Ameen Qudir
Published:2017-01-31 16:10:01 BdST
হায় রে খারাপ মেয়ে !
ডা. নাসিমুন নাহার
_____________________
"মেয়েটিকে সবাই খারাপ মেয়ে হিসেবেই চিনে কারন মেয়েটি ডিভোর্সড।''
"মেয়েটিকে সবাই খারাপ মেয়ে হিসেবেই চিনে কারন মেয়েটি তার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ফিজিক্যাল রিলেশনে জড়িয়ে গিয়েছিল।"
"মেয়েটিকে সবাই খারাপ মেয়ে হিসেবেই চিনে কারন এতটা বয়স হয়ে গেলেও মেয়েটি এখনও বিয়েশাদি না করে চাকরি বাকরি করে যাচ্ছে। "
"মেয়েটিকে সবাই খারাপ মেয়ে হিসেবেই চিনে কারন সে নিজ যোগ্যতায় নিজ পরিশ্রমে একা জীবন কাটাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে"।
"মেয়েটিকে সবাই খারাপ মেয়ে হিসেবেই চিনে কারন সে পরপর তিনটা কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে, তার পেট থেকে পুত্র সন্তান প্রসব হয়নি"।
"মেয়েটিকে সবাই খারাপ মেয়ে হিসেবেই চিনে কারন বিয়ের সাত বছর পরেও একটা সন্তানের জন্ম দিতে পারেনি"।
"মেয়েটিকে সবাই খারাপ মেয়ে হিসেবেই চিনে কারন মেয়েটি প্রেম করে বিয়ে করেছে"।
.
.
এখন যদি কেউ বলে, সব দোষ মেয়েটার/মেয়েগুলার, তাহলে কি হবে !!
'এক হাতে যে তালি বাজে না' এই কথাটা তো আমিও বুঝি আপনিও বুঝেন।একই কাজ দু'জন করলে যদি খারাপ হয় তাহলে প্রেম/ফিজিক্যাল রিলেশন/ডিভোর্স/চাকরি সবকিছুর জন্য ছেলে মেয়ে দুজনকেই খারাপ বলা উচিত।
প্রেম তো আর মেয়েটা একা একা করেনি ! ফিজিক্যাল রিলেশন তো আর মেয়েটি কলাগাছের সাথে করেনি !
ডিভোর্সও কেউ কারন ছাড়াই হুদাই সমাজের বালুবাসা : পেতে দেয় না !
শুধুমাত্র পুত্র সন্তান জন্ম দিতে না পারার জন্য অবশ্যই অবশ্যই ছেলেটিকে খারাপ বলতে পারি আমরা :- , এ ব্যাপারে মেয়েদের কোন ভূমিকা নেই, যা বিজ্ঞান সম্মতও বটে !
.
.
'খারাপ' মেয়ে ট্যাগ লেগে যাওয়া মানেই কিন্তু মেয়েটি খারাপ মেয়ে না।আমি/আপনি কে একজন মানুষকে ভালো/ খারাপ বুঝে ফেলবার ? একজন মানুষের কতটুকু দেখে জেনে আমরা জাজ করে ফেলি ? এই সমাজের বেশিরভাগ হিসেবই হয় 'শোনা কথা'র উপর ভিত্তি করে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই 'খারাপ' হিসেবে পরিচিত পাওয়া মেয়েরা জীবনের কোন এক সময়ে নির্মম পরিস্থিতির শিকার / ভিক্টিম।
.
.
দয়া করে,না জেনে কাউকে অপবাদ দিবেন না। একটা মেয়ে হয়তো কখনো ধর্ষিত হয় বয়ফ্রেন্ড নামক মুখোশ ধারীর কাছে, একটা মেয়ে হয়তো বছরের পর বছর স্বামী কতৃক শারীরিক মানসিক অত্যাচারের শিকার, একটা মেয়ে হয়তো তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, একটা মেয়ের হয়ত স্বপ্ন লেখাপড়া ক্যারিয়ার-ঘর সংসারের জন্য হয়তো সে এখনও প্রস্তুত না, একটা মেয়ে হয়তো নিজে শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ হবার পরেও স্বামীর শারীরিক কোন সমস্যার জন্য কনসিভ করছে না, যে মেয়েটার পুত্র সন্তান নেই তার স্বামী তো y সাপ্লাই দিতে পারেনি ক্যামনে হবে পোলা :- ---ইত্যাদি ইত্যাদি এসব হচ্ছে সত্য কারনগুলো ।
কিন্তু আপনারা আসল কাহিনী না জেনে, না বুঝে মালমশলা লাগিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে চারদিকে বলে কয়ে ছড়িয়ে সারাজীবন ধরে মেয়েটিকে টর্চার করতে থাকেন মানসিক এবং সামাজিক ভাবে।
সতর্ক হোন,কে জানে হয়তো কখনো এমন পরিস্থিতিতে আপনিও পড়তে পারেন। যার গ্লানি, অনুশোচনা আপনাকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হতে পারে।
লোকচক্ষুর অন্তরালে সর্বশক্তিমান সবজান্তা একজন আছেন।তাঁর কাছে সবাইকে ঠিকই হিসেব দিতে হবে একদিন।
________________________________
লেখক ডা. নাসিমুন নাহার । জনপ্রিয় কলাম লেখক।
আপনার মতামত দিন: