ডেস্ক
Published:2021-05-12 18:59:10 BdST
ইদ জলসাবাদশাই খানা : এক সের ঘিয়ে একটি লুচি ভাজা হতো সম্রাট আকবরের জন্য
ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
রক্ত রোগ বিশেষজ্ঞ
দুই বাংলায় সমাদৃত সঙ্গীতশিল্পী
________________________
খানা এ আকবরী
এবং বেগমাৎ ই ছালিয়াৎ
************************
সম্রাট আকবর লুচি খেতে বিশেষ পছন্দ করতেন। এবং উনার লুচি খাবার বিশেষ কোন সময় ছিলোনা। রাত তিনটায় ঘুম থেকে উঠে উনার লুচি খেতে ইচ্ছে হলে তখনই রেঁধে দিতে হবে৷
তাই সব রকম আয়োজন করাই থাকতো। শুধু বলার অপেক্ষা৷
আয়োজন বলতে লুচির খামির প্রস্তুত করার জন্য থাকতো নির্দিষ্ট জমি থেকে উৎপাদিত গমের ময়দা, ১০৩ পদের ডাল, খাঁটি ঘি ইত্যাদি।
এক সের ঘিয়ে একটি লুচি ভাজা হতো, একাধিক না। ঘি গরম হয়ে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছালে পরে সেখানে ছাড়া হতো লুচি। একবার একটি লুচি ভাজা হলে সেই ঘি ফেলে দেওয়া হতো। নোকররাও সেটা ব্যাবহার করতে পারতোনা।
লুচি খেতেন সাধারণত কোয়েলের মাংস দিয়ে। আহারের পর পান খেতেন। সেই পান বানাতো দক্ষ পানসাজিরা। একশর উপর জর্দার আইটেম ছিলো। সেসব দিয়ে অনবদ্য পানের খিলি বানানো হতো। তবে সুপারিটা কাটতেন হারেমের নির্ধারিত বেগমরা। বেগম মানে কি? সেটারও ক্লারিফিকেশন আছে৷ তার জন্য আরেকটা লেখা লাগবে।
যাইহোক, বেগমদের কাটা সুপারিটা ছিলো শাহী পানের সবচেয়ে সুক্ষ অংশ। সেই সুপারি কাটার একটা বিশেষত্ব ছিলো। চৌকোনা করে কাটা সুপারি। প্রতিটি চৌকো টুকরো হতো একই মাপের। কোনা গুলো বিশেষভাবে কাটা হতো যেন কোন শার্প এন্ড না থাকে, মুখে চোট না লাগে। এই সুপারি কাটার সিলসিলাকে বলা হতো "বেগমাৎ ই ছালিয়াৎ''।
খানাদানার এই শাহী খান্দান চালু ছিলো শেষ সম্রাট (আসলে পুতুল সম্রাট) বাহাদুর শাহ জাফরের সময় পর্যন্ত। বাহাদুর শাহ জাফরের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ৮০-৯০ পদের খাবার থাকতো। মেহমান থাকলে সে সংখ্যা আরো বেড়ে যেত। ইফতার করতেন শ খানেক পদ দিয়ে। ময়ুরের পেখম দিয়ে বানানো কাবাব, বাছুরের বুকের গোশত দিয়ে বানানো কাবাব, ভেড়ার রান দিয়ে বানানো রোস্ট, বঙাল মুলুকের সুমিষ্ট পাকা আম, জাফরানমিশ্রিত পেস্তা বাদামের শরবত, গোলাপ জল,কেওড়া দেওয়া জিলাপি ইত্যাদি আইটেম থাকতো।
এইসব বাদশাহী জীবন যাপনের ব্যায় ভার মেটাতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে তিনি পেতেন বাৎসরিক একলক্ষ টাকা বৃত্তি। সিপাহী বিদ্রোহের পর তিনি যখন বন্দী হন তখন তার জন্য বরাদ্দ ছিল দৈনিক এগার টাকা। সে আরেক ট্র্যাজেডি। সে গল্প আজকে থাক।
আপনার মতামত দিন: