SAHA ANTAR

Published:
2020-12-10 18:09:51 BdST

"কবরে শুইয়া শুইয়াও যেন আমি মেয়েদের কলকোলাহল শুনতে পাই"


ডেস্ক 

বেগম রোকেয়াকে কম বেশী সবাই চেনেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে তিনি তাঁর শেষ ঘুমটা ঘুমিয়ে আছেন সোদপুর পানিহাটিতে। তৎকালীন ধর্মীয় সমাজ বেগম রোকেয়াকে কোন কবরস্থানে কবরের অনুমতি দেয় নি। আজ তাঁর জন্মদিন এবং মৃত্যুদিন।

তৎকালীন মূল কলকাতার কোনো কবরস্থানে সমাহিত করা সম্ভব হয়নি তাকে, কেননা তিনি নারী হয়ে মুসলিম মেয়েদের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন, নারীর অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, এবং রচনা করেছিলেন সাহিত্য। ভদ্রমহিলার নাম, বেগম রোকেয়া।

তাহলে তার কবরটা কোথায়?
ঐতিহাসিক অমলেন্দু দে'র আবিষ্কার, সেটি রয়েছে কলকাতার উপকন্ঠে, সোদপুর পানিহাটিতে।
একটা শ্বেতপাথরে বেদী। তার ওপর লেখা-
স্ত্রী শিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ' বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন'কে এখানে সমাহিত করা হয়েছিল।

যেভাবে মাইকেল মধুসূদনের মরদেহের ওপর খৃষ্টান বা হিন্দু কারো দায় ছিলনা। তার দেহ কে কোথায় কবরস্থ করবে সে নিয়ে বিতর্ক তো ইতিহাস।সেভাবেই লোকচক্ষুর আড়ালে কোনো এক আবদুর রহমানের দেওয়া জমিতে, পানিহাটিতে গঙ্গার ধারে সমাহিত হলেন রোকেয়া।

আবদুর রহমান, কে ছিলেন নিশ্চিত করে জানা যায়না। কেউ বলেন বেগম রোকেয়ার ছোটবোনের বর। কিন্তু তার বোন, হোমায়রা খাতুনের স্বামী তোফাজ্জ্বল হোসেন চৌধুরীর বাড়ি পূর্ববঙ্গে। (তাঁদের পুত্র আমীর হোসেন চৌধুরী নজরুল গবেষক ছিলেন। ইনি রোকেয়ার কাছের মানুষ। হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা প্রতিরোধকালে শহীদ হন)।

আবদুর রহমান বলে একজন "জ্যোতির্ময়ী রোকেয়া" নামে জীবনীগ্রন্থ লিখেছেন, তাঁর সাথে রোকেয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠতা ছিল। ইনিও হতে পারেন। আবার এও হতে পারে রোকেয়ার কোনো কাজিনের স্বামী ছিলেন উক্ত আবদুর রহমান। মোট কথা তার একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য হয়, যিনি ঐ মহীয়সী নারীর জন্য বরাদ্দ করেছিলেন সাড়ে তিন হাত জমি।

মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি তাঁর কোন ছাত্রীকে বলেছিলেন "কবরে শুইয়া শুইয়াও যেন আমি মেয়েদের কলকোলাহল শুনতে পাই।"

সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছিল প্রায় এক দশক বাদে। ঠিক ঐ স্থানেই গড়ে উঠেছে একটি বালিকা বিদ্যালয়!! পানিহাটি বালিকা বিদ্যালয়। কি অসাধারণ সমাপতন।।
( লেখক প্রিয়া সেন)

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়