ডাক্তার প্রতিদিন

Published:
2020-05-26 17:48:48 BdST

ইদি রসরচনা দাম্পত্য ও নারীদের মনোজগত: ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণঃ


 

ডাঃ জোবায়ের আহমেদ

_______________________


নারীদের মনোজগত অদ্ভুত।
রহস্যময়।।

কিছু মেয়ে আছেন,তাদের কোন মেয়ে বন্ধু বা পরিচিতজন যদি শ্বশুর শাশুড়িকে অপমান বা হেয় করে পোস্ট লিখে ফেসবুকে, তারা সেই পোস্টে গিয়ে সেই মেয়েটির ভুল না ধরিয়ে উস্কানিমূলক কথা বলে মেয়েটিকে আরো উস্কে দিবে অভব্য হতে।।
মেয়েটির সাথে সুর মিলিয়ে তারাও সেই মেয়েটির শ্বশুর শাশুড়িকে অবজ্ঞা ও হেয় জ্ঞান করে কমেন্ট লিখবে।

কিন্ত যেসব মেয়েরা এই নেগেটিভ কাজগুলো করে, ঠিক একি কাজ তাদের মা বাবাকে নিয়ে তাদের ভাইয়ের স্ত্রী করলে, তারা সেই মেয়েকে ঝেটিয়ে জুতাপেটা করে বিদায় করতে মরিয়া হয়ে উঠবে।।
তারা অন্যের মা বাবাকে অপমানে অংশ নিলেও নিজের মা বাবার বেলায় তা মানবে না কখনোই।
আফসোস বোকা মেয়েটি সেটা বুঝে না।।

যেই মেয়েটির একবার ডিভোর্স হয়েছে, একটা লিভ টুগেদার মেইনটেন করেও ছেলেটিকে বিয়ে করেনি,পরে
অন্য ছেলেকে লুকিয়ে বিয়ে করেছে অন্য শহরে,সেই মেয়েটি কখনোই একটা মেয়ের সংসার রক্ষায় সৎ পরামর্শ দিবেনা। বরং উস্কানি দিবে যেন সেই বোকা মেয়েটির পরিনতি তার মত হয়।।

পরীক্ষায় সেই ছাত্র বারবার ফেইল করে,আপনি তার কাছে পরামর্শ চাইলে সে আপনাকে হতাশার কথাই শুনাবে।
এক্সামিনারদের দোষ বলবে,প্রশ্ন কঠিন হয়েছে বলবে,সিস্টেমের দোষ দিবে কিন্ত নিজের অযোগ্যতা, অমনযোগ, কঠোর অধ্যাবসায়, প্লানিং স্টাডির অভাব কিন্ত বলবেনা।।
এটা আমি নিজে অনেকবার দেখেছি।।

ঠিক যেই মেয়ে পরপর দুইটা তিনটা সংসার ভাঙলো, তার কাছে আপনি দাম্পত্য জীবনের বিষাদ নিয়ে পরামর্শ চাইলে সে আপনাকে তার পথে টেনে নিয়ে আসবে।।

যেই মেয়ের মা উনার শ্বশুর শাশুড়িকে পাত্তা দেয়নি,যত্ন নেয়নি,উনাদের সেবা করেনি, স্বামীকে মা বাবা থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করেছেন, সেই মা তার মেয়েকেও একি পথে হাঁটতে বাধ্য কর‍তে চাইবেন।
এমন মায়েরা কখনো মেয়েকে সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে সংসার কর‍তে উদ্বুদ্ধ করবেন না।
উল্টো মেয়েকে বুদ্ধি দিবেন, তোর জামাই সব মা বাবা ভাই বোনের পিছনে খরচ করে ফেলছে, তোদের একটা ভবিষ্যৎ আছে তো,ওর লাগাম টেনে ধরতে হবে মা।
না হলে একদিন পস্তাবে।
এমন মিষ্টি কথায় মেয়ের মা মেয়ের মাথায় বিষ ঢুকিয়ে দেন।
তারপর মেয়েটি ছেলেটির মাথা খাবে।
হ্যাঁ তুমি কি একজন ই সন্তান?
তোমার বাকি ভাই বোন কি করে?
তারাও তোমার মা বাবা কে দেখুক।
এসব বলে বিভাজন শুরু করবে।
তারপর ছেলেটিও একদিন বউ এর কথা শুনতে বাধ্য হয় বা বাধ্য করা হয়।।

অনেক পুরুষরা শুধু সন্তান এর জন্য অনেক মেয়ের অযাচিত আচরণ সয়ে যান।
অনেক মেয়েরাও সহ্য করেন তাও বাস্তবতা।
তবে নারী বাদীরা নারীদের হিংসাত্মক আচরণ গুলো নিয়ে কখনো কথা বলেন না।
কিভাবে একটা নারী একজন পুরুষকে তার মা বাবা থেকে আলাদা করতে জগন্য আচরণ করে যান নিয়মিত, তা নিয়ে কোন নারীবাদীর আত্মসমালোচনা চোখে পড়েনি।

যেই নারী সবাইকে আপন ভেবে সংসার করেছেন,মায়ার জগৎ গড়েছেন,শ্বশুর শাশুড়ী কে মা বাবা রুপে দেখেছেন,দেবর ননদকে ভাই বোন মেনেছেন, সবার সাথে সুখ দুঃখ ভাগ করে নিয়ে সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে চেয়েছেন,একা স্বার্থপর এর মত সুখী হতে চাননি, উদাসীন স্বামীকে বাবা মা ভাই বোন এর প্রতি দায়িত্বশীল হতে উৎসাহ যুগিয়েছেন,
সবার আদর ও আবদার এর জায়গা হয়ে উঠেছেন, সেই নারীর কাছে সংসার এর মানেটা এক রকম।
আপনি যদি দাম্পত্য বিষয়ে এমন নারীর কাছে নিজের বিষাদ নিয়ে আলোচনা করেন,তবে তিনি আপনাকে পথ দেখাবেন আলোর পথে।।
কিন্ত এই চিত্রের উল্টো শ্বশুর শাশুড়ী বিদ্বেষী কোন নারীকে গুরু মানলে তিনি পথ দেখাবেন তার মত অন্ধকারে।।

