Dr. Aminul Islam

Published:
2020-11-12 17:58:37 BdST

ভুতে ধরার চিকিৎসা



ডা. সাঈদ এনাম
_________________________


সাইকিয়াট্রি বা মানসিক রোগীদের ব্রেইনের বিভিন্ন অংশে ডোপামিন (DA) নিউরোট্রান্সমিটার (এক ধরনের হরমোন জাতীয় পদার্থ) অনেক বেশী নিঃসৃত হয়। ব্রেইনের এই অতিরিক্ত ডোপামিন এর প্রভাবে সাইকিয়াট্রি বা মানসিক রোগী কিছু এবনরমাল আচরণ করেন। সাইকিয়াট্রি রোগীদের এই অস্বাভাবিক আচার আচরণ দেখে আমাদের গ্রামাঞ্চলের সাধারণ লোকেরা বলেন রোগীটিকে "ভুতে ধরেছে", "উপরি বাতাস লেগেছে" কিংবা কেউ তাকে "যাদু টোনা বান" মেরেছে।

আসলে যাদু টোনা বান এসব কিছুই সত্যি নয়। সাইকিয়াট্রি বা মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সীমিত বলেই সাইকিয়াট্রি রোগকে আমরা কেউ কেউ এমন অদ্ভুত নামে দিয়ে ডাকি। যাদু টোনা বা বান মারা যদি সত্যি হতো তাহলে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার জন্যে এতো কষ্ট করতেন না। জো বাইডেন কে তিনি "বান মেরে" মেরে ফেলতেন। হোয়াইট হাউসে একটা কর্ণার থাকতো, 'বান মারা কর্নার'। লেখা থাকতো, "এখানে একশো ভাগ গ্যারান্টি দিয়ে নিখুঁত ভাবে আমেরিকার শত্রুদের বান মারা হয়"।

যাহোক, অনেক মানসিক রোগীরা আমাদের কাছে এসে বলেন, আমার মাথার ভিতর সারাক্ষণ যেনো পোকা গিজ গিজ করে, আমার মনে হয় আমার চামড়ার নীচে ছোট ছোট পোকা হাটাহাটি করছে। কখনো কখনো তারা বলেন যে, "টের পাই আমার পেটের ভিতর লিভার, পাকস্থলী যেনো এদিক থেকে ওদিক নাড়া চাড়া করছে"। তাদের এই লক্ষন গুলোকেও সাইকিয়াট্রির ভাষায় বলা হয় টেকটাইল হ্যালুসিনেশন। (Tactile Hallucination)। আর এটা সেই ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার এর ওলট পালটের জন্যেই হয়ে থাকে।

সাইকিয়াট্রি বা মানসিক রোগীদের এসব অদ্ভুত আচরণ গুলো সম্পুর্ন রুপে নিরাময় করা যায় এন্টিসাইকোটিক নামের একটা ইনজেকশন বা ট্যাবলেট প্রয়োগে। এই ঔষধ খুব দ্রুত এবং চমৎকার কাজ করে। এটা ব্রেইনের বাড়তি ডোপামিন (DA) এর কার্যকারিতা নষ্ট করে। ফলে যে রোগী এতোক্ষন একা একা কথা বলছিলো, মানুষজন দের তাড়া করছিলো, মারধোর করছিলো, দিনের পর দিন, রাতের পর চিৎকার চেচামেচি করে সব একাকার করে ফেলছিলো সে কিছুক্ষণের মধ্যে শান্ত সুবোধ হয়ে যায় এবং মাত্র কয়েকদিনের চিকিৎসায় সে সুন্দর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।

তাই একে আমি বলি ম্যাজিক ড্রাগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। এটা মেন্টাল পেশেন্টদের জন্যে বিশ্বের সর্বাধুনিক এবং সবচেয়ে কার্যকরী ঔষধ। এবং বাংলাদেশে এর দাম খুবই কম।

কিন্তু আমাদের গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষেরা সাইকিয়াট্রিক পেশেন্টদের এসব আধুনিক চিকিৎসার কথা তেমন একটা জানেই না। না জেনে তারা সাইকিয়াট্রিক এই সিমটম গুলোকে "ভুতে ধরা" বা "যাদু টোনা বান " বলে এর চিকিৎসা করাতে তারা যান "ভন্ড কবিরাজ", "ভন্ড বাবা" "ভন্ড ফকির", "ল্যাংটা ফকীর" কিংবা "ল্যাংটা মামু ফকির "দের বাগানে, ডেরায় বা আস্তানায়।

আর ভন্ড, ল্যাংটা ফকির বাবারা বা এসব রোগীদের চিকিৎসার নামে অনেক রকমের শারীরিক নির্যাতন করে। কখনো লোহার পেরেক গরম করে কানের লতিতে ঢুকিয়ে দেয়, কখনোবা ঝাড়ু লাঠি দিয়ে রোগীকে বেদম পিটিয়ে আধমরা করে ফেলে।

সবচেয়ে বেশি যে পদ্ধতি প্রয়োগে তারা ভুত বা প্রেত তাড়ানোর চেষ্টা করে তা হলো, মরিচ পুড়িয়ে সেটা নাকের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়া। ভন্ডদের এসব চিকিৎসা পদ্ধতির কথা প্রায় সবাই কম বেশ জানেন এমন কি মানেনও।

শুধু কি তাই? স্বামীকে বশ, প্রেমিক কে কাছে টানা অথবা সন্তান লাভ বা ছেলে সন্তান লাভের আশায় অনেকে নিরীহ নারীও এসবের ভন্ডদের বাগানে যান। আবার অনেক সময় ভন্ড ল্যাংটা বাবার মার্কেটিং এক্সিকিউটিব বা দালালরা ছলে বলে কৌশলে নানান গল্পের ফাঁদে ফেলে তাদের কে নিয়ে যায়। আর সন্তান দেবার কথা বলে কিংবা স্বামীকে বশে আনার মোক্ষম চিকিৎসার কথা বলে তারা যা করে সেটা আজ আর নাইবা বললাম।

যাহোক শুরুতে যা বলছিলাম, সাইকিয়াট্রি বা মানসিক রোগীদের ব্রেইনে ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন জাতীয় পদার্থের জন্যে মানসিক রোগীদের মধ্যে বেশ কিছু অদ্ভুত আচরণ দেখা দেয়। আসুন মানসিক রোগ নিয়ে জানি। তাদেরকে আধুনিক চিকিৎসার আওতায় আনি।

ডা. সাঈদ এনাম
সাইকিয়াট্রিস্ট
সহকারী অধ্যাপক
সিলেট মেডিকেল কলেজ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়