SAHA ANTAR

Published:
2021-12-21 21:33:01 BdST

মর্মান্তিক "মেয়েরা শুধু মাতৃগর্ভ ও কবরে সুরক্ষিত"


 

ডা সাদিয়া তামান্না রানু

_____________________
মেয়েরা শুধু মাতৃগর্ভ ও কবরে সুরক্ষিত।

এই নির্মম কান্নার হতাশা যেমন ঢাকাতে, তেমনি চট্টগ্রামে ; একইভাবে বঙ্গোপসাগরের ওপারে চেন্নাইতেও।

এক মেয়ে সুইসাইড নোটে লিখে গেছে এই চরম শোচনীয় বাস্তবতার কথা।

ঢাকায় কি দেখছি।
কোন নিশ্চয়তা নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এলমা চৌধুরী হত্যার সুবিচার হবে।
এরই মধ্যে চট্টগ্রামে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী স্বামী ও স্বামী পরিবারের হাতে খুন হয়েছে।
চেন্নাইয়ের স্কুল ছাত্রীর কথায় যেন পুরো উপমহাদেশের নারীজীবনের শোচনীয় বাস্তবতা।

 


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী এলমা চৌধুরীর বাবা সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ‘আসামিপক্ষ প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর। বিচার ঠিকমতো পাব কি না, সংশয়ে আছি।’ আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক মানববন্ধনে মেয়ে হত্যার বিচার চাইতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা ইউনিভার্সিটি ধামরাই স্টুডেন্টস ফোরাম এলমা চৌধুরী হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করে। এলমার বাড়ি ধামরাইয়ে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে মেয়ে হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে এলমার বাবা বলেন, তিন দিন ধরে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে এলমাকে হত্যা করা হয়। তিনি দায়ী ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবি জানান।

 

এম এ ইসলাম আরিফ বলেন, ঘাতক স্বামী গ্রেপ্তার হলেও শ্বশুর–শাশুড়ি এখনো গ্রেপ্তার হননি। তাঁদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, এলমার ক্ষেত্রেও ভিকটিম ব্লেইমিং হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে। হত্যাকারী যেন মানসিক রোগী সেজে পার না পেয়ে যান। এ ছাড়া বিবাহিত হলেও ছাত্রীরা যেন হলে সিট পান। তা না হলে এলমার মতো পরিণতি অনেকের হতে পারে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষার্থী যদি এভাবে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যান, তাহলে দেশের অন্য নারীদের কী অবস্থা হতে পারে! তাঁরা এলমা হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এলমা চৌধুরীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এলমার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় এ হত্যা মামলা করেন।

মামলায় এলমার স্বামী ইফতেখার আবেদীন, তাঁর মা শিরিন আমিন ও ইফতেখারের পালক বাবা মো. আমিনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাঁর স্বামী ইফতেখারকে আটক করে পুলিশ। ইফতেখার কানাডাপ্রবাসী। তিনি সম্প্রতি ঢাকায় ফেরেন বলে জানায় পুলিশ।

 

এক স্কুল পড়ুয়া নাবালিকা সুইসাইড নোটে নিজের যন্ত্রণাবিদ্ধ মনের কথা ব্যক্ত করেছে, তাতে চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে চেন্নাই (Chennai) শহরে। চরম পদক্ষেপ করার আগে সুইসাইড নোটে যৌন নিগ্রহের শিকার হওয়া ওই নাবালিকা লিখেছে, “মেয়ের শুধু মাতৃগর্ভ আর কবরেই সুরক্ষিত”।তার কথায়, “স্কুলেও সুরক্ষিত নয় মেয়েরা, শিক্ষকদেরও বিশ্বাস করা যায় না।” ওই নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বছর একুশের কলেজ পড়ুয়া এক যুবককে। যদিও পুলিশের ধারনা আরও কেউ কেউ নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহ করে থাকতে পারে।

শনিবার নিজের বাড়িতেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয় স্কুল পড়ুয়া। নাবালিকার মা বাজার থেকে ফিরে মেয়ের ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মৃত স্কুল পড়ুয়ার সুইসাইড নোটে ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা ও বিষাদের অভিজ্ঞতার কথা থাকলেও তার পরিবার সে কথা জানত না বলেই জানা গিয়েছে।
পুলিশের দাবি, ধৃত যুবক ইতিমধ্যে অপরাধ স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে পকসো (POCSO) আইনে মামলাও রুজু করেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, নাবালিকার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছে অভিযুক্ত। গত দুই সপ্তাহ ধরে নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহ করে সে, শারীরিক নির্যাতনও চালায়। এছাড়াও যুবক নাবালিকাকে আপত্তিজনক মেসেজ ও ছবি পাঠাত। যদিও অভিযুক্ত যুবক ও নাবালিকার মধ্যে তার আগের আট মাস ধরে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল।

এদিকে মৃত নাবালিকা যে ভাষায় সুইসাইড নোট লিখেছে তা নিয়ে চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে। নাবালিকা লিখেছে, “মেয়ের শুধু মাতৃগর্ভ আর কবরে সুরক্ষিত। স্কুলও সুরক্ষিত জায়গা নয়। শিক্ষকদেরও বিশ্বাস করা যায় না।” সুইসাইড নোটে নাবালিকা আরও জানিয়েছে, গত বেশ কিছুদিন ধরে সে মন দিয়ে পড়াশুনা করতে পারত না, ঘুমোতেও পারত না, কারণ তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে এই দৃশ্য সে স্বপ্নেও দেখত। অন্তিম পত্রে নাবালিকা আরও লিখেছে, “ছোট থেকেই বাবা-মায়েদের শেখানো উচিত মেয়েদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয়।” চিঠির শেষে নাবালিকা লেখে, “যৌন নির্যাতন বন্ধ হোক”, “আমি যেন বিচার পাই”।

চট্টগ্রামে যৌতুকের জন্য স্বামীর নির্যাতনে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক ছাত্রীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মারা যাওয়া ছাত্রীর নাম মাহমুদা খানম ওরফে আঁখি। তিনি নগরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবির শিক্ষার্থী ছিলেন।

মাহমুদার স্বামীর নাম আনিসুল ইসলাম। তিনি পেশায় আইনজীবী।

মাহমুদার মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর বড় ভাই নিজাম উদ্দিন বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের চাঁদগাঁও থানা একটি মামলা করেন। এ হত্যা মামলায় আনিসুলকে আসামি করা হয়েছে।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়