অনেক মেয়েদের পোস্ট পড়ি।
আমি ভাবি।কমেন্ট বিশ্লেষণ করি।।
বুঝতে চাই তারা কি বলতে চায়।।

একটা ঘটনা বলি।
একটা মেয়ে কান্নার অভিনয় করে তার বাচ্চাকে কাঁদিয়ে একটা ভিডিও করলো।
মায়ের কান্নার অভিনয় দেখে বাচ্চাটি কেঁদে দিলো।
এটি যখন ফেসবুকে পোস্ট হলো তখন সবাই হাসলো,মজা করলো।
কিন্ত এই ভিডিওটি বাচ্চাটির দাদাভাই যখন দেখলো,তখন উনি মজা হিসেবে নিতে পারেননি।
কারণ এই শিশুটি উনার রক্ত।
নাতী নাতনী হয়ে গেলে সন্তানের চেয়েও বেশি মায়া অনুভব করেন মানুষ নাতী নাতনীর প্রতি।।
উনি এমন করে বাচ্চাটিকে কাঁদানোর বিপক্ষে দুটি কথা বললেন।।
সেই কথাটি বাচ্চার মায়ের কাছে পৌঁছে দিলো আরেক এক নারী।
এখন সেই পাগল নারী উত্তেজিত হয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিলো।
সেখানে এসে ভীড় করলো কিছু নারী যারা বাচ্চাটির দাদাভাই কে ছোট করে, হেয় করে অনেক কথা লিখে সেই মেয়েটির সাথে তাল মিলালো, মেয়েটিকে উস্কে দিলো।।

আমি খেয়াল করলাম এমন কোন বিচক্ষণ নারী কমেন্ট করে কিনা যে, এভাবে বাচ্চাকে কাঁদিয়ে ভিডিও করা ফান হিসেবে আমরা নিলেও বাচ্চার দাদা দাদী তা স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ না ই করতে পারেন।
এটা বাচ্চার প্রতি উনাদের অপত্য স্নেহ এর
বহিঃপ্রকাশ।
এটাকে মার চেয়ে মাসীর দরদ বেশি বলেনা।
এমন সামান্য বিষয় ফেসবুকে লিখে তুমি যে অন্য অসভ্য মেয়েদের নিয়ে শ্বশুর শাশুড়ীকে অপমান ও হেয় করতেছো, তা যথাযথ আচরণ নয়।
তোমার স্বামীর চোখে এই অসভ্য কমেন্ট গুলো পড়লে
তিনিও কষ্ট পাবেন যার প্রভাব তোমার দাম্পত্যে পড়তে পারে।
উনারাও শুনলে বা দেখলে কষ্ট পাবেন।
মুরুব্বিদের সম্মান করতে জানতে হয়।
উনাদের সব কথায় আচরণে রিয়েক্ট কর‍তে নেই।
বেয়াদবি করে তাদের মনে কষ্ট না দিয়ে চুপ থেকে দোয়া নেওয়া শ্রেয়।
এখানে যারা তোমাকে উস্কানি দিচ্ছে,তারা তাদের মা বাবা কে নিয়ে তাদের ভাইয়ের স্ত্রী এমন করলে এতক্ষণে তুলকালাম কান্ড করে ফেলতেন।।
আমি হতাশ হলাম,একজন নারীও সেই মেয়েটিকে সঠিক কথা বললেন না।

এই আলোচনায় আমি নারীদের বলতে চাই,নিজের ব্যক্তিগত সমস্যা নিজের ঘরে রাখুন।
আপনার সাথে আপনার স্বামী বা স্ত্রীর বনিবনা না হলে,বা আপনার যদি মনে হয় এই সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে,তবে পারস্পরিক সম্মান রেখে পারিবারিক ভাবে মীমাংসা করুক,প্রয়োজনে ইতি টানুন।
কিন্ত কখনো তৃতীয় পক্ষকে আপনার পরিবার ও জীবনে আসতে দিবেন না।
এই তৃতীয় পক্ষ আপনাকে কখনো সঠিক পরামর্শ দিবেনা যদিনা তারা নিজেরা সঠিক মানুষ না হয়,তাদের দাম্পত্য সুখকর ও সুন্দর না হয়।

যেই মেয়ে নিজের সংসার টিকাতে পারলোনা,সে আপনার সংসার টিকাতে পজেটিভ ভূমিকা রাখবে এমন আশা করা বোকামি।

হ্যাঁ যেই নারী সংসারহীন হয়ে অনুশোচনা ও অনুতাপে দগ্ধ হয়েছেন, তিনি হয়তো চাইবেন আরেকজন নারীর সংসার যেন তার মত না ভাঙ্গে।
তবে এমন নারীর সংখ্যা কম।।

একটা কথায় মাথায় রাখবেন,যেই নারীরা আজ আপনার অন্যায় কাজে উস্কানি দিলো, আগামীকাল সকালে তাদের হাস্যরসে আপনিই মুখ্য হয়ে উঠবেন।
আপনি তাদের হাসির খোরাক হবেন আপনার অজান্তে।
.....................................

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়