থেকে না কোনো তর্ক, না কোনো বিবাদ, না কোনো স্বাধীনতা, না কোনো আন্দোলন।
এখন সবকিছু ঠিকঠাক আছে।
এটাই জগতের নীতি। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করতে হলে অনেক বাধা বিপত্তি আসে। অনেকের চুলকানি হয়। তখন তাদের চুলকানিতে স্প্রে মেরে নিজ কর্তব্য পালন করতে হয়।।
আপনার মতামত দিন: