Dr.Liakat Ali

Published:
2021-09-25 18:58:29 BdST

৭৮ বছর পর মায়ের সঙ্গে অভিমানী পুত্রের প্রথম সাক্ষাতে শতায়ু মা বললেন,"তোর ছোটবেলায় হাত কেটে গিয়েছিল, মনে পড়ে কি ধন!"


জননী ও তাঁর পুত্র

 


সংবাদ দাতা
____________________

ফেসবুকের কল্যাণে মায়ের দেখা অবশেষে পেলেন ছেলে এই বাংলাদেশেই। বাল্যকালের সামান্য অভিমান মা ও ছেলের মধ্যে সৃষ্টি করে ছিল ৭৮ বছর দীর্ঘ অভিমান। মা শতায়ু হওয়ায় সৌভাগ্য। মিলন হল মা ও পুত্রের। দেখা হলো অবশেষে যখন পু্ত্রের নাতিপুতি হয়ে গেছে। 

মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে ৮৫ বছরের  পুত্র কুদ্দুস বলেন, `আমার মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে প্রথম যখন কথা বলি, তখন মা আমাকে বলে, তুই আমার হারিয়ে যাওয়া আব্দুল কুদ্দুস? তোর ছোটবেলায় হাত কেটে গিয়েছিল। মায়ের মুখে এ কথা শোনার পরে আমি বলি, মা তোর কুদ্দুসের কোন হাত কেটে গিয়েছিল? তখন মা বলে, বাম হাতের বুড়ো আঙুল কেটে গিয়েছিল। তখন বুঝতে পারি তিনিই আমার মা।'

 


শৈশবে অভিমান করে বাড়ি ছেড়েছিলেন আঃ কুদ্দুস। সেটা ৭৮ বছর আগের ঘটনা। ছেলের পথ চেয়ে থাকতে থাকতে মারা গেছেন বাবা। তবে আশা ছাড়েননি মা। বয়স ১০০ পেরোলেও মায়ের বিশ্বাস ছিল, অভিমান ভেঙে ছেলে ঠিকই ফিরবে, মা বলে ডাকবে তাঁকে। ঘটলও তাই। প্রায় আট দশক পর ছেলের মা ডাক শুনেছেন জননী।

 

 কুদ্দুস মুন্সী জানান, কিছুদিন আগে আইয়ুব আলী নামের পরিচিত একজনের কাছে তাঁর হারিয়ে যাওয়া গল্প বলেন তিনি। সেই ঘটনা ফেসবুক আইডিতে আপলোড করেন আইয়ুব আলী। সেখানে তিনি শুধু পিতা-মাতা ও নিজ গ্রাম বাড্ডার নাম বলতে পারেন। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাড্ডা গ্রামের বাসিন্দারা সাড়া দিতে থাকেন। একপর্যায়ে কুদ্দুসকে খুঁজে পান তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

কথার একপর্যায়ে নিজের হারিয়ে যাওয়ার গল্পও শোনান কুদ্দুস। যখন তিনি অভিমান করে ঘর ছাড়েন, তখন তাঁর বয়স ছিল সাত। এখন তিনি ৮৫ বছরের বৃদ্ধ। কুদ্দুস জানান, ৭৮ বছর আগে ফুপার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে রাজশাহীর বাগমারায় বেড়াতে আসেন তিনি। সেখানে প্রায় দুই বছর থাকেন। একদিন ফুপুর সঙ্গে মনোমালিন্য হয় তাঁর। খুব মারধর করেন ফুপু। সেই রাগে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে আর পাওয়া যায়নি।

 কুদ্দুসের ভাষ্য, ‘আমি ফুপার বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে আত্রাইয়ের সিংসাড়া গ্রাম পর্যন্ত চলে আসি। সন্ধ্যার দিকে খয়মুন নামের এক বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা হয়। তিনি ভিক্ষা করে সংসার চালান। আমি তাঁকে নিজের কষ্টের কথা বলি। আমার কথা শুনে ওই মহিলা তাঁর গ্রামের জনৈক সাদেকের বাড়িতে নিয়ে যান আমাকে। সাদেকের কোনো সন্তান ছিল না। তাই তিনি আমাকে বাড়িতে ঠাঁই দেন। সেখানেই আমি বড় হই। এমনকি তাঁরাই আমাকে খতনা দেন। পরে পনেরো বছর বয়সে একই এলাকার চৌউড়বাড়ী গ্রামে তাঁর এক আত্মীয়ের মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে দেন সাদেক। বিয়ের পর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে বারুইপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করি। সেখানে আমার তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে হয়। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলে দেশের বাইরে থাকে।'

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়