Dr. SAYEED ENAM
Published:2021-05-07 18:20:19 BdST
প্রসঙ্গ ভুতে ধরা
ডা. সাঈদ এনাম
__________
প্রসঙ্গ ভুতে ধরা
মিঃ আব্দুল্লাহ (ছদ্মনাম) বয়স পচাত্তর সারা জীবন প্রায় নিরোগ ছিলেন। গত পাঁচদিন যাবৎ অদ্ভুত এক উপসর্গ দেখা গেলো তার মধ্যে। রাত্রে ঘুমিয়ে পড়লেই তিনি কথাবার্তা, হাত-পা নাড়াচাড়া শুরু করে দেন। কথাবার্তা অনবরত চলতে থাকে। কথা গুলো বুঝা যায়। দিনে যা করেন মোটামুটি সেগুলোই। শুধু রাত্রে নয় মাঝেমধ্যে দিনের বেলাও যদি দু চোখের পাতা লেগে যায়, তবেই শুরু হয় রাজ্যের কথাবার্তা!
ঘুম ভেংগে গেলে তাকে জিগ্যেস করলে তিনি তেমন কিছু মনে করতে পারেন না। কখনো কখনও অস্বীকার করেন। আচার আচরণ এ খানিকটা পরিবর্তন ও দেখা দিচ্ছে। বিষয়টি রহস্যময়।
ঘুমের মধ্যে এরকম কথাবার্তা বলা উপসর্গ আব্দুল্লাহ সাহেবের অতীতে কখনোই ছিলোনা।
তার হাত-পা অবস হয়ে যাওয়া , চেতনা হারিয়ে যাওয়া, শরীরের এক পাশ বা কোন অংশ ঝিন ঝিন, শিন শিন করছে তেমন কিছুও নেই।
আব্দুল্লাহ সাহেবের কোন রুপ মানসিক সমস্যা ছিলোনা। তার নিকটাত্মীয় কারোও মধ্যে এমনটি নেই।
তার হাইপ্রেশার বা ডায়বেটিস নেই। নেই হাপানী বা শ্বাসকষ্ট। এমন কি এ জাতীয় রোগের জন্যে কোন ঔষধ তিনি কখনও সেবন করেন নি কেবল গ্যাস্ট্রিকের বড়ি ছাড়া।
রাত্রে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে তার এমন আচরণ তার পরিবারের সবাইকে ভীষণ চিন্তায় ফেলে দিলো। তারা ভাবলেন হয়তো ভুতে ধরা টরা কিছু একটা হবে। কবিরাজ দেখিয়ে তাবিজ টাবিজ দিয়েছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছেনা। উন্নতি না দেখে তারা ভাবলেন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো উচিত, ঘুমিয়ে পড়লেই অনবরত কথা বার্তা খানিকটা ভয়ের ও।
তার ইতিহাস, বয়স, উপসর্গের ধরণ কিছুটা (হঠাৎ দেখা দেয়া) ব্যাতিক্রম বিধায় তাকে জরুরি ভাবে CT Scan of Brain করার পরামর্শ দেওয়া হলো। সাথে রাতে ঘুমের ঘোরে যে সব আচরণ করেন যেমন কথাবার্তা, হাত-পা ছুড়াছুঁড়ির এসবের একটা ভিডিও যেনো অবশ্যই করে আনেন সে পরামর্শ দেয়া হলো।
আব্দুল্লাহ সাহেবের ছেলে কোন গাফিলতি করেন। তিনি বিচক্ষণ ব্যাক্তি।
সিটি করিয়েছেন, ভিডিও করে এনেছেন সাইকিয়াট্রিস্ট এর চেম্বারে।
মিঃ আব্দুল্লাহ সাহেবের সিটি স্ক্যান এ স্ট্রোক ধরা পড়েছে। তার ব্রেইনের বেসাল গ্যাংগলিয়া (Basal Ganglia) এবং থ্যালামাস (Thalamus) এ রক্ত চলাচলে বিঘ্ন হয়েছে। এটা এক ধরনের স্ট্রোক।
তবে স্ট্রোকের জন্যে তার অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, হাত পা অবশ হয়ে যাওয়া আরো নানান উপসর্গ যা সাধারণত থাকে তার ক্ষেত্রে এমন দেখা দেয় নি। বিষয়টি নিতান্ত রহস্যময় জটিল এবং এটিপিক্যাল। তার ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে চোখ বন্ধ কিন্তু তিনি অনবরত কথা বলেই যাচ্ছেন। হাত পা নাড়াচ্ছেন।
তার লক্ষন কেবল ঘুমিয়ে পড়লে কথাবার্তা আর হাত পা ছুড়াছুঁড়ি। কবিরাজ একটা ভালো কাজ করেছে তাকে ফ্রেংজিট বা ডেনজিট দিয়ে ভৌতিক চিকিৎসা করেনি। এ চিকিৎসা কবিরাজ, কোয়াক ও কিছু কছু চিকিৎসকদের খুব প্রিয়ো।
তাকে জরুরী ঔষধ দিয়ে দ্রুত ওসমানীতে ভর্তি হবার পরামর্শ দেয়া হলো, কেননা আরো কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা প্রয়োজন।
'ভুতে ধরা' বলে আসলে জগতে কিছু নেই। এসব কুসংস্কার। আমাদেরকে এসব কুসংস্কার থেকে বের হতে হবে। আধুনিক চিকিৎসার শরণাপন্ন হতে হবে।
(ঘুমের মধ্যে কথা বলা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। এটা এক ধরনের স্লিপ ডিসওর্ডার বা প্যারাসমনিয়া বলে। প্যারাসমনিয়া অনেক প্রকারের)
ডা. সাঈদ এনাম
(ডিএমসি, বিসিএস)
সাইকিয়াট্রিস্ট
সহকারী অধ্যাপক।
আপনার মতামত দিন